অভিজ্ঞজনদের অভিমত হলো- কেবল শব্দ নয়, কথা বলার ভঙ্গিও সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুন্দর ভাষাভঙ্গি এবং সহৃদয় কথাবার্তা যার সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা হয় তাকে প্রশান্ত ও নির্ভরযোগ্য করে তুলে।
পবিত্র কোরআন শব্দ, বাক্য ইত্যাদিকে পবিত্র এবং অপবিত্র-এই দুই ভাগে ভাগ করেছে। পবিত্র বা সদালাপকে তুলনা করা হয়েছে এমন একটি গাছের সঙ্গে, যে গাছের শেকড় বেশ গভীরে প্রোথিত এবং যে গাছের শাখা-প্রশাখা ব্যাপক বিস্তৃত ও ছায়াময়। সেই গাছের ফল থেকে সবাই উপকৃত হয়।
আর অপবিত্র কথাকে বলা হয়েছে এমন এক বৃক্ষকে, যে বৃক্ষ মাটি থেকে মূলোৎপাটিত হয়ে গেছে এবং যে বৃক্ষের কোনো ফল নেই।
পবিত্র আর অপবিত্র কথাকে কোরআনে যে বৃক্ষের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে সে প্রসঙ্গে কথা হচ্ছিল। পবিত্র কোরআনের সূরা ইবরাহিমের ২৪ থেকে ২৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তুমি কি দেখছো না, আল্লাহ কালেমা তাইয়্যেবার উপমা দিয়েছেন কোন জিনিসের সাহায্যে? এর উপমা হচ্ছে, এমন একটি ভালো জাতের গাছ, যার শেকড় মাটির গভীরে প্রোথিত এবং শাখা-প্রশাখা আকাশে পৌঁছে গেছে। প্রতি মুহূর্তে নিজের পালনকর্তার অনুমতিক্রমে সে ফল দেয়। এ রকম উপমা আল্লাহ মানুষের উদ্দেশ্যে এ জন্য দেন, যাতে তারা এর সাহায্যে শিক্ষা লাভ করতে পারে। অন্যদিকে অসৎ বাক্যের উপমা হচ্ছে এমন একটি মন্দ গাছ, যাকে ভূপৃষ্ঠ থেকে উপড়ে দূরে নিক্ষেপ করা হয়েছে, যার কোনো স্থায়িত্ব নেই। ’
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নোংরা, অশালীন শব্দ বা বাক্য কিংবা অসংলগ্ন শব্দের ব্যবহার অসুস্থ ও রুচিহীন ব্যক্তিত্বের লক্ষণ। এ ধরনের শব্দের ব্যবহার ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়ে থাকতে পারে অথবা না জানার কিংবা শব্দভাণ্ডারের অসমৃদ্ধির কারণে করা হয়ে থাকতে পারে।
পক্ষান্তরে সুন্দর এবং আকর্ষণীয় শব্দ ও বাক্যের প্রয়োগে কথা বলার মাধ্যমে বক্তার সুরুচিপূর্ণ ব্যক্তিত্বের পরিচয় বহন করে। এরকম সুন্দর ব্যক্তিত্বের অধিকারী ব্যক্তি সহজেই সমাজে তার মর্যাদা ও উচ্চ অবস্থান নিশ্চিত করে ফেলতে পারে। শব্দ ব্যবহার এবং ভাষাভঙ্গির সৌন্দর্যহীনতা বক্তাকে সাময়িকভাবে পরিচিত করে তুললেও তার সঙ্গে সম্পর্ক খুব একটা দৃঢ় বা স্থায়ী হয় না। অল্প সময়ের মধ্যেই তার প্রতি শ্রোতারা অসন্তুষ্ট ও বিরক্ত হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে এ ধরনের বক্তা সমাজে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
পবিত্র কোরআনে সুন্দর ও নম্র ভাষায় কথা বলার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছ।
বস্তুত সম্পর্ক স্পর্শকাতর একটা বিষয়। কিন্তু একটি অশোভন বাক্যের ব্যবহার অপরিহার্য সংকট তৈরি করতে পারে। হতে পারে প্রচুর ক্ষতি, যা আর কিছুতেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয় না। সম্পর্কে একবার ফাটল সৃষ্টি হলে তা আর কটিয়ে উঠা সম্ভব হয় না। এসব কিছু বিবেচনা করে, কোরআন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশা করে সুদূরপ্রসারী চিন্তা এবং সঠিক ভাষাভঙ্গি ও আচরণের মাধ্যমে সবচেয়ে সুন্দর শব্দ ও কথাগুলোই যেন উপস্থাপন করে।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৮
এমএইউ/