ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

মক্কার কবুতর চত্বর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৭
মক্কার কবুতর চত্বর মক্কার কবুতর চত্বর। ছবি: বাংলানিউজ

মক্কা (সৌদি আরব): কোথা থেকে, কবে এতো পাখি এসেছে কেউ জানে না। কিন্তু সবাই চেনে মসজিদুল হারামের সন্নিকটবর্তী মক্কার 'কবুতর চত্বর'।

দিনে রাতে বিরামহীনভাবে শত শত ধুসর রঙের কবুতর খেলা করছে চত্বরে। দেখতে আমাদের দেশের জালালী কবুতরের মতো।

মানুষে কাঁধে, শরীরে বসছে। বাচ্চাদের সাথে মজা করছে। ছড়িয়ে দেওয়া দানা-শস্য পরম মমতায় খুটে খুটে খাচ্ছে।

মসজিদুল হারামের বাইরেই মিসফালাহ এলাকায় অবস্থিত এই  'কবুতর চত্বর'। ইবরাহিম খলিল সড়কের গোল চত্বর থেকে হিজরা রোডের শুরু পর্যন্ত কম-বেশি কোয়ার্টার কিলো মিটার এলাকা জুড়ে রাস্তার সর্বত্র কবুতরের রাজত্ব। কংক্রিট রাস্তা দখল করে দিব্যি ওড়াওড়ি করছে এই বিহঙ্গ দল। পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া-আসা করছে নামাজি মুসুল্লিরা। শান্তিপূর্ণ  সহাবস্থান নিয়ে নির্বিঘ্নে নিজের মনের আনন্দে অবস্থান করছে কবুতরের ঝাঁক।

ছড়িয়ে দেয়া শস্য দানা খুটে খাচ্ছে কবুতরের দল।  ছবি: বাংলানিউজচত্বরে একদল আফ্রিকান প্যাকেটে করে বিক্রি করছে গম, যব, ভুট্টার দানা। সামান্য মূল্যে কবুতরের এসব খাদ্য কিনে মানুষ ছড়িয়ে দিচ্ছে চত্বরে। উড়ে এসে খেয়ে যাচ্ছে কবুতরের পাল। একদল পায়রা এক মাথা থেকে  দানা খেয়ে উড়ে যাচ্ছে আরেক প্রান্তে। ডানায় রৌদ্রের রূপালি ঝিলিক তুলে আরেক দল এসে সেই খালি জায়গা পূরণ করছে। আকাশ ঢেকে পায়রায় উচ্ছ্বল উড্ডয়ন দিগন্তে বিদ্যুতের চমক জাগিয়ে হাজার হাজার পুর্ণ্যার্থীকে বিমোহিত করছে।

কর্মসূত্রে বহু বছর এই এলাকায় বসবাস করছেন, এমন কয়েকজন বাংলাদেশির সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কবে থেকে এখানে কবুতরের বসবাস, তা কেউ জানে না। কবুতরগুলো এই চত্বরের বাইরে অন্য কোনো এলাকাতেও যায় না। ঘুরে-ফিরে এখানেই থাকে। মানুষও এ কারণে জায়গাটির নাম দিয়েছে কবুতরের নামে।

স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান, এখানে অনেক ভাঙা-গড়া হয়েছে, নতুন অট্টালিকা ও রাজপথ তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু কবুতরগুলো এখানেই রয়ে গেছে। ভূমিরূপের নানা অদল-বদলে মানুষের স্থানান্তর হলেও কবুতরের দল জায়গা বদল করে নি।

আকাশে কবুতরের উচ্ছ্বল উড্ডয়ন।  ছবি: বাংলানিউজআরেকটি আশ্চর্য্যের বিষয় হলো, পায়রাগুলো খুব বেশি উচ্চতায় উঠে না। বায়তুল্লাহর দিকেও যায় না। বায়তুল্লাহর প্রবেশের পথে মাটি কামড়ে পড়ে থাকে। বায়তুল্লাহতে হজ, ওমরাহ ও নামাজ আদায়কারীদের সাথে খুবই আপন ভাবে মিশে থাকে। মনে হয়, পবিত্র মসজিদে প্রবেশের পথে এই বিহঙ্গরা মানুষকে সাদরে সম্ভাষণ জানাচ্ছে।

মক্কায় জন্মগ্রহণকারী রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মানব প্রেমের মতোই প্রাণী প্রেম ছিল সর্বোচ্চ পর্যায়ের। মানুষ তো বটেই, সামান্য কোনো পশু-পাখির কষ্টও সহ্য করতে পারেন নি দরদী নবী। প্রাণিকূলের প্রতি চরম মানবিক আচরণের উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পশু, পাখি, উদ্ভিদের প্রতি মানবিক ও কল্যাণময় আচরণের সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন।

মক্কায় পাখির মতোই সানন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে অনেক বেড়াল।   নবীর নির্দেশে প্রার্থনারত মানুষ উপকারী প্রাণীদের জন্যও শান্তি ও নিরাপত্তার এক পরম নিকেতন স্বরূপ মক্কাকে দেখতে পাচ্ছে।

ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৭
এমপি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।