ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

ঐতিহ্যবাহী নাখোদা মসজিদের ইতিকথা

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩০ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৮
ঐতিহ্যবাহী নাখোদা মসজিদের ইতিকথা কলকাতার ঐতিহ্যবাহী নাখোদা মসজিদ। ছবি: বাংলানিউজ

কলকাতা: প্রতিবারই পবিত্র রমজান এলেই একটু একটু করে সেজে ওঠে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী নাখোদা মসজিদ। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। বর্তমানে মসজিদটি বড়বাজারের চিতপুরে অবস্থিত। 

এটিই কলকাতার সবচেয়ে বড় মসজিদ। মসজিদের চাতালটি এতটাই বিশাল ও দ্বিতল যে, এখানে ১০ হাজার মানুষ এক সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন।

 

ঈদের দিন মসজিদকে কেন্দ্র করে একলাখের বেশি মানুষের এখানেই জামাত হয়। শুধু ঈদের দিন নয়, প্রতি জুম্মাবারেও ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষ এখানে একসঙ্গে নামাজ আদায় করেন।  

নাখোদা মসজিদ। ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এক সময় অবিভক্ত ভারত তথা বাংলার অন্যতম মসজিদ ছিল এটি। দূর-দুরান্ত থেকে মানুষ আসতেন এখানে। শুধু ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা নামাজের উদ্দেশ্যে নয়, এই মসজিদকে দেখতে আসতেন সব ধর্মের মানুষ। আজ তার বর্তমান অবস্থান উত্তর কলকাতায়। এখনও মসজিদটি শুধুমাত্র ধর্মীয়স্থান নয়, পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্র।  

ইতিহাস বলছে, ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটির নির্মাণের কাজ হয়। এ জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় গুজরাটের কচ্ছ অঞ্চলের কুচ্চি মেমন জামাত নামে একটি দলকে। সেই দলের নেতৃত্ব দেন আব্দুর রহিম ওসমান। এক সময় ওসমান ছিলেন বিখ্যাত নাবিক।  

অর্থাৎ এক মল্লার নাও চালানো। তার নামের অনুকরণে মসজিদটির নামকরণ হয় নাখোদা মসজিদ।

তৎকালীণ সময়ে মসজিদটি নির্মাণ করতে খরচ হয় ১৫ লাখেল বেশি রুপি। যা আজকের বাজারমূল্য কয়েকেশ’ কোটি। আব্দুর রহিম ওসমানের পৃষ্ঠপোষকতায় বর্তমান মসজিদের কাঠামোটি নির্মিত হয়। তার আগে নাখোদা মসজিদ ছিল ছোট পরিসরে।  

মসজিদটি নির্মাণ করা হয় সম্রাট আকবরের সমাধির আদলে। এছাড়া মসজিদের প্রবেশে পথ বানানো হয় আগ্রার ফতেহপুর সিক্রির বুলন্দ দরওয়াজার আদলে। একটি গম্বুজ, দু’টি বড়ো মিনার ও ২৫টি ছোট মিনার নিয়ে মসজিদটি নির্মিত।  

বড় মিনার দু’টির উচ্চতা ১৫১ ফুট আর ছোট মিনারগুলোর উচ্চতা ১০০ ফুট থেকে ১১৭ ফুটের মতো। চাতাল দু’টি দুর্লভ গ্রানাইট পাথর দিয়ে তৈরি। এই পাথরগুলো সেই সময় বিহারের তোলেপুর থেকে আনা হয়। মসজিদটির ভেতরে রয়েছে চোখ ধাঁধানো অলঙ্করণ ও সৃজনশীলতা। যা দেখে কিছুক্ষণ থমকে দাড়াতেই হয়।

উত্তর কলকাতা, যেখান থেকে বড় বাজার শুরু। সেই চিতপুর রোডে মসজিদটির অবস্থান। সেটিকে কেন্দ্র করে এমন কিছু জিনিস পাওয়া যায়, যা কলকাতার অন্যান্য স্থানে পাওয়া যায় না। এখানেই সবচেয়ে ভালো আতর ও খাবারে দেওয়া মিষ্টি সুগন্ধি আতর পাওয়া যায়।  

এক সঙ্গে প্রায় ১১ হাজার মুসল্লি এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারেন।  ছবি: বাংলানিউজগোটা কলকাতায় এখানেই মেলে হরিণের কস্তুরীর থেকে তৈরি আতর। মিষ্টি জর্দার বড় বাজার এখানে থেকেই শুরু। তবে না চিনে এসব কিনলে ঠকে যাওয়ার ভয় থাকে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, তুরস্ক থেকে আসা নকশী করা নামাজি টুপির বড় মার্কেটও এখানেই।  

দেশি-বিদেশি পাঞ্জাবী, সেরওয়ানি, বোরখা, লুঙ্গির পাইকারি বাজারও উত্তর কলকাতার ওই এলাকাটাতেই। শুধু পোশাক-আশাক নয়, কলকাতার সবচেয়ে বড় বাদ্যযন্ত্রর মার্কেটও এখানেই।

সেই হিসেবে বলাই যায়, মসজিদকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন নিজের অজান্তেই প্রদক্ষিণ করে চলেছে হাজারো ক্রেতা-বিক্রেতা থেকে পর্যটকের দল। আর যাকে কেন্দ্র করে এতো আয়োজন, সে সাজবে না তাই হয়! 

ইতিহাসের পাতার আর এক অধ্যায়, ঈদের আগে নতুনভাবে সেজে ওঠে প্রতিবার। যার নাম নাখোদা মসজিদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৯ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৮
বিএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।