ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

কড়া নিরাপত্তায় রাজধানীতে তাজিয়া মিছিল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৮
কড়া নিরাপত্তায় রাজধানীতে তাজিয়া মিছিল তাজিয়া মিছিল-ছবি-শাকিল আহমেদ

ঢাকা: হিজরির সাল অনুসারে ১০ মহরম তথা আশুরা মুসলিম বিশ্বে ত্যাগ ও শোকের দিন। ঘটনাবহুল এই দিনে বর্তমান ইরাকের অন্তর্গত কারবালা প্রান্তরে মুয়াবিয়ার হাতে শহীদ হন হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র ইমাম হোসেন। এদিন সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে আশুরা।

শুক্রবার (২১ সেপ্টেম্বর) আশুরা উপলক্ষে সকাল ১০টার পর রাজধানীর হোসেনী দালান থেকে কারবালার মর্মান্তিক শোকের স্মরণে তাজিয়া মিছিল শুরু হয়েছে। মিছিল সমন্বয়ের মূল দায়িত্ব পালন করছে হোসেনী দালান ইমামবাড়া ম্যানেজমেন্ট কমিটি।

তাজিয়া মিছিল সাজানো হয়েছে কারবালার শোকের নানা প্রতিকৃতি দিয়ে। বিবি ফাতেমার স্মরণে মিছিলের শুরুতেই দু’টি কালো গম্বুজ বহন করা হচ্ছে। অংশগ্রহণকারীরা বহন করছেন বিভিন্ন নিশান।

মিছিলে দু’টি ঘোড়া রয়েছে যার মধ্যে একটিকে রং দিয়ে রক্তের রূপ দেওয়া হয়েছে। ইমাম হোসেন যখন কারবালায় যান তখন এক রকম থাকে, আবার যুদ্ধের শেষে রক্তাক্ত ঘোড়ার অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে।

তাজিয়া মিছিল-ছবি-শাকিল আহমেদতাজিয়া তৈরি করা হয়েছে ইমাম হোসেনের সমাধির আদলে। একদল রয়েছেন যারা শোকের গান গাইতে গাইতে সামনের দিকে এগুচ্ছেন। এছাড়া অনেকেই বুক চাপড়ে ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ বলে মাতম করছেন। গায়ে রঙ লাগিয়ে কারাবালার সেই রক্তপাতের দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে মিছিলে।

কারবালার রক্তাক্ত স্মৃতির স্মরণে মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত নিজের দেহে ছুরি দিয়ে আঘাত করে রক্ত ঝরিয়ে মাতম করেন। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশের অনুরোধে এবার ছুরি দিয়ে মাতম করা হচ্ছে না।

হোসেনী দালান ইমামবাড়ি থেকে তাজিয়া মিছিলটি শুরু হয়ে বকশীবাজার রোড, নিউমার্কেট হয়ে ধানমন্ডি লেকের ‘কারবালা’ প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

এর আগে সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে যোগ দিয়েছেন অনেকে। মূল তাজিয়া মিছিলে যোগ দিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে কালো কাপড় পড়ে হোসেনী দালানে আসতে থাকেন মানুষ। নিরাপত্তা বিবেচনায় মিছিলে অংশ নিতে ইচ্ছুক প্রত্যেককে পুলিশের তল্লাশি চৌকির মধ্য দিয়ে যেতে দেখা গেছে।

তাজিয়া মিছিল-ছবি-শাকিল আহমেদহোসেনী দালানের চারপাশেই রয়েছে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী। পোশকধারী র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে বিপুল সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। এদিকে, তাজিয়া মিছিল শুরুর পর মিছিলের সামনে ও পেছনে বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে।

যে সড়ক দিয়ে মিছিল যাচ্ছে পুরো রাস্তা ঘিরে নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। রাস্তার পাশের ভবনগুলোর রুফটপ থেকে পুলিশ সদস্যদের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে দেখা গেছে। প্রস্তুত রয়েছে পুলিশের জলকামান ও সাজোয়া যান।

আশুরার তাজিয়া মিছিলে দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি বহন নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। একইসঙ্গে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

ডিএমপি জানায়, তাজিয়া মিছিলকে কেন্দ্র করে অনেক সময়েই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। যা নগরবাসীর মনে আতঙ্ক ও ভীতি সৃষ্টিসহ জননিরাপত্তার প্রতি হুমকি হয়ে ওঠে। এ কারণে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

রাজধানীর পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জের বিবিকা রওজা, পুরান পল্টন, মগবাজার, মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প ও মিরপুর-১১ নম্বরে বিহারি ক্যাম্পগুলোয় আশুরা পালিত হয়। এসব এলাকাগুলোতেও নিরাপত্তা জোরদার করেছে ডিএমপি।

হোসেনী দালানের সুপারেনটেনডেন্ট এমএম ফিরোজ হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, বরাবরের মতো আমরা এবারও তাজিয়া মিছিলের আয়োজন করেছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি আমাদেরও ৩০০ স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৮
পিএম/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।