হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলে কারিম (সা.) আমাদেরকে সম্বোধন করে বলেছেন, ‘হে যুবক দল! তোমাদের মধ্যে যে লোক স্ত্রী গ্রহণে সামর্থ্যবান, তার অবশ্যই বিয়ে করা কর্তব্য। কেননা বিয়ে দৃষ্টিকে নীচ ও নিয়ন্ত্রিত করতে এবং লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা করতে অধিক সক্ষম।
ইসলামি সভ্যতা বিনির্মাণ এবং সামাজিক অশান্তি-অনাচার-বেহায়াপনা দূর করে শান্তি ও শৃঙ্খলা স্থাপন বিয়ের উদ্দেশ্য। পাশাপাশি স্বামী-স্ত্রীর মিল-মহব্বতের সঙ্গে একত্রে জীবন-যাপনের মধ্য দিয়ে ইহকাল ও পরকালের উন্নতি সাধন করাও বিয়ের উদ্দেশ্য। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা জুড়িহীন, তাদের বিয়ে করিয়ে দাও এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা উপযুক্ত তাদেরও। ’ -সূরা নূর: ৩২
দাম্পত্য জীবনের শুরু ও শেষ দিনগুলোর আবেদন ও চাহিদা একরকম হয় না। বয়স ও অভিজ্ঞতা মানুষের আবেদন ও চাহিদাকে ভিন্নরূপে উপস্থাপন করে। এজন্য দাম্পত্য জীবনের প্রথম কয়েক বছর যেমন অতি উপভোগ্য ও আনন্দময় হয় তেমনি এ সময়টা ক্ষেত্র বিশেষ স্পর্শকাতর হতে পারে। এ সময়ের আচার-আচরণ, প্রেম-ভালবাসা, ভাবের আদান-প্রদান, পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা-সহমর্মিতা-শ্রদ্ধাবোধ পরবর্তী জীবনের জন্য সুখের কিংবা দুঃখের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
এই বছরগুলোকে আরও আনন্দময় করতে ও আনন্দকে বাকী জীবনে ছড়িয়ে দিতে কিছু বিষয় মেনে চলা ও সদা খেয়াল রাখা একান্ত জরুরি। এসবের বেখেয়ালে তিক্ত হতে পারে দাম্পত্য সুখের সব আয়োজন। সম্পর্ক যদি স্বাভাবিক ও প্রীতিপূর্ণ হয় তবে সংসার জীবনে নেমে আসে চক্ষু শীতলকারী স্বর্গের সুখ-শান্তি।
পক্ষান্তরে দাম্পত্য সম্পর্ক যদি অসুন্দর, অস্বাভাবিক ও সন্দেহের আবর্তে ঘুরপাক খেতে থাকে তবে জাহান্নামের আগুন যেন সংসার জীবনকে জ্বালিয়ে ছারখার করে দেয়, সুখের নীড় দুঃখের কারাগারে পরিণত হয়।
তাই জীবনের অন্যতম সার্থকতা হলো- পারিবারিক জীবনকে ইসলামের সীমার মধ্যে রেখে সুখময় করে তোলা। বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভর করে জীবনসঙ্গী নির্বাচনের ওপর। সঠিক ও ‘কুফু’ (সমতা) মিলিয়ে জীবন সঙ্গী নির্বাচন পারিবারিক জীবনকে সার্থক ও সুন্দর করে।
একজন সৎ, চরিত্রবান, আমানতদার জীবন সঙ্গী বা সঙ্গীনি যেন জান্নাতের টুকরা। জীবনের প্রতিটি বাঁকে যিনি পাশে থেকে খুব কাছ থেকে তার সঙ্গীকে পরিচালিত করবেন, সহযোগিতা করবেন, সুখের ও দুঃখের সাথী হবেন তাকে নির্বাচনে ভুল করলে গোড়ায় গলদ হয়ে যাবে।
সময় হলে বিয়ে করার ব্যাপারে মহান রাসূলের (সা.) বাণী রয়েছে। সময় হওয়া বলতে সাবলম্বী হওয়া, মানে স্ত্রীকে ভরণ-পোষণ দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করা।
অনেক সময় আবেগ বা চোখের ভালো লাগার ভিত্তিতে অনেকেই হুটহাট সিদ্ধান্ত নিয়ে স্ত্রীকে ভরণ-পোষণ দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করার পূর্বেই বিয়ের মতো একটা জটিল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। যা তাকে বেশ কয়েক বছরের জন্য অনটনের মধ্যে ফেলে দেয়। তিনি মানসিকভাবে সমাজ ও পরিবারে ছোট হয়ে যান।
অন্যদিক থেকেও বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বিবাহিত জীবনে বিশেষত স্ত্রীকে সম্পূর্ণ নতুন একটি পরিবেশের মুখোমুখি হতে হয়। এই সময়টি মেয়েদের জন্য খুব জটিল ও স্পর্শকাতর। এ সময়ের ছোটখাটো কথাবার্তা, ঘটনা সারা জীবনের জন্য মনে স্থান করে নেয়। নববধূকে প্রশংসা ও আদর তার হৃদয়কে বসন্তের রঙে রাঙিয়ে দেয়।
আবার এ সময়ের মৃদু ধমক, তিরস্কার ও নিন্দা তার ফুলেল মনকে আহত করে, ভেঙে ফেলে। তেমনি বিয়ের সূত্র ধরে মেয়েটি যাকে তার জীবনসঙ্গী হিসেবে পেলো শুরুতে ওই ব্যক্তির আর্থিক সচ্ছলতা ও দুর্বলতা তাকে আনন্দিত ও ব্যথিত করে। অল্পদিনের ব্যবধানে সে মনোবল হারিয়ে চিন্তাক্লীষ্ট হয়ে পড়ে। আশপাশ থেকেও এ ব্যাপারে নানা কথা তার কানে আসে। তাই আর্থিকভাবে মোটামুটি একটা পর্যায়ে আসার পরই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া সমীচীন।
ইসলামে আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হওয়া এবং শারিরিকভাবে সুস্থ হওয়াকে বিয়ে করার ক্ষেত্রে শর্ত ধরা হয়েছে। বস্তুত ইসলাম মানুষের সার্বিক কল্যাণ, সামাজিক শান্তি ও নিরাপত্তা এবং পারিবারিক জীবনের প্রীতিপূর্ণ বন্ধনকে সুদৃঢ় করার জন্য সুস্পষ্টভাবে তার বিধান বর্ণনা করেছে। মানা না মানা মানুষের এখতিয়ারাধীন করে দিয়েছে। বর্তমান হানাহানি ও যুদ্ধ-বিক্ষুব্ধ দুনিয়াতে মানবতা-মনুষ্যত্বের অহর্নিশি পদদলন ঘটছে। এমতাবস্থায় হিংসা-বিদ্বেষ, জুলুম-নির্যাতন, হত্যা-ধর্ষণ-উচ্ছেদ-দখলসহ অনৈতিকতার মতো খারাপ অবস্থা থেকে নিজেকে এবং সমাজকে বাঁচাতে একটি শক্তিশালী আদর্শিক পরিবারের কোনো বিকল্প নাই। আর সেই পরিবারের ভিত্তি রচিত হবে সঠিক সময়ের সঠিক সিদ্ধান্তে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৭
এমএইউ/