তুর্কি ইসলামিক ইউনিয়ন ফর রিলিজিয়াস অ্যাফেয়ার্সের তহবিল দিয়ে মসজিদটির যাবতীয় নির্মাণ-খরচ বহন করা হয়। এছাড়াও অন্য মুসলিম সংস্থাগুলোর দেওয়া আর্থিক সহায়তাও নেওয়া হয়েছে।
১৯৮৪ সালে মসজিদটির প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়। তখন প্রায় ২০০টি মুসলিম সংস্থা মসজিদ নির্মাণে সম্মিলিত সিদ্ধান্তে পৌঁছে এবং প্রয়োজন অনুসারে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়।
কিন্তু শহরে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়তে থাকলে এবং তাদের সাংস্কৃতিক ও সভ্যতাকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ডের পরিধি বিস্তৃত হলে নতুন করে মসজিদ নির্মাণের প্রয়োজন পড়ে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০১ সালে আগের মসজিদের জায়গায় নতুন ভবন তৈরির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
মসজিদের নির্মাণকাজ শুরুর লক্ষ্যে ২০০১ সালে স্থানীয় মুসলিম কমিটি সিটি করপোরেশনের কাছে অনুমতি চায়। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অনুমতি মিলতে অনেকগুলো বছর চলে যায়।
পরবর্তীতে অনেক গবেষণার পর তুর্কি ইসলামিক ইউনিয়ন ফর রিলিজিয়াস অ্যাফেয়ার্স সিদ্ধান্ত জানিয়ে মসজিদের নকশা তৈরির প্রতিযোগিতার ঘোষণা দেয়। শেষ পর্যন্ত ২০০৫ সালে কলোগনে শহরে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে ১১১ জন নির্মাণশিল্পী ও নকশাকার তাদের ডিজাইন উপস্থাপন করে। চমৎকার সব নকশা সেখানে উপস্থাপিত হয় এবং সেগুলো থেকে বাছাই করে সবচেয়ে সুন্দর নকশাটি মনোনয়ন করা হয়। কিন্তু অনুমতিসংক্রান্ত পারিপার্শ্বিক কিছু কারণে নির্মাণ কাজ শুরু হতে বিলম্ব হয়ে যায়। শেষে ২০০৮ সালে নির্মাণপ্রকল্প শুরু হয়।
আনাতোলিয়া নিউজের বরাতে জানা যায়, তুর্কি ধর্মমন্ত্রণালয়ের তৎকালীন প্রধান আলি আরবাস উগলু মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এছাড়াও নির্মাণকাজ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কোলন শহরের উচ্চপদস্থ বিভিন্ন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
মসজিদের কিছু অংশ ২০১২ সালে নামাজ পড়ার জন্য খুলে দেওয়া হয় এবং অন্যপাশে কাজ চালু রাখা হয়। ২০১৪ সালে তুর্কি ডিজাইনার মারিয়া আয়কাতসের তত্ত্বাবধানে মসজিদের ভেতরের সৌন্দর্যবর্ধনের কর্মযজ্ঞ সমাপ্ত হয়। তুরস্কের বিখ্যাত ক্যালিওগ্রাফার ও হস্তশিল্পীদের মাধ্যমে মসজিদের ভেতরের দেয়ালে বিভিন্ন রকমের আলপনা ও শৈল্পিক চিত্র আঁকার কাজও সম্পন্ন হয়।
মসজিদের পিলার ও দেয়ালে স্থাপন করা কারুকার্যসমৃদ্ধ বিভিন্ন ফলক তুরস্কে তৈরি করা হয় এবং পরে জার্মানিতে নিয়ে যাওয়া হয়। মসজিদের মেহরাব, মিম্বর ও মিনারের মূল ডিজাইনও তুরস্কে করা হয়। এগুলোতে ইসলামী-তুর্কি সংস্কৃতির রূপ-মাধুর্য ও সৌন্দর্য তুলে ধরা হয়েছে।
২০১৭ সালে মসজিদটি উদ্বোধনের পরিকল্পনা করা হলেও কট্টর ডানপন্থীদের চরম বিরোধিতায় আর উদ্বোধন করা হয়নি। তবে স্বাবাভিকভাবে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা চালু রাখা হয়।
মসজিদটি ইতোমধ্যে ইউরোপের অন্যতম সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন মসজিদ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। ৫৫ মিটার উচ্চ দু’টি মিনার ও ৩৬ মিটার বিস্তৃত গম্বুজ মসজিদটিকে দিয়েছে অপরূপ সৌকর্য ও নান্দনিকতা।
মসজিদের মোট আয়তন ৪ হাজার ৫০০ বর্গ মিটার। সিমেন্ট ও কাচ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মসজিদের মৌলিক অংশ। মসজিদটির স্থপতি পল বামের মতে, মসজিদটি উদারতার প্রতীক হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে।
মসজিদ-কমপ্লেক্সে প্রদর্শনী ও সেমিনারের জন্য ৬শ জন মানুষের সংকুলান হয়, এমন বড়সড় একটি হলরুম রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে ১২০টি গাড়ি পার্কিংয়ের দারুণ ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও একটি পাবলিক লাইব্রেরি ও বড় ব্যক্তিদের জন্য স্টাডি অফিস রয়েছে।
মসজিদটির অভ্যন্তরীণ আধুনিকায়ন ও শৈল্পিকতা জার্মানির মুসলিমদের গর্ব ও উদারতার প্রতীক হিসেবে অবস্থান করে নিয়েছে।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০১৮
এমএমইউ/এএ