দোয়া প্রসঙ্গে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে বলে দিয়েছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো। ’ –সূরা মুমিন: ৬০
দোয়া হচ্ছে- ইবাদত-বন্দেগি ও দাসত্ব প্রকাশের চূড়ান্ত মাধ্যম।
মানুষকে আল্লাহতায়ালা সৃষ্টিই করেছেন তার ইবাদত ও দাসত্ব করার জন্যে। এ বিষয়ে কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা বলেন, আমি মানুষ ও জিন জাতিকে কেবল আমার ইবাদতের জন্যেই সৃষ্টি করেছি। -সূরা যারিয়াত: ৫৬
সঙ্গত কারণেই যে যত বেশি আল্লাহর দাসত্ব করতে পারবে, তার ক্ষেত্রে আল্লাহতায়ালার সৃষ্টির উদ্দেশ্য ততই পূর্ণতা পাবে। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বকালের সব মানুষের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতকারী। মহান সৃষ্টিকর্তার দাসত্ব তিনি সবচেয়ে বেশি পালন করেছেন। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ ছিলেন। তিনি সর্বশেষ নবী ও রাসূল এবং সব নবী-রাসূলের সর্দার। কিন্তু এত সব বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকা সত্ত্বেও আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে জায়গায় জায়গায় তাকে বান্দা ও দাস হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
যেমন, পুরো মানবজাতির মাঝে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যাকে আল্লাহতায়ালা মেরাজের সম্মানে ভূষিত করেছিলেন। এক রাতে পবিত্র মক্কা নগরী থেকে বায়তুল মোকাদ্দাসে নিয়ে যাওয়া, সেখান থেকে সপ্ত আকাশ পাড়ি দিয়ে সরাসরি আল্লাহর দিদার (সাক্ষাত) লাভ করা এবং সবশেষে আবার সেই রাতেই নিজের ঘরে ফিরে আসা- এমন কোনো ঘটনা মানব ইতিহাসে একমাত্র তার জীবনেই ঘটেছিলো। অথচ আল্লাহতায়ালা এমন মহান ঘটনাটির বিবরণ দিচ্ছেন এভাবে- মহান সেই সত্তা যিনি তার বান্দাকে রাতের বেলা মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসায় নিয়ে গেলেন…। -সূরা বনি ইসরাইল: ১
এ থেকেই অনুমান করা যায়, মহান প্রভুর গোলামি ও দাসত্বের পূর্ণতার মধ্যেই নিহিত একজন মানুষের পরিপূর্ণ সফলতা।
নামাজ রোজা হজ জাকাত ইত্যাদি আমলের মাধ্যমে মানুষ তার প্রভুর ইবাদত ও দাসত্ব করে থাকে। কিন্তু দাসত্বের পূর্ণ রূপ প্রকাশ পায় দোয়ার মধ্য দিয়ে। হয়তো নিজের কোনো প্রয়োজনে কিংবা পরকালীন মুক্তির আশায় সে যখন প্রভুর সামনে হাত তুলে দোয়া করতে থাকে, কান্নাকাটি করতে থাকে, তখন তার ভেতর-বাহির সবটাই আল্লাহর গোলামিতে ডুবে থাকে।
হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশিরভাগ সময়ই এ দোয়ার মধ্যে ডুবে থাকতেন। তাই বলা যায়, দোয়া মুমিনের দাসত্ব ও গোলামিতে পূর্ণতা বিধান করে।
হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, দোয়াই ইবাদত। অর্থাৎ নামাজ রোজা হজ জাকাতের মতো দোয়াও একটি ইবাদত। তাই আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চেয়ে দোয়া করার পর সে দোয়া কবুল হলে তো ভালো। কিন্তু যদি কবুল নাও হয়, তাহলেও এর সওয়াব পাওয়া যাবে।
যেহেতু দোয়া একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। এর সওয়াব ও প্রতিদানের সঙ্গে তা কবুল হওয়া বা না হওয়ার কোনোই সম্পর্ক নেই।
কেউ যদি কোনো মানুষের কাছে কিছু চায়, তাহলে সে বিরক্ত হয়, নাখোশ হয়। কিংবা প্রথম এক দুই বার খুশি মনে দিলেও পরে তার অবস্থা পাল্টে যায়। কিন্তু আল্লাহর কাছে কিছু না চাইলে বরং তিনি অসন্তুষ্ট হন। বান্দা তার কাছে প্রার্থনা করবে, চাইবে। আর তিনি বান্দার প্রার্থনা শুনবেন। সে প্রার্থনায় সাড়া দেবেন। এতেই তিনি সন্তুষ্ট। বরং তার কাছে যে বান্দা যত বেশি চায় তার ওপর তিনি তত বেশি খুশি হন।
হাদিস শরিফে আছে, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে প্রিয় কোনো কিছু নেই। -তিরমিজি শরিফ
অন্য হাদিসে আছে, যে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে না, আল্লাহ তার ওপর অসন্তুষ্ট হন। -প্রাগুক্ত
আরেক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা আল্লাহর কাছে তার অনুগ্রহ প্রার্থনা করো। কেননা তিনি তার কাছে কিছু চাওয়াকে পছন্দ করেন।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৭
এমএইউ/