হজ ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজাতে নতুন নতুন পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো হজ ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেছে।
প্রকাশিত ক্যালেন্ডারে অর্ধশত কার্যক্রমের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ উল্লেখ করা আছে। সে অনুযায়ী ২০১৮ সালের হজ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে ১ নভেম্বর থেকে। চলবে আগামী বছরের ১৪ আগস্ট পর্যন্ত।
প্রকাশিত হজ ক্যালেন্ডারে হজ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজের সম্ভাব্য শুরু ও শেষের তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ কে সেটাও বলে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে হজ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজ নিয়ে মন্ত্রণালয়গুলো আর ফাইল ঠেলাঠেলি করতে পারবে না। হজ ব্যবস্থাপনার কাজে গতি আসবে।
প্রকাশিত হজ ক্যালেন্ডাররে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বি-পাক্ষিক হজ চুক্তি ও হজযাত্রী সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে ২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারির মধ্যে।
প্রাক-নিবন্ধন তালিকা থেকে নির্বাচিতরা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পরিশোধ সাপেক্ষে চূড়ান্ত নিবন্ধন করতে পারবেন পুরো ফেব্রুয়ারি মাস।
এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ সিডউল প্রকাশ করবে ১৫ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে। ১ মে থেকে টিকিট বুকিং শুরু হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালের হজ কার্যক্রস উদ্বোধন করবেন জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। এর পর ১২ জুলাই থেকে শুরু হবে হজযাত্রী প্রেরণ। চলবে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত।
এদিকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. আনিছুর রহমান বলেছেন, ২০১৭ সালের হজে নানা অনিয়ম ও প্রতারণার সঙ্গে জড়িত হজ এজেন্সিগুলোকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
সোমবার (৪ ডিসেম্বর) তিনি সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ মন্তব্য করেন।
বিগত হজ মৌসুমে নানা অনিয়মের দায়ে ২২৮টি হজ এজেন্সিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব এজেন্সির মধ্যে ৪৫টি এজেন্সির বিরুদ্ধে সরাসরি সৌদি সরকার শোকজ করেছে। অপরাধ প্রমাণিত হলে সৌদি সরকারই তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে। আর অন্যদের অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় এজেন্সির লাইসেন্স ও জামানত বাতিল, বিভিন্ন অংকের জরিমানাসহ নানা শাস্তি দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, শুনানিতে কারও শাস্তি মওকুফ করা হবে না। আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে অভিযুক্ত সব হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। ২৫ জানুয়ারির মধ্যে বৈধ হজ এজেন্সির তালিকা প্রকাশ করা হবে।
ধর্ম সচিব আরও জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের হজে বাংলাদেশের হজযাত্রীদের কোটা বাড়বে না। এ যাবত ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮শ’ ৪৭জন বেসরকারি হজযাত্রীর নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। আর সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪ হাজার ৯শ’ ১০জন নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন। তাদের মধ্যে ২০১৮ সালে এক লাখ ৩০ হাজার জন হজ করতে পারবেন। বাকিরা ২০১৯ সালের জন্য অপেক্ষমান থাকবেন। ২০১৯ সালের হজের জন্য প্রায় ৬২ হাজার হজযাত্রীর নিবন্ধনও সম্পন্ন হয়েছে।
আগামী হজ মৌসুমে বাংলাদেশ থেকেই সৌদি আরবের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। এতে করে জেদ্দা আন্তর্জাতিক হজ টার্মিনালে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে আর ৪/৫ ঘন্টা ভোগান্তি পোহাতে হবে না। হজযাত্রীরা বিমান থেকে টার্মিনালে নেমেই মালামাল নিয়ে সোজা বাসে আরোহন করে মক্কায় চলে যেতে পারবেন। এ ব্যাপারে সৌদি কারিগরি দল বাংলাদেশে সফরে আসবেন।
হজ ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজাতে নানা উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতারণা রোধে সকল হজ ও ওমরা এজেন্সিগুলোকে এনআইডির মাধ্যমে একটি ডাটাবেইজ করা হবে।
বিগত হজ মৌসুমে হজপালনে যেয়ে কোনো যাত্রী সৌদি আরব রয়ে গেছে কিনা তা জানার জন্য ইমিগ্রেশনকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তবে ৫ জন বাংলাদেশি সৌদি কারাগারে রয়েছেন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ৫ জনকে রোহিঙ্গা হিসেবে শনাক্ত করে দেশটির কারাগারে রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনায় অনিয়মই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এটা নিয়ে সমালোচনাও রয়েছে বিস্তর। এমতাবস্থায় হজ ক্যালেন্ডার প্রকাশকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন হজ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্টরা। এখন শুধু অপেক্ষা পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৭
এমএইউ/