তার মূল সত্বার স্বচ্ছতা দ্বারা, যা বাহ্যিক অবয়বের শোভাকে ফলপ্রসূ করে। বাহ্যিক অবয়ব যদি মানুষের দৃষ্টির কেন্দ্র ও তাদের বোধের চূড়ান্ত সীমা হয়ে থাকে তবে অভ্যন্তরীণ দিকটা হলো আল্লাহর দৃষ্টির ক্ষেত্র।
হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের দেহ ও বাহ্যিক অবয়বের দিকে তাকান না, বরং তোমাদের হৃদয়ের দিকে তাকান। ’
ভেতরটা যখনই আল্লাহর সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক স্থাপন করবে তখনই সে তার ভালোবাসা ও গ্রহণযোগ্যতা পাবে। আল্লাহর ভালোবাসায় বান্দার ভেতরটা পূর্ণ থাকলে আসমান ও জমিনের অধিবাসীদের হৃদয়েও সে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে।
হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ কোনো বান্দাকে ভালোবাসলে জিবরাঈলকে ডেকে বলেন, আমি অমুককে ভালোবাসি, তাই তুমিও তাকে ভালোবাস। তখন জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তাকে ভালোবাসেন। তিনি আসমানের অধিবাসীদের ডেকে বলেন, আল্লাহ অমুককে ভালোবাসেন, তোমরাও তাকে ভালোবাস। আসমানবাসীও তাকে ভালোবাসে। তারপর পৃথিবীতেও তার জন্য গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করে দেওয়া হয়। ’
কেয়ামতের দিন বান্দার বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয়টিরই কড়াকড়ি হিসাব হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই তা অনুসরণ করো না। নিশ্চয় কর্ণ, চক্ষু ও অন্তর সবগুলোই এ বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। ’ -সূরা ইসরা: ৩৬
এ গভীর বোধের ফলে মুসলিম ব্যক্তি তার অভ্যন্তরীণ বিষয় পরিশুদ্ধ করতে সক্রিয় হবে, যার মূল ভিত্তি হলো- মাবুদের জন্য খাঁটি নিয়ত করা। নিয়তই ইবাদত-বন্দেগির মূল নির্যাস। বাহ্যিকভাবে আল্লাহর ইবাদতের ভিত্তি হলো- সঠিকভাবে অনুসরণ ও অনুকরণ করা। প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবেসে থাক তবে আমার অনুসরণ করো। তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন। ’ -সূরা আলে ইমরান: ৩১
ইবাদত মুসলমানকে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় দিকেই দীক্ষিত করে। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকনির্দেশনা নিয়ে চিন্তাশীল ব্যক্তি বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয়টির প্রতি গুরুত্ব দেখতে পাবে। যেমন, মুসলমান কাতার সোজা করে তাদের রবের সামনে দাঁড়াবে। কাতার কায়েম করা নামাজ কায়েম করার অংশ। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের কাতার সোজা করার আদেশ করতেন। তিনি বলতেন, ‘হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা অবশ্যই কাতার সোজা করবে। অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের মাঝে বিরোধ তৈরি করে দেবেন। ’
বিদায় হজের ভাষণে প্রিয় নবী (সা.) ইসলামে আত্মিক দিকটার মূল্য স্পষ্ট করে বলেন, হে মানুষ! তোমাদের প্রতিপালক এক, তোমাদের পিতা এক। তাকওয়া ছাড়া অন্য কোনো কারণে অনারবের ওপর কোনো আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই, আরবের ওপর অনারবের মর্যাদা নেই, কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গের প্রাধান্য নেই, শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণাঙ্গের সম্মান নেই। তোমাদের মধ্যে যারা সবচেয়ে বেশি পরহেজগার তারাই আল্লাহর কাছে বেশি সম্মানিত।
মুসলিম ব্যক্তি বাহ্যিক ও আত্মিক সব গোনাহ পরিত্যাগ করতে আদিষ্ট। এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘বলুন, নিশ্চয় আমার প্রতিপালক প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব অশ্লীলতা নিষিদ্ধ করেছেন। ’ -সূরা আরাফ: ৩৩
বর্ণিত কোরআনের আয়াত দ্বারা আমরা জানতে পারি, বাহ্যিক পরিচ্ছন্নতা ও আত্মিক পবিত্রতা মুসলিম সমাজে পরিশুদ্ধতা, চরিত্রের উন্নতি ও আচরণের ভদ্রতা এনে দেয়।
হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘মুসলিম বান্দা তার ভাইয়ের জন্য গোপনে প্রার্থনা করলে ফেরেশতা তাকে বলে, তোমার জন্যও অনুরূপ প্রাপ্য রয়েছে। ’
প্রকৃত মুসলিম তো সে যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলমান বাহ্যিকভাবে নিরাপদ থাকে এবং তার হিংসা ও বিদ্বেষ থেকে আত্মিকভাবে মুক্ত থাকে। এ বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা পরস্পর হিংসা করো না, দ্রব্যমূল্য চড়া করো না, ঘৃণা করো না, একে অন্যের পেছনে লেগো না। তোমাদের কেউ যেন অপরের ক্রয়-বিক্রয়ে অনুপ্রবেশ না করে। তোমরা আল্লাহর বান্দা পরস্পর ভাই হয়ে যাও। মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তার প্রতি অন্যায় করবে না। তাকে অসহযোগিতা করবে না। তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবে না। কলম ও ভাষার মাধ্যমে সাহায্য করে ভ্রাতৃত্বের বাহ্যিক দাবি পূরণ করবে। হৃদয় ও চিন্তা দিয়ে আত্মিক সহযোগিতা করবে। অন্য মুসলিম ভাইয়ের সম্মানহানির উদ্দেশ্যে তার পেছনে লাগা মারাত্মক ঘৃণিত কাজ। অভ্যন্তরীণ দোষত্রুটির তালাশ এক পর্যায়ে শারীরিক আঘাতের দিকে নিয়ে যায়। ’
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২০২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৮
এমএইউ/