বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ হলেও পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশ চার ঋতুর। ঋতুরভেদে শীতের তীব্রতায় যখন এশিয়া, আমেরিকা বা ইউরোপের মানুষের জীবন বিপর্যস্ত; তখন পৃথিবীর আরেক প্রান্তের দেশ অস্ট্রেলিয়ায় চলছে তীব্র গরম।
ঊষার আলোয় ভরা প্রভাতের পরিবেশ বিকেলের গোধূলিতে বদলে যায়, এটাই পৃথিবীর রীতি। কিছুদিন আগেও যে শিশুটির কোনো অস্তিত্ব ছিলো না, সে আজ জীবন্ত এবং পূর্ণ অস্তিত্বময় মানুষ আপনার-আমার জীবনে। এটাই জীবনচক্র।
আবার আজ যে মানুষটি ঘিরে আছে আপনার বাস্তবতায়, সে হয়তো আগামীকাল অস্তিত্বহীন এই ধরায়। আপনি আমি সবাইকে চলে যেতে হবে, সঙ্গী হবে শুধু কর্মটুকু।
এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তুমি রাতকে দিনে এবং দিনকে রাতে পরিবর্তন করো আর তুমিই মৃত হতে জীবন্তের আবির্ভাব ঘটাও। তুমি যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবনোপকরণ দান করো। ’ -সূরা আল ইমরান: ২৭
ঘূর্ণায়মান পৃথিবীর ঋতুচক্রের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার আমরা যে নিয়ম সম্পর্কে জানি, তা আল্লাহতায়ালারই বানানো নিয়ম। আর শৈত্যপ্রবাহ, গ্রীষ্মের তাপদাহ, বসন্তের পুষ্পকানন কিংবা ঝড়ের তাণ্ডবসহ প্রকৃতির যে অবস্থার কথাই বলি না কেন- সবটাই আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে আসে। হতে পারে তা মানুষের জন্য কল্যাণকর, নেকি অর্জনের পাথেয়, পরীক্ষা কিংবা ইহকাল ও পরকালের সঙ্কট। তীব্র শীত বা তীব্র গরম হতে পারে মুমিনের জন্য পরীক্ষা।
এভাবে কালের আবর্তনকে একজন মুমিন গ্রহণ করে উত্তম আমল করার সুযোগ হিসেবে। উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি, শীতকালের দীর্ঘরাতে একজন মুমিন যেমন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমিয়ে আবার তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়, কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির-আহকার করা সময় পায়, তেমনি শীতল আবহাওয়ার ছোট দিনে নফল রোজা পালনও তার জন্যে হয়ে উঠে সহজ।
এ মর্মে হজরত উমর (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘শীতকাল ইবাদতকারীদের জন্য গণিমতস্বরূপ। ’
তিরমিজি শরীফে বর্ণিত অন্য আরেক হাদিস এসেছে, আমির ইবন মাসউদ (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শীতকালের গনিমত হলো- শীত কালের রোজা।
এ ছাড়া শীতকালে আরও কিছু ইবাদত করে নেকি অর্জনের সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে নারীদের। নারীরা তাদের সংসারে অনেক কাজই করে থাকেন। সন্তান-সন্তুতি থেকে শুরু করে স্বামী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের অনেক কাজে নারীরা সহযোগিতা করে থাকেন। এসব কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং নেকির উদ্দেশে করা দরকার।
শীতকালে পরিবারের সদস্যদের গরমপানির ব্যবস্থা করা, অজু-গোসলে সাহায্য করা, রোজাদারের সাহরি-ইফতারি পরিবেশনসহ অনেক দায়িত্বমূলক কাজে নারীরা প্রচুর সওয়াব অর্জন করতে পারেন- নেক নিয়ত, আন্তরিক প্রচেষ্টা ও অকৃত্তিম ভালোবাসায়।
মুমিনের মন এমনিতেই দয়া-মায়ায় ভরপুর থাকে। এ মায়ার কারণে তারা পরিবারের অন্য সদস্যদের প্রতি যেমন যত্নশীল হয়- তেমনি আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও মুমিন-মুসলিম থেকে শুরু করে সবার প্রতি সেবার হাত বাড়িয়ে দেয়। বৃদ্ধ, শিশু এবং অসুস্থদের প্রতি বিশেষ যত্নসহ গরীব শীতার্তদের মাঝে গরম কাপড়সহ প্রয়োজনীয় অভাব মেটানোর মাধ্যমে নেকি হাসিল করে।
তেমনি অতিবৃষ্টি বা খরায় যখন জনজীবনে নেমে আসে দুর্ভোগ-দুর্দশা। বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ে মানুষ হয়ে যায়- গৃহহীন। দেখা দেয় বিশুদ্ধ পানীর অভাব। ফসল-ফলাদি নষ্ট হয়, দেখা দেয় খাদ্যাভাব ও নানারকম অসুখ-বিসুখ।
সে সময় দূর্গতদের প্রতি সামর্থ্যবানরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে পেতে পারেন মানুষের দোয়া, অর্জন করতে পারেন আল্লাহর সন্তুষ্টি। এ প্রসঙ্গে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে, রয়েছে কোরআনের বাণীও।
তিরমিজি শরীফে বর্ণিত এক হাদিসে বলা হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দয়াশীলদের ওপর করুণাময় আল্লাহ দয়া করেন। তোমরা দুনিয়াবাসীকে দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের ওপর দয়া করবেন।
এভাবেই ঋতুভিত্তিক অনেক আমল করার সুযোগ রয়েছে। তার পরও অনেক মুমিন অলসতা করে গোনাহ করে বসেন। বিশেষ করে শীতের সময় যে ব্যাপারটি বেশি ঘটে তাহলো- পবিত্রতা অর্জনে ত্রুটি। অসুস্থতার অজুহাতে সঠিকভাবে অজু, গোসল না করা, মসজিদে উপস্থিত হয়ে জামাতে নামাজ আদায় না করা ইত্যাদি। তেমনি গরমের সময় নানা রকম অজুহাত বের করা। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আল্লাহতায়ালা সবাইকে সঠিকভাবে দ্বীন বুঝে, হেদায়েতের পথে থেকে জীবনযাপন করার তওফিক দান করুন। আমিন।
সালমা সাহলি: কবি ও গবেষক, লস এ্যাঞ্জেলেস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৮
এমএইউ/