মানুষের উৎস ও বিস্তার সম্পর্কে বর্ণনা দিয়ে আল্লাহতায়ালা এ বিষয়টি নির্দেশ করেছেন। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন, যিনি সৃষ্টি করেছেন সে ব্যক্তি থেকে তার জোড়া, আর তাদের দু’জন থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন অসংখ্য পুরুষ ও নারী।
আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে পারো। ’ –সূরা আল হুজুরাত: ১৩
এ প্রসঙ্গে হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে মানবজাতি! সাবধান! নিশ্চয়ই তোমাদের রব একজন, তোমাদের পিতাও একজন। সতর্ক হও! কোনো আরবের ওপর অনারবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই, কোনো অনারবের ওপর আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। কোনো কালোর ওপর সাদার কিংবা সাদার ওপর কালোর তাকওয়া ব্যতীত কোনো মর্যাদা নেই। ’ -ইমাম আহমাদ, আল মুসনাদ, হাদিস নং- ২৩৪৮৯
সাধারণভাবে সব মানুষকে এভাবে সমান ঘোষণার পর কোরআন ও হাদিসে মানুষের ওপর মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব ও কর্তৃত্বের জন্য বিশেষ যোগ্যতা অর্জনের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সে ব্যক্তিই সবচেয়ে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন, যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাকওয়াবান। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু জানেন, সবকিছুর খবর রাখেন। ’ –সূরা আল হুজুরাত: ১৩
মানুষের যোগ্যতা অর্জন ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য পূর্ব শর্ত হলো- নৈতিক উন্নয়ন। নৈতিক উন্নয়ন ছাড়া এগুলো অর্জিত হলেও তা স্থায়ী হয় না।
নৈতিক উন্নয়ন ছাড়া যে কোনো উন্নয়নই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে বাধ্য। তাই হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি প্রেরিত হয়েছি সুমহান নৈতিক গুণাবলির পূর্ণতা সাধনের জন্য। ’ -ইমাম আহমাদ, আল মুসনাদ, হাদিস নং- ৮৯৫২
অন্য হাদিসে আরও ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কোন কাজ অধিকাংশ লোককে জান্নাতে প্রবেশ করাবে? তিনি উত্তরে বলেছেন, কিয়ামতের দিন যে জিনিসটি মুমিনের পাল্লায় সবচেয়ে ভারী হবে তা হলো- ‘তাকওয়া ও উত্তম চরিত্র। ’ –তিরমিজি, হাদিস নং- ২০০৪
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, কিয়ামতের দিন যে জিনিসটি মুমিনের পাল্লায় সবচেয়ে ভারী হবে তা হলো- উত্তম চরিত্র। -আবু দাউদ, হাদিস নং- ৪৮০১
নাওয়াস ইবনে সামআন আল-আনসারি বলেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বির সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তরে বলেছেন, ‘সুন্দর ব্যবহারই পুণ্য। ’ –সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ২৫৫৩
আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত এক হাদিসে বলা হয়েছে, নবী করিম (সা.) সত্যিকার ও পূর্ণ মুমিন হিসেবে সে ব্যক্তিকেই অভিহিত করেছেন- যার চরিত্র সুন্দর। তিনি বলেছেন, চরিত্রের বিচারে যে উত্তম মুমিনদের মধ্যে সেই পূর্ণ ঈমানের অধিকারী। -আবু দাউদ, হাদিস নং- ৪৬৮৪
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। এমন সময় জনৈক আনসারী ব্যক্তি এসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কে সালাম করলেন, তারপর জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মুমিনদের মধ্যে সর্বোত্তম কে? তিনি জবাব দিলেন, তাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি হলো সেই ব্যক্তি- যার চরিত্র সর্বোত্তম। ’ –ইবনে মাযাহ, হাদিস নং- ৪২৫৯
কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা মুমিনের অসংখ্য নৈতিক গুণের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন তিনি বলেছেন, নিশ্চয়ই মুমিনগণ সফল, যারা তাদের নামাজে ভীত ও বিনয়ী, যারা নিজেদেরকে অর্থহীন কাজ থেকে বিরত রাখে, যারা জাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে কর্মতৎপর হয় এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গ হেফাজত করে। ’ -সূরা আল মুমিনুন: ১-৫
বস্তুত ইসলাম যে বিষয়গুলোকে চরিত্রের সুন্দর দিক এবং অবশ্য অর্জনীয় গুণ হিসেবে ঘোষণা করে সেগুলোকে আত্মার গুণ হিসেবে আত্মস্থ করা, নৈতিক বৈশিষ্ট্যে পরিণত করা এবং জীবনাদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা গেলে স্বভাবতই মানুষ সম্পদে পরিণত হবে। যে সম্পদ দুনিয়ায় ব্যক্তির নিজের এবং অপরাপর সকলের কল্যাণ ও মুক্তি নিশ্চিত করবে।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৮
এমএইউ/