সপ্তদশ শতাব্দীতে মুসলমানরা সর্বপ্রথম তাইওয়ানে বসতি স্থাপন করে। তাইওয়ানে ইসলামের আগমন ঘটে ১৯৪৯ সালের দিকে।
তাইওয়ানে মুসলমানের সংখ্যা লক্ষাধিক। স্থানীয় মুসলমানদের বেশিরভাগ সামরিক বাহিনীতে এবং সরকারি চাকরি করেন। আর দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া থেকে যারা এখানে এসেছেন তাদের বেশিরভাগই ব্যবসা বাণিজ্য ও শিল্পের সঙ্গে জড়িত।
বর্তমানে তাইওয়ানের অধিকাংশ মুসলমান নতুন ধর্মান্তরিত। তাইওয়ানের মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার হার বেশি। তবে আলেমের সংখ্যা খুব কম। প্রয়োজনীয় মাদরাসা না থাকায় পর্যাপ্ত আলেম তৈরি হচ্ছে না। তবে ইসলামি সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় প্রতি বছর শতাধিক শিক্ষার্থীকে বাইরে পাঠানো হয়।
তাবলিগের কাজের পাশাপাশি রাবেতা আলম আল ইসলামি, ওয়ার্ল্ড এসেম্বলি অব মুসলিম ইয়ুথ, চিনা মুসলিম এসোসিয়েশন মুসলমানদের জন্য বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছে। দেশটিতে ধর্ম-কর্ম পালনের ব্যাপারে সরকারে পক্ষ থেকে কোনো বাধা-নিষেধ নেই। বেশ কয়েক বছর ধরে তাইওয়ান থেকে হজেও লোক পাঠায় সরকার।
পুরো তাইওয়ানে মসজিদ আছে ১০টির মতো। তাইপে গ্র্যান্ড মসজিদটি তাইওয়ানের সবচেয়ে বড় মসজিদ। এটি তাইওয়ানের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থাপনাও। আরবি ও পারস্য স্থাপত্যশৈলীর সংমিশ্রণে তৈরি এই মসজিদে এক হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন।
মুসলিম পর্যটকদের কাছে দেশটি বেশ আকর্ষণীয়। যেসব দেশে মুসলিম পর্যটকদের সংখ্যা প্রতিবছর বেড়ে চলছে, এমন দেশগুলোর মধ্যে তাইওয়ান সপ্তম স্থানে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২০ সালের মধ্যে ১৬৮ মিলিয়ন মানুষ গোটা বিশ্বে ঘুরে বেড়াবেন। এর মধ্যে যারা মুসলমান তাদের বড় একটি অংশ তাইওয়ানমুখি হবেন। এ সংখ্যা ১৬ মিলিয়ন ছাড়াতে পারে।
সম্প্রতি তাইওয়ানের ন্যাশনাল মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ মুসলিম পর্যটনদের আকৃষ্ট করতে নতুন এক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। নতুন উদ্যোগের আওতায় সেদেশের ন্যাশনাল মিউজিয়ামে নামাজখানা উদ্বোধন করা হয়েছে।
এই নামাজখানায় নামাজ আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় জায়নামাজ, নামাজ শেষে তেলাওয়াত করার জন্য বেশ কয়েকটি কোরআনে কারিমের কপিও রাখা হয়েছে। এছাড়াও অমুসলিমদেরকে ইসলাম ধর্মের সঙ্গে পরিচিত করানোর জন্য নামাজখানার বাইরে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে লিখিত বেশ কিছু পুস্তিকা রাখা হয়েছে।
তাইওয়ানের ন্যাশনাল মিউজিয়ামের পরিচালক ‘লি চিংঙ্গ আচুং’ বলেন, এই নামাজখানা উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশের সংখ্যালঘুদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এমন কাজের মাধ্যমে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
তিনি আরও বলেন, এর মাধ্যমে মুসলিম পর্যটকরা এই মিউজিয়ামের প্রতি আকৃষ্ট হবেন।
তাইওয়ানের ন্যাশনাল মিউজিয়ামে (National Palace Museum) প্রাচীন চীনের প্রায় ৭ হাজার ঐতিহাসিক শিল্প রক্ষিত করেছে এবং অনন্য এই মিউজিয়ামটি বিশ্বের অন্যতম মিউজিয়ামের মধ্যে একটি।
উল্লেখ্য, পর্যটনশিল্পের বিকাশে তাইওয়ান বেশ কিছু বিষয়ের দিকে নজর দিয়েছে। বিশেষ করে পর্যটকদের জন্য হালাল খাবার, মসজিদ আর নিরাপত্তার যাবতীয় সুবিধা নিশ্চিত করে থাবে। কাজেই যারা ধর্মীয় নিয়ম মেনে জীবন কাটান, তাদের ভ্রমণের জন্য তাইওয়ান নতুন গন্তব্য।
-তাইওয়ান টুডে অবলম্বনে
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭
এমএইউ/