এ প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আদম সন্তান যদি একটি উপত্যকা পরিমাণ খেজুর গাছের মালিক হয়, সে অনুরূপ আরেকটি উপত্যকার মালিক হতে চায়। অতঃপর আরেকটির, এভাবে সে অনেক উপত্যকার মালিক হতে চায়।
সব ভালো চাওয়াই প্রশংসনীয়। মন্দ বিষয় চাওয়া, অসম্ভব কিছু চাওয়া নিন্দনীয়। ভালো চাওয়া প্রমাণ করে মানুষের উচ্চাকাঙ্ক্ষার। ভালো চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা মানুষকে সম্মান ও মর্যাদার শীর্ষে পৌঁছায়।
বিপরীত দিকে কোনো কোনো চাওয়া মানুষকে অসম্মান ও অমর্যাদার গভীর গর্তে নিপতিত করে। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা.) একদিন তার সাথীদের সঙ্গে বসা ছিলেন। একপর্যায়ে তিনি বললেন, তোমাদের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করো। একজন বললেন, এই ঘরটি যদি স্বর্ণে ভরা থাকত, তাহলে তা আমি আল্লাহর রাস্তায় খরচ করতাম। তিনি আবার বললেন, আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ ঘটাও। একজন বললেন, এ ঘরটি যদি মুক্তায় ভরা থাকত তাহলে আমি তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করতাম ও সদকা করে দিতাম। তিনি আবার বললেন, তোমরা তোমাদের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করো। তারা বললেন, আপনি আসলে কী চান? তিনি বললেন, আমি চাই এ ঘরটি যদি আবু উবাইদাহ বিন আল-জাররাহ, মু‘আজ বিন জাবাল, সালিম ও হুজাইফার মতো লোকদের দিয়ে ভরা থাকত।
একবার এক কক্ষে মুসআব বিন জুবাইর, উরওয়া বিন জুবাইর, আবদুল্লাহ বিন জুবাইর এবং আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.) একসঙ্গে বসা ছিলেন। এমন সময় কেউ বলল, তোমরা তোমাদের মনের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করো। আবদুল্লাহ বিন জুবাইর (রা.) বললেন, আমি খলিফা হতে চাই। উরওয়া (রা.) বললেন, আমি চাই লোকজন আমার কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করবে। মুসআব (রা.) বললেন, আমি ইরাকের শাসক হতে চাই। আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.) বললেন, আমি আল্লাহর ক্ষমা লাভ করতে চাই।
খলিফা উমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.) বলেন, আমার মনে ছিলো- বিভিন্ন আকাঙ্ক্ষা। আকাঙ্ক্ষা ছিল ফাতেমা বিনতে আবদুল মালেককে বিয়ে করার, আমি তাকে বিয়ে করেছি। আকাঙ্ক্ষা ছিল গভর্নর হওয়ার, হয়েছি। আকাঙ্ক্ষা ছিল খলিফা হওয়ার, হয়েছি। আমার চূড়ান্ত আকাঙ্ক্ষা জান্নাতের। আশা করি জান্নাতও লাভ করব- ইনশাআল্লাহ।
ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, ভালোর আশায় রয়েছে সওয়াব। তবে নিছক আশা-আকাঙ্ক্ষার কোনো মূল্য নেই। আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে খাঁটি নিয়ত ও তার সঙ্গে উত্তম আমল প্রয়োজন। ভালো আশা-আকাঙ্ক্ষা এক ধরনের দোয়া। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন আশা-আকাঙ্ক্ষা করে, সে যেন তা করে বেশি করে। কেননা এর মাধ্যমে সে মূলত তার রবের কাছে প্রার্থনা করে। ’
ইসলাম নেতিবাচক কোনো কামনা ও আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করে না। তাই মন্দ ও অন্যায় কোনো বিষয় কামনা করা যাবে না। হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন বিপদগ্রস্ত হলে মৃত্যু কামনা না করে। যদি বলতেই হয়, তাহলে বলবে, ‘হে আল্লাহ! জীবন যদি আমার জন্য কল্যাণকর হয় তাহলে আমাকে জীবিত রাখো আর যদি মৃত্যু আমার জন্য কল্যাণকর হয়, তাহলে আমাকে মৃত্যু দাও। ’
মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা যদি আখেরাতমুক্ত হয়ে শুধু পার্থিব বিষয় নির্ভর হয়, তাহলে সে নিশ্চিতভাবে পথভ্রষ্ট হবে। সঠিক পথ থেকে তার পদস্খলন ঘটবে। কোরআনে কারিমে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘যে দ্রুত বিষয় তথা দুনিয়ার সুখ-সম্ভোগ পেতে চায়, আমি তাকে এখানে তার জন্য যতটুকু দিতে চাই সত্বর দিয়ে দেই। পরিশেষে তার জন্য জাহান্নামই নির্ধারণ করে রাখি, যেখানে সে প্রবেশ করবে নিন্দিত, অপমানিত ও বিতাড়িত অবস্থায়। অপর দিকে যারা আখেরাত চায় এবং তা পাওয়ার জন্য যে পরিমাণ চেষ্টা করা উচিত, তেমনভাবেই চেষ্টা করে, আর সে হয় মুমিন, তারাই হচ্ছে এমন লোক যাদের চেষ্টা-সাধনা আল্লাহর দরবারে স্বীকৃত হয়। ’
বস্তুত কর্মবিহীন আশা-আকাঙ্ক্ষা হলো- স্বপ্নের ঘোর। এ ধরনের আশা-আকাঙ্ক্ষার কোনো ফলাফল নেই। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান তো সে-ই যে নিজের নফসকে অনুগত করে রাখে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য আমল করে। আর ব্যর্থ তো সে, যে প্রবৃত্তির অনুসরণ করে আর আল্লাহর কাছ থেকে আশা করে। যে আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য অবৈধ পথ ও পন্থা অনুসরণ করে, সে মূলত নিজের ওপরই অবিচার করে।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২০১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৭
এমএইউ/