ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

বিরোধে বিভক্তদের নিয়ন্ত্রণ থাকে শয়তানের হাতে

মাওলানা আবদুল জাব্বার, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০১৮
বিরোধে বিভক্তদের নিয়ন্ত্রণ থাকে শয়তানের হাতে তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো এবং বিভক্ত হয়ে পড়ো না

আল্লাহতায়ালা হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করে নিজের ইবাদতের জন্য পৃথিবীতে পাঠান। যুগের পর যুগ তারা আল্লাহর তাওহিদ ও তার ভালোবাসার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ থাকেন।

তারপর শয়তান তাদের প্ররোচিত করে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা হাদিসে কুদসিতে বলেন, ‘আমি আমার সব বান্দাকে একনিষ্ঠ ধার্মিক হিসেবে সৃষ্টি করেছি।

তারপর শয়তানরা এসে তাদের দ্বীন থেকে সরিয়ে দেয়। ’ –সহিহ মুসলিম

আল্লাহতায়ালা বনি ইসরাইলকে নির্বাচন করেন। তাদের মাঝে অসংখ্য নবী-রাসূল পাঠানোর পর তারা তাদের সঙ্গে বিরোধে জড়ায়। নবীরা মারা গেলে আসমানি কিতাব ছুড়ে মারে। তারা বিভিন্ন দলে ও উপদলে বিভক্ত হয়ে যায়।  

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ইহুদিরা ৭১টি দলে বিভক্ত হয়েছিল। খ্রিস্টানরা হয়েছিল ৭২টি দলে। আর আমার উম্মত বিভক্ত হবে ৭৩টি দলে। ’ -ইবনে হিব্বান

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ উম্মতের মাঝে বিভক্তি থেকে সতর্ক করে বলেন, ‘তোমরা বিভক্তি থেকে বেঁচে থাকো। ’ –সুনানে তিরমিজি

আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের বিরোধ করতে নিষেধ করে বলেন, ‘তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো এবং বিভক্ত হয়ে পড়ো না। ’ -সূরা আলে ইমরান: ১০৩

আল্লাহতায়ালার পথ এক, যা কিছু কোরআন ও সুন্নাহর বিরোধী, সেগুলোই শয়তানের পথ। সেগুলো মানুষকে বিভক্ত করে। তাদের আল্লাহ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। আল্লাহ নবীদেরসহ সব জাতিকে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা ও বিরোধ থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা দ্বীন প্রতিষ্ঠা করো আর তাতে বিরোধ করে বিভক্ত হয়ে পড়ো না। ’ -সূরা শূরা: ১৩

পার্থিব লোভ-লালসার প্রতিযোগিতা শত্রুতা ও বিদ্বেষের কারণ। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি তোমাদের দারিদ্র্যের ভয় করি না, বরং ভয় করি তোমাদের কাছে দুনিয়া প্রসারিত হয়ে যাওয়ার। যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য করা হয়েছিল। তারা দুনিয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করেছিল, যেমন তোমরাও করবে। তা তোমাদের ধ্বংস করবে, যেমন তাদের ধ্বংস করেছিল। ’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম

লোকেরা বিরোধে জড়িয়ে বিভক্ত হয়ে গেলে শয়তান তাদের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা জামাতকে আঁকড়ে ধর। বিভক্তি থেকে সাবধান থাক। কেননা শয়তান থাকে একজনের সঙ্গে। সে দুইজন থেকে দূরে অবস্থান করে। ’ –সুনানে তিরমিজি

দ্বীনের ক্ষেত্রে বিরোধ ও বিভ্রান্তিকর চিন্তাধারা এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করলে তা আল্লাহর পথ ও তার দ্বীন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। এর দ্বারা নবীদের পথ ও পন্থা থেকে বিচ্যুত হতে হয়। সব নবীই দ্বীন প্রতিষ্ঠা, সত্যের ওপর ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং তাতে বিচ্ছিন্নতা অবলম্বন না করার নির্দেশ পেয়েছেন। বিরোধে দ্বীন বিনষ্ট হয়, অন্তরের বিরোধ আর ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ছিন্ন হয়।  

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা বিরোধ করো না, তাহলে তোমাদের অন্তরগুলো ভিন্ন ভিন্ন হয়ে যাবে। ’ –সহিহ মুসলিম

কোনো জাতি বিরোধে লিপ্ত হলে তারা দুর্বল হয়ে যায়। তারা অপদস্থ হয়। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা পরস্পর বিরোধে জড়িও না, তাহলে তোমরা হেরে যাবে আর তোমাদের শক্তি খর্ব হবে। ’ -সূরা আনফাল: ৪৬

বিরোধের সবচেয়ে দ্রুত শাস্তি হলো- শত্রুদের আধিপত্য বিস্তার। বিরোধ, বিবাদ ও বিভক্তির ফলে সত্য ধ্বংস হয়, দ্বীনের মৌলিক দিকসমূহে ধস নামে। ভ্রষ্টতা ও জ্ঞানহীন কথাবার্তা ছড়িয়ে পড়ে। দ্বীনের শিক্ষা ও প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। সৎকাজের আদেশ, অসৎকাজের বাধা দ্বীনের এরকম প্রধান প্রবণতাগুলো নিষ্ক্রিয় হয়। বিরোধের কারণে অনেক নেয়ামত ওঠিয়ে নেওয়া হয়।  

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি তোমাদের লাইলাতুল কদর কোন রাতে তা জানাতে বের হয়েছিলাম। তবে অমুক আর অমুক বিবাদে জড়ানোর ফলে তা রহিত হয়ে গেছে। ’ –সহিহ বোখারি

বিরোধ ও বিভক্তি ভয়াবহ অপরাধের বার্তা বহন করে। হত্যাকাণ্ড ও রক্তপাতের দিকে নিয়ে যায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ ইচ্ছে করলে তাদের কাছে স্পষ্ট সত্য আসার পর তারা লড়াই করত না; কিন্তু তারা তো বিরোধ করেছে। ’ -সূরা বাকারা: ২৫৩

বিরোধ মহামারী আকারে ধ্বংস ডেকে আনে। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা বিরোধে লিপ্ত হয়ো না। কেননা তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা বিরোধ করে ধ্বংস হয়েছে। ’ –সহিহ বোখারি

বিভক্তি লাঞ্ছনা ও অপমানের নাম। বিবাদ অনিষ্ট ও সংকটের নাম। বিরোধ হলো দুর্বলতা ও দুশ্চিন্তার নাম। বিচ্ছিন্নতার ফলে দ্বীন ও দুনিয়া দুইটিতেই বিপর্যয় নামে। শত্রুপক্ষ উল্লসিত হয়। উম্মাহর শক্তি হ্রাস পায়। আল্লাহর দিকে দাওয়াতের পথকে বিলম্বিত করে। জ্ঞানের প্রচার বাধাপ্রাপ্ত হয়। অন্তরে বিদ্বেষ জায়গা করে নেয়। সময় নষ্ট হয়। মানুষ সৎকর্ম থেকে দূরে সরে যায়। জ্ঞানী লোক সেই, যে বিবাদ থেকে বিমুখ থাকে।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২০৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৮
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।