দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সা. নামেও পরিচিত।
আজ থেকে ১৪ শ’ ৪৭ বছর পূর্বে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে সুবহে সাদেকের সময় মক্কা নগরীর সম্ভ্রান্ত কোরাইশ বংশে মা আমেনার গর্ভে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
অনেক দুঃখ, কষ্ট ও প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে চাচা আবু তালেবের আশ্রয়ে বড় হয়ে উঠে তিনি। চল্লিশ বছর বয়সে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে তিনি নবুওয়তের মহান দায়িত্ব লাভ করেন। নবুওয়তের দায়িত্ব পেয়ে তিনি তৎকালীন অসভ্য বর্বর ও পথহারা জাতিকে সত্যের সংবাদ দিতে তাদের কাছে তুলে ধরেন আল্লাহর একত্ববাদের বাণী। কিন্তু অসভ্য তারা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দাওয়াত গ্রহণ না করে তার ওপর নির্যাতন শুরু করে। তার দাওয়াতি কাজকে থামিয়ে দিতে নানামুখি চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করতে থাকে একের পর এক। কিন্তু নবী করিম (সা.) তাতে দমে যাননি। বরং আল্লাহর সাহায্যের ওপর ভরসা করে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জীবনবাজি রেখে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে থাকেন। ফলে ধীরে ধীরে সত্যান্বেষী মানুষ তার সঙ্গী হতে থাকে।
অন্যদিকে কাফেরদের ষড়যন্ত্রও প্রবল আকার ধারণ করে। এমনকি এক পর্যায়ে তারা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কে হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। তখন নবী করিম (সা.) আল্লাহর নির্দেশে জন্মভূমি ত্যাগ করে মদিনায় হিজরত করেন।
মদিনায় তিনি ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করেন এবং মদিনা সনদ নামে একটি লিখিত সংবিধান প্রণয়ন করেন।
মদিনা সনদ বিশ্বের প্রথম লিখিত সংবিধান। এ সংবিধানে ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলমানসহ সবার অধিকার স্বীকৃত হয় যথাযথভাবে।
মদিনায় হিজরতের পরে মক্কার কাফেরদের সঙ্গে নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে বেশ কয়েকটি যুদ্ধও করতে হয়। সম্মুখিন হতে হয় নানাবিধ প্রতিকূল পরিস্থিতির। এভাবে ২৩ বছরের নিরন্তর শ্রম সাধনায় অবশেষে রাসূলুল্লাহ (সা.) দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বিজয় অর্জন করেন। মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে তা পূর্ণতা লাভ করে। অতঃপর বিদায় হজের ভাষণে তিনি আল্লাহর বাণী শোনান বিশ্ববাসীকে। বলেন, ‘আজ থেকে তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন তথা জীবন ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ করে দেওয়া হলো। তোমাদের জন্য দ্বীন তথা জীবন ব্যবস্থা হিসেবে একমাত্র ইসলামকে মনোনীত করা হয়েছে। ’
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রেখে যাওয়া সেই শান্তি প্রতিষ্ঠার আদর্শ থেকে মুসলমানরা বিমুখ হওয়ায় বর্তমান বিশ্বে অশান্তির আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। ইসলাম বিরোধীদের হাতে আজ বিশ্বের সর্বত্র মুসলমানরা নানাভাবে নিগৃহীত হচ্ছে। অন্যায়, অবিচার, হত্যা আর বর্বরতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
নবী করিম (সা.) যে পথে, যে আদর্শের ভিত্তিতে তৎকালীন অসভ্য সমাজের শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, আমাদের সামনে এখনও সেই আদর্শ, সেসব উপকরণ বিদ্যমান। তাই বর্তমান অশান্ত এই পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মুহাম্মদ (সা.)-এর মহান আদর্শ প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই।
তবে হ্যাঁ, এটাও সত্য যে, বর্তমানে যারা রাসূলের রেখে যাওয়া আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজ করছেন, তাদের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। নানামুখি ষড়যন্ত্র এখনও চলছে। পাশাপাশি ধর্মের লেবাসধারীরাও ইসলামকে কলঙ্কিত করতে তৎপর। তার পরও শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রকৃত মুমিন-মুসলমানদের যেতে কাজ করে যেতে হবে। হতাশ হলে চলবে না।
কাফের, মুশরিক ও মুনাফিকদের কোনো ষড়যন্ত্র যেভাবে রাসূলের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারেনি, আজও পারবে না। কেননা আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘সত্য সমাগত, মিথ্যা বিতাড়িত। আর নিশ্চয়ই মিথ্যা বিলুপ্তির জন্য। ’ সুতরাং সত্যের সংগ্রামে সাফল্য অনিবার্য।
হাল সময়ের মানুষ হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জন্মের এ দিনটিকে বিভিন্নভাবে উদযাপন করে থাকেন। কেউ কেউ এ উপলক্ষে জমায়েত হয়ে নবীজীর জন্মের ঘটনা আলোচনা করে এবং বক্তৃতা ও কাসিদা পড়ে। কেউবা মিষ্টি-খাবার প্রভৃতি তৈরি করে বিতরণ করে। কেউ নিরবে রোজা রাখেন।
আবার কেউ কেউ এ সব ছাড়িয়ে এক ধরনের দূষণীয় সমাবেশ ঘটান। ওই সমাবেশে বিভিন্ন অহেতুক, বাহুল্য, অনৈতিক কাজ হয়। এসব কাজ বিদআত। যা থেকে সবারই বিরত থাকা উচিত।
আজ ১২ রবিউল আউয়াল (মিলাদুন্নবী সা.) উপলক্ষে বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র জীবনের ওপর আলোচনা, সেমিনার ও দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনসহ বিভিন্ন চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। জাতীয় দৈনিক ও অনলাইনগুলো বিশেষ প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। আজ সংবাদপত্রসমূহে ছুটি পালিত হবে। তাই আগামীকাল রোববার দৈনিক পত্রিকাসমূহ প্রকাশিত হবে না। তবে অনলাইনগুলো তাদের প্রকাশনা অব্যাহত রাখবে বিশেষ ব্যবস্থাপনায়।
দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বাণীতে তারা মুসলমানদের প্রতি শুভেচ্ছা জানান এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ নিজেদের জীবনে প্রতিফলন ঘটাতে আল্লাহর কাছে দোয়া কামনা করেন।
বিভিন্ন সংগঠন মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ মিলাদ, আলোচনা ও দোয়া মাহফিলসহ পক্ষকালব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন সংগঠনও দিবসটি যথাযথভাবে পালন করবে।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৭
এমএইউ/