ঢাকা, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

ঈমানবিহীন আমল কিংবা আমলবিহীন ঈমান কোনোটাই কাম্য নয়

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৭
ঈমানবিহীন আমল কিংবা আমলবিহীন ঈমান কোনোটাই কাম্য নয় ঈমানবিহীন আমল কিংবা আমলবিহীন ঈমান কোনোটাই কাম্য নয়

সূরা লুকমান মক্কায় নাজিল হওয়া একটি সূরা। এ সূরায় ৩৪টি আয়াত রয়েছে। আলোচ্য সূরায় আল্লাহতায়ালা আসমান ও জমিন সৃষ্টির ক্ষেত্রে নিজের নিদর্শনাবলী বর্ণনা করার পাশাপাশি নিজ সন্তানের প্রতি হজরত লুকমানের কিছু প্রজ্ঞাপূর্ণ উপদেশের কথা তুলে ধরেছেন।

এ কারণে এই সূরার নামকরণ করা হয়েছে- সূরা লুকমান। সূরার ১ থেকে ৩ নম্বর পর্যন্ত আয়াতে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘আলিফ-লাম-মিম।

এগুলো প্রজ্ঞাময় কিতাবের আয়াত। হেদায়েত ও রহমত সৎকর্মপরায়ণদের জন্য। ’

সূরা লুকমানের প্রথম আয়াত হচ্ছে কয়েকটি অক্ষরের সমষ্টি। সাধারণত কয়েকটি অক্ষর নিয়েই একটি শব্দ হয় এবং শব্দের নির্দিষ্ট অর্থ থাকে। অর্থহীন অক্ষর সমষ্টিকে শব্দ বলা হয় না। কিন্তু আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমের ১১৪টি সূরার মধ্যে ২৯টি সূরা শুরু করেছেন এমন কয়েকটি অক্ষর দিয়ে, কোনো শব্দ দিয়ে নয়। ওই অক্ষরগুলো প্রত্যেকটি আলাদাভাবে উচ্চারিত হয়।

কোরআনের ব্যাখ্যাকারকরা এগুলোকে ‘হরুফে মুকাত্তায়া’ বলেন। অর্থাৎ এসব অক্ষর বিচ্ছিন্ন এবং আলাদা আলাদাভাবে উচ্চারিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব অক্ষরের পর বর্ণিত আয়াতে কোরআনের অলৌকিকত্ব ও মহত্ত্ব তুলে ধরা হয়েছে।  

মানুষের হেদায়েতের জন্য কোরআন নাজিল হলেও কেবলমাত্র আল্লাহর নেককার বান্দারা এর মাধ্যমে হেদায়েতপ্রাপ্ত হন। অপবিত্র আত্মার অধিকারী ও বদকাররা এই কিতাবের বাণী শুনতে রাজি নয় অথবা শুনলেও তাদের কলুষিত অন্তরে এই আয়াতের কোনো প্রভাব পড়ে না এবং তারা হেদায়েত পায় না। বর্ণিত এই তিন আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো-

১. প্রজ্ঞার ভিত্তিতে এবং সুস্পষ্ট দলিলের মাধ্যমে প্রাপ্ত হেদায়েত স্থায়ী হয়। এ কারণে কোরআন নিজেকে প্রজ্ঞাপূর্ণ কিতাব বলে পরিচয় দিয়েছে।  

২. দয়া ও আন্তরিকতাপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে মানুষের কাছে দাওয়াতের বাণী পৌঁছে দিলেই কেবল এ বাণী মানুষের অন্তরে দাগ কাটে ও মানুষ হেদায়েত প্রাপ্ত হয়।  

এর পরের দুই (৪ ও ৫) আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘যারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আখেরাত সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস রাখে। এ সব লোকই তাদের সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে আগত হেদায়েতের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং এরাই সফলকাম।  

আগের আয়াতে বর্ণিত ‘মুহসেনিন’ বা ‘সৎকর্মপরায়ণ’ শব্দের ব্যাখ্যা দিয়ে এই আয়াত শুরু হয়েছে। সৎকর্মের দু’টি বাস্তবায়নযোগ্য দিক এবং একটি বিশ্বাসগত দিক রয়েছে। বাস্তবায়নযোগ্য দিকগুলো হলো- নামাজ ও জাকাত এবং বিশ্বাসগত দিকটি হচ্ছে- আখেরাতের প্রতি ঈমান।  

ইসলাম মনে করে, আল্লাহর ইবাদত তার সৃষ্টির উপকার করা ছাড়া সম্ভব নয়। ইবাদত ও পরোপকার পরস্পরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বর্তমান পৃথিবীতে ঈমানদার পরিচয়দানকারী এমন বহু মানুষ রয়েছে যারা সারাক্ষণ নামাজ ও রোজাসহ অন্যান্য ইবাদতে মশগুল থাকলেও দরিদ্র ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা ভুলে বসে আছে। তারা ভাবে, প্রতিদিনের  নিয়মিত ইবাদতগুলোই পরকালে তাদের মুক্তির জন্য যথেষ্ট।  

অন্যদিকে এমন অনেক মানুষ আছে যারা শুধু পরোপকারেই ব্যস্ত। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস কিংবা তার ইবাদত-বন্দেগির দিকে তাদের কোনো খেয়াল নেই। কিন্তু এই দুই আয়াতে বলা হচ্ছে, তারাই আল্লাহর বিশেষ হেদায়েতের অধিকারী এবং দুনিয়া ও আখেরাতে সৌভাগ্যবান যারা জাকাত প্রদান ও পরোপকার করার পাশাপাশি নামাজসহ অন্যান্য ইবাদতে মশগুল এবং যারা তাদের প্রতিটি কাজে পরকালের বিচার দিবসের কথা বিবেচনায় রাখেন।  

সে হিসেবে বলা চলে, ইসলামের দৃষ্টিতে নামাজ ও জাকাত পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। ঈমানদার ব্যক্তির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই হলো- নামাজ কায়েম ও জাকাত প্রদান করা।  

আর প্রকৃত পূণ্যবান ব্যক্তি অপরের সমস্যা সমাধানের চিন্তায় বিভোর থাকার পাশাপাশি নিজের আত্মিক উন্নতিতেও সচেষ্ট থাকেন। একটি করতে গিয়ে আরেকটির কথা ভুলে যান না।  

বিষয়টি এক কথায় এভাবে বলা চলে, ঈমানবিহীন আমল কিংবা আমলবিহীন ঈমানের স্থান ইসলামে নেই।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২০৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।