বক্সিংয়ের ইতিহাসের সাতজন বিখ্যাত মুসলিম বক্সারের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নিয়ে আজকের আলোচনা...
মুহাম্মদ আলী ক্লে
মুহাম্মদ আলী ক্লে শুধুমাত্র সর্বকালের সেরা বক্সারই নয়; তাকে শতাব্দির শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াব্যক্তিত্বও বলা হয়। তার জন্ম ১৯৪২ সালের ১৭ জানুয়ারি।
ক্যারিয়ারের শুরুতে মাত্র ২২ বছর বয়সে ১৯৬০ সালে রোম অলিম্পিকের লাইট হেভিওয়েট ক্যাটাগরিতে তিনি স্বর্ণপদক জিতে প্রথমবারের মতো হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপও জিতে নেন। এর কিছুদিন পর তিনি ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেন। তার আগের নাম ছিল ক্যাসিয়াস ক্লে। মুসলমান হওয়ার পর তিনি মুহাম্মদ আলী নাম গ্রহণ করেন এবং বলেন, ‘ক্যাসিয়াস ক্লে ছিল আমার ক্রীতদাস নাম। ’
একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে ক্যারিয়ারে তিন তিনবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি মোট ৬১টি লড়াইয়ের ৫৬টিতে তিনি জয়ী হয়েছেন। ১৯৯৯ সালে স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড শতাব্দির সেরা খেলোয়াড় ও বিবিসি শতাব্দির সেরা ক্রীড়াব্যক্তিত্ব হিসেবে তাকে সম্মানিত করে। ২০১৬ সালের ৩ জুন তিনি মারা যান।
মাইক টাইসন
মাইক টাইসন ‘আয়রন মাইক’ ও ‘কিড ডায়নামাইট’ নামে প্রসিদ্ধ। সবচেয়ে কম বয়সে (২০ বছর বয়সে) হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে রেকর্ড করেন তিনি। পেশাদারী ক্যারিয়ারে ৫৮টি লড়াইয়ের ৫০টি তিনি জিতেছেন। পেশাগত জীবনে ব্যাপক সুনাম কামালেও নব্বইয়ের দশকে তাকে আদালতে বিচারের সম্মুখীন হতে হয়। ১৯৯২ সালে একটি অভিযোগে তিন বছরের জন্য কারারুদ্ধ হন। কারাগারে থাকাকালীন তিনি ইসলাম ধর্মগ্রহণ করে নিজের নাম ‘মালিক আব্দুল আজিজ’-এ পরিবর্তিত করেন।
বার্নার্ড হপকিন্স
পেশাদার বক্সিংয়ের আরেক কিংবদন্তি বার্নার্ড হপকিন্স। তার ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৮৮ সালে। ২০১৬ সালে ৫১ বছর বয়সে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। অনবদ্য পারফরমন্সের কারণে তিনি ‘দ্য এলিয়ন’ হিসেবে বিখ্যাত।
হপকিন্স ২০০৪ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বারোটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে ও অদ্বিতীয় মিডওয়েট চ্যাম্পিয়ন বেশ খ্যাতি অর্জন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের এ বক্সার ২০১১ সালে কানাডার জিন প্যাসকালকে হারিয়ে ডব্লুবিসি লাইট-হেভিওয়েট শিরোপা জিতে সবচেয়ে বেশি বয়সে বক্সিংয়ের কোনো বিশ্ব শিরোপা জয়ের রেকর্ডও করেন।
খাবিব নুর মোহাম্মদভ ইউএফসি’র ইতিহাসে প্রথম মুসলিম চ্যাম্পিয়ন। এছাড়া তিনি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ম্যাচে অপরাজিত থেকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। মিক্সড মার্শাল আর্টিস্ট খাবিব রাশিয়ার অর্ন্তভুক্ত ইসলামিক রিপাবলিক অব দাগেস্তানের আভার মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
গত ৬ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে অনুষ্ঠিত মিক্সড মার্শাল আর্টসের (এমএমএ) বৃহত্তম আসর আল্টিমেট ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপের (ইউএফসি) ফাইনাল ম্যাচে আইরিশ প্রতিযোগী কনর ম্যাকগ্রেগরকে পরাজিত করে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন এ রাশিয়ান।
ফাইনালের আগে খাবিবকে নিয়ে এক প্রকার বর্ণবাদী আচরণ শুরু হয়। তার প্রতিদ্বন্দ্বী কনর ম্যাকগ্রেগর খাবিবকে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মৌখিক-দৈহিক আক্রমণের পাশাপাশি বেশ অপমানসূচক কথা বলে নাজেহাল করার চেষ্টা করে। ম্যাকগ্রেগর খাবিবের সামনে হুইস্কি রেখে তাকে তা পান করতে বলে। খাবিব তা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখান করলে, ম্যাকগ্রেগর তাকে সন্ত্রাসী বলে বিশ্রি গালমন্দ করে।
কিন্তু খাবিব এ অবমাননাকর আচরণের উত্তর দিতে ফাইনালকেই বেছে নেন। ম্যাকগ্রেগরকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে সমুচিত জবাব দেন।
জয় শেষে বলেন, এটি সম্মানজনক খেলা। কোনো অর্বাচিন বাক-বিনিময়ের খেলা নয়। আমি চাই, এ বাজে অবস্থার পরিবর্তন ঘটুক। আপনি কখনোই কারো ধর্ম ও জাতি নিয়ে আক্রমণাত্মক কথা বলতে পারেন না। বিষয়টি আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
খাবিব আভারি, আরবি, তুর্কি, রুশ ও ইংরেজিতে পারদর্শী। পিতার হাত ধরেই তিনি প্রথম কুস্তির প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ২০০৮ সালে মিক্সড মার্শাল আর্টে খাবিবের ক্যারিয়ারের সূচনা হয়।
বদর হারি
মরক্কোর বংশোদ্ভুত নেদারল্যান্ডের এ বক্সার ‘গোল্ডেন বয়’ নামে বিখ্যাত। কিকবক্সিংয়ে হারির ক্যারিয়ার ছিল দুর্দান্ত। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি কে-১ হেভিওয়েট ডিভিশনে বিশ্বেসেরা ছিলেন।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে তিনি অবসর ভেঙে আবার হাতে গ্লাভস তুলে নেন, তখনকার চ্যাম্পিয়ন অব ‘গ্লোরি’ রিকো ভেরহোয়েভেনের মোকাবেলা করার জন্য।
প্রিন্স নাসিম হামেদ
এ তালিকার আরেক খ্যাতিমান সদস্য। ইয়েমেনি এ বক্সার সবসময় তার মুসলিম পরিচয় তুলে ধরেছেন এবং এতে তিনি গর্ববোধও করতেন। হাতের ইনজুরির কারণে হামেদ ২০০২ সালে বক্সিং ক্যারিয়ারের ইতি টানেন।
২০১৫ সালের ‘আন্তর্জাতিক বক্সিং হল অব ফেম’-এ হামেদ অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। মজার ব্যাপার হলো, হামেদের শারীরিক ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে তাকে এখন চিনতে অনেকটা বেগ পেতে হয়।
আমির খান
আমির ইকবাল খান পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত একজন ব্রিটিশ পেশাদার বক্সার। তিনি ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ডব্লিউবিএ শিরোপা এবং ২০১১ সালে আইবিএফ শিরোপা জয়ী সাবেক ইউনিফায়েড লাইট-ওয়েভারওয়েট বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। তিনি আঞ্চলিক পর্যায়ে ২০০৭ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত কমনওয়েলথ লাইটওয়েট শিরোপাধারী ছিলেন।
৩১ বছর বয়সী খান এখনও বক্সিং ক্যারিয়ার শেষ করার কথা ভাবছেন না। তিনি ২০০৪ সালের অলিম্পিকে রৌপ্য পদক জিতে ক্যারিয়ারে অগ্রযাত্রা শুরু করেছিলেন।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৮
এমএমইউ/এসএইচ