আমরা মনে করি, থার্টিফার্স্ট নাইটের অনুষ্ঠানের নামে ঢাকায় প্রতি বছর যে চিত্র দেখা যায়, তা সত্যিই লজ্জা ও বেদনাদায়ক। এসব অনুষ্ঠান নতুন বছরের সু-কামনা, বাসনা আর প্রত্যাশার মূলেই কুঠারাঘাত করা হয়।
যদিও এবার ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ঢাকা মহানগরীর কোনো উন্মুক্ত স্থানে নাচ, গান, কনসার্টসহ কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না- বলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
ইসলাম কেবল কিছু আচার-অনুষ্ঠানের সমষ্টি নয়, বরং তা মানুষের গোটা জীবনকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুযায়ী বিন্যস্ত ও সজ্জিত করতে উদ্যোগী হয়। তাই একজন মুসলিমের জীবনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে ইবাদত-বন্দেগি, যেমনটি কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা দিচ্ছেন, ‘আমি জ্বিন ও মানুষকে আমার ইবাদত করা ছাড়া অন্য কোনো কারণে সৃষ্টি করিনি। ’ -সূরা আয যারিয়াত: ৫৬
মুসলিম জীবনের প্রতিটি কাজের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে জড়িয়ে থাকবে তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ, তাদের ঈমান, আখেরাতের প্রতি অবিচল বিশ্বাস, আল্লাহর প্রতি ভয় ও ভালোবাসা।
হানাফি মাজহাবের ইমাম, ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর দাদা তার পিতাকে পারস্যের নওরোজের দিন (নববর্ষের দিন) হজরত আলী (রা.)-এর নিকট নিয়ে গিয়েছিলেন এবং কিছু হাদিয়া পেশ করেছিলেন। (হাদিয়াটি ছিল নওরোজ উপলক্ষে) হজরত আলী (রা.) বললেন, ‘নওরোজুনা কুল্লা ইয়াওম’ মুমিনের প্রতিটি দিনই তো নববর্ষ। অর্থাৎ মুমিন প্রতিদিনই তার আমলের হিসাব নিকাশ করবে এবং নবউদ্যমে আখেরাতের পাথেয় সংগ্রহ করবে।
ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.)-এর এ কথা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, নববর্ষ উপলক্ষে পরস্পর উপহার আদান-প্রদান এবং শুভেচ্ছা বিনিময়ের কোনো গুরুত্ব ইসলামে নেই। নতুন বছর, নতুন কল্যাণ বয়ে আনে, দুরীভূত হয় পুরনো কষ্ট ও ব্যর্থতার গ্লানি- এমন কোনো তত্ত্ব ইসলামে আদৌ সমর্থিত নয়।
বরং মুসলিমের জীবনে প্রতিটি মুহূর্তই মূল্যবান হীরকখণ্ড, হয় সে এই মুহূর্তকে আল্লাহর আনুগত্যে ব্যয় করে আখেরাতের পাথেয় সঞ্চয় করে জান্নাতের মালিক হবে, নতুবা আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়ে শাস্তির যোগ্য হয়ে উঠবে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বছরের প্রথম দিনের কোনো বিশেষ তাৎপর্য নেই।
নববর্ষ উদযাপন ইসলামের দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ নয়। এর সঙ্গে জীবনের কল্যাণ-অকল্যাণের গতিপ্রবাহের কোনো দূরতম সম্পর্ক নেই। সুতরাং কেউ যদি এ ধারণা পোষণ করে যে, নববর্ষের প্রারম্ভের সঙ্গে কল্যাণের কোনো সম্পর্ক রয়েছে বা যদি সে মনে করে যে, আল্লাহ এ উপলক্ষ দ্বারা মানবজীবনে কল্যাণ বর্ষণ করেন তবে তার শিরক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বস্তুত বহমান সময় প্রতি মুহূর্তেই তার নতুন গন্তব্যের পানে ছুটে চলে। কোনো গন্তব্যেই তার বিশ্রাম নেওয়ার, অপেক্ষা করার সময় নেই। সভ্যতার নিয়ম মেনে চলতেও সে অভ্যস্ত নয়।
নিয়মের এই খেলায় নতুন আরেকটি বছর গোটা দুনিয়ার মানুষ সোৎসাহে বরণ করে নিচ্ছে। রোববার ২০১৭ সালের শেষদিন। সোমবার পহেলা জানুয়ারি, খ্রিস্ট বছরের প্রথম দিন।
রোববার দিবাগত রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের নিয়মে ঘটনা বৈচিত্র্যে ভরপুর ২০১৭ সাল বিদায় নিয়েছে।
সোমবার ভোরে কুয়াশার চাদর ভেদ করে পূর্বাকাশে লাল সূর্যটি উঁকি দেবে সুন্দর আগামী বিনির্মাণের অভিপ্রায়ে। প্রত্যাশা করি, বিদায়ী বছরের হতাশা, কষ্ট, গ্লানি, প্রতিহিংসা ও বিদ্বেষ ভুলে সমৃদ্ধির পথে শুরু হোক নতুন বছরের নতুন অভিযাত্রা।
সেই প্রত্যাশা ও সম্ভাবনার জায়গা থেকে আমাদের উচিৎ পুরনো বছরসহ অতীতের পাপরাশির জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। সেই সঙ্গে নতুন বছরসহ ভবিষ্যতে পাপ না করার ও দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ব হয়ে দেশের জন্য কাজ করার অঙ্গীকার করা। বেশি বেশি আল্লাহর আনুগত্যের তওফিক কামনা করা।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৭
এমএইউ/