‘আমার নাম লায়লা। আমার ভাষা আরবী ও ফরাসি।
চমৎকার, ফুটফুটে বাচ্চা মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তার নাম। উত্তরে বললো কথাগুলো।
আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, মরক্কো প্রভৃতি পশ্চিম আফ্রিকান দেশ ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল। আরবীর সাথে তারা ফরাসি ভাষা জানে। ইংরেজি জানে না।
কিন্তু ভাষা মানুষের অভিব্যক্তি প্রকাশে বাধা হয় নি মদিনার মুসলিম উম্মার সমাবেশে। বিশ্বায়ন মূর্ত হয়েছে এখানে। পৃথিবীর সব এলাকার নানা বর্ণ, আকৃতি, রঙ, ভাষার নারী-পুরুষ একাকার হয়েছেন এখানে। বিশেষ করে, শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বল সমাবেশে স্বর্গীয় আবেশের সৃষ্টি হয়েছে নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মসজিদ প্রাঙ্গণে।
মহানবী শিশুদের অত্যাধিক পছন্দ করতেন। ছোটদের প্রতি তার ছিল পরম মমতা ও স্নেহ। শিশু-কিশোররাও নবীকে গভীরভাবে ভালোবাসতো। তাকে অভিভাবক ও স্বজন জানতো। ইসলামের ইতিহাসের ও বিশুদ্ধ হাদিসের ভাষ্যে বহু এতিম, নিঃস্ব শিশুদের প্রতিপালনের অনেক উজ্জ্বল ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত নবীর পবিত্র জীবনে পরিলক্ষিত হয়েছে। এমন ঘটনাও আছে যে, পরিবার ছেড়ে রাসুলের দরবারে চলে এসেছে অনেকেই।
মদিনায় নবীর মসজিদে শিশুদের উপস্থিতি আজো সুস্পষ্ট। পরিবারের সাথে এসেছে হাজার হাজার শিশু ও কিশোর। নানা দেশের বাচ্চারা জামাতে নামাজ পড়ছে। অন্য সময় চত্বরে খেলা করছে। অদূরে বসে মা-বাবা তাদের খেয়াল করছেন।
আনন্দময় এমন পরিবেশে বিমোহিত হতে হয়। হয়ত বাচ্চাগুলো একে অপরের ভাষা জানে না। তাতে এক সাথে ওঠা-বসার, নামাজ, খেলার সমস্যা হচ্ছে না। হয়ত জীবনে আর কখনোই দেখা হবে না ভিন্ন ভিন্ন দেশের ছেলেমেয়েদের। তাদের জীবনে থেকে যাবে, পবিত্র মসজিদের স্মৃতি ও অনামা বন্ধুদের মুখচ্ছবি। ইসলামের বিশ্বভ্রাতৃত্বের চেতনা এভাবেই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তারা অনুভব করবে জীবনভর।
মসজিদের এক প্রান্তে দেখতে পেলাম প্রার্থনমগ্ন এক কিশোরকে। নামাজ শেষে মুনাজাত করছে। জানা গেলো, সে টাঙ্গাইলের আরেফিন ফয়সাল। পিতা তোফাজ্জল সাহেবের সাথে ওমরাহ করতে এসেছে বাংলাদেশের এই কিশোর। সঙ্গে আছে মা এবং দাদা। খুশিতে সে উদ্ভাসিত।
বাইরের খোলা প্রাঙ্গণে দেখতে পেলাম, নামাজ শেষে এক পিতা গভীর মমতায় তার দুই পুত্রকে খাওয়াচ্ছেন। তার চোখে-মুখে স্বর্গীয় আনন্দ। তিনি এসেছেন আফগানিস্তানের হিরাত অঞ্চল থেকে।
ওমরাহ মানে হলো এক ধর্মীয় পর্যটন উৎসব। সপরিবারে চলে এসেছেন বিশ্বের নানা দেশের মানুষ। আল্লাহ ও রাসুলের কাছে চলে এসেছেন প্রিয় মানুষদের নিয়ে। তাওহিদ ও রেসালাতের শিক্ষা গ্রহণ করছেন সরেজমিনে। অনুভব করছেন সরাসরি। আল্লাহর একাত্ববাদ ও নবীর আর্দশ থেকে সঞ্জীবিত হচ্ছে নিজে এবং পরিবারের সকলে।
কিশোর ও শিশুরা যে নামাজের পরই খেলায় মেতে উঠছে, তা নয়। বসে যাচ্ছে পবিত্র কোরআন শিক্ষার ক্লাসে। নবীর মসজিদের অনুপম বৈশিষ্ট্য হলো নামাজ শেষে কোরআন শিক্ষার ক্লাস। সুবিশাল মসজিদের কোণে কোণে শত শত পাঠদান কেন্দ্র। গোল হয়ে বসে কোরআন শিক্ষার আসর। শুধু শিশু-কিশোররাই নয়, নানা দেশের নানা বয়সের লোকজন সহি-শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত শিখে নিচ্ছেন তাদের ওমরাহের ধর্মীয় সফরের অবকাশে।
প্রযুক্তি সুন্দরভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে কোরআন শিক্ষায়। ল্যাপটপ ও মোবাইলকে শিক্ষায় প্রয়োগের উদাহরণ দেখা গেলো নবীর মসজিদে। শিক্ষার পথ ধরে আগামী প্রজন্মকে গড়ে তোলার নমুনা দেখে আশাবাদী হতে হয়। মানবতার মহান শিক্ষক মহানবীর মসজিদ এখনও শিক্ষার এক শ্রেষ্ঠ কেন্দ্র।
আমার সালাম পৌঁছে দিও নবীজীর রওজায়
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৭
এমপি/জেডএম