নারী-পুরুষের অবৈধ মিলনের ফলে সন্তান জন্ম লাভ করা সন্তান ইদানিংকালের একটি সমস্যা হিসেবে আভির্ভূত হয়েছে। যদিও মার্জিত ভাষায় ‘অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তান’ আখ্যা দেওয়া হয়।
ইসলামে সন্তানের বৈধতা
স্বামী-স্ত্রীর বৈধ বিয়ে হলো ইসলামে সন্তানের বৈধতার মূল ভিত্তি। বিয়ের মাধ্যমেই বংশপরম্পরায় মানুষের উৎস নির্ধারিত হয়েছে। তাই অমুসলিমরা তাদের ধর্মমতে বৈধ বিয়ের কারলে তাদের মাধ্যমে জন্মগ্রহণকৃত সন্তানকেও বৈধসন্তান হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত অমুসলিমদের জন্য ইসলামী পদ্ধতিতে বিয়ে জরুরি নয়, শুধু মুসলিমদের জন্যই ইসলামী পদ্ধতিতে বৈধ বিয়ে অপরিহার্য। ইসলামে মানবসন্তানের বংশ সংরক্ষণের প্রতি এতো জোর দেওয়া হয়েছে যে, অমুসলিমদের নিজ নিজ ধর্মীয় বিয়েকেও ইসলাম বৈধতার সনদ দেয়। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ১৩২৭৩, রদ্দুল মুহতার : ৩/১৮৪)
সন্তান বৈধ হওয়ার ন্যূনতম সময়
বিয়ের কমপক্ষে ছয় মাস পর বাচ্চা জন্ম নিলেই স্বামী-স্ত্রীর বৈধ সন্তান হিসেবে গণ্য হবে। সে সূত্রে বিয়ের ছয় মাস পর বাচ্চা জন্ম নিলে স্বামী নিজের সন্তাননা বলে অস্বীকার করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে তাদের শারিরিক সম্পর্ক হয়েছে কিনা, হলে কখন হয়েছে- তা ধর্তব্য নয়। কারণ তা অত্যন্ত গোপনীয় ও স্পর্শকাতর ব্যাপার। (মাবসুতে সারাখসি : ১৭/১৫৫)
বিয়ের পরে যদি স্বামী ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে অবৈধ মিলনে যদি কোনো সন্তান জন্ম নেয়, তাহলে ওই সন্তানের পিতৃত্বের সম্পর্কও স্ত্রীর বৈধ স্বামীর ধর্তব্য হবে। ওই নারীর স্বামীই তার সন্তানের বৈধ বাবা বিবেচিত হবে। এ ক্ষেত্রে সন্তানটিকে অবৈধ সন্তান বলা যাবে না। হাদিসে এসেছে, সন্তান বৈধ স্বামীরই গণ্য হবে, আর ব্যভিচারী বঞ্চিত হবে। (বুখারি, হাদিস নং : ২০৫৩)
দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, ইসলাম মানবসন্তানের বংশ সংরক্ষণে ও তাকে অসম্মানের আঁচড় থেকে বাঁচাতে সর্বাধিক চেষ্টা করেছে। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো সম্ভাবনায় বৈধতা দেওয়া যায়, তার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
অবৈধ সন্তানের সাধারণ বিধান কী হবে
সাধারণত অবৈধ সন্তানের রক্ষণাবেক্ষণ, প্রতিপালন ও ধর্মবিষয়ক প্রায় বিধান বৈধ সন্তানের অনুরূপ। কারণ, এখানে সন্তানের কোনো দোষ নেই; বরং দোষ তার মা-বাবার। তাই তার বৈধ অধিকার ইসলামে সাব্যস্ত রয়েছে। তবে কিছু কিছু বিধানে অবশ্যই পার্থক্যও রয়েছে।
অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তানের বংশ
অবৈধ সন্তানের বংশ মায়ের দিকে সাব্যস্ত হবে। যেহেতু বাবা অবৈধ, তাই অবৈধ বাবার সঙ্গে তাকে সম্পৃক্ত করা হবে না। হাদিসে এসেছে, ‘সন্তান বৈধ স্বামীরই গণ্য হবে, আর ব্যভিচারী বঞ্চিত হবে। ’ (বুখারি, হাদিস নং : ২০৫৩)
ভরণ-পোষণ ও লালন-পালন
সন্তানের মা তার লালন-পালনের অধিকার রাখবে। মায়ের পক্ষ এমন সন্তানের ভরণ-পোষণ বহন করবে। অর্থাৎ এ সন্তানের মায়ের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব যার, তিনিই তারও ভরণ-পোষণ দেবেন।
আকিকা করতে হবে কিনা
সন্তানের আকিকা করা হবে। মায়ের দায়িত্বশীল পক্ষ এ ক্ষেত্রে যাবতীয় আয়োজন করবে। আকিকার অত্যন্ত গোপনীয়তা জরুরি। যেন সন্তানের মর্যাদা ক্ষুণ্ন না হয়। (হাশিয়াতুশ শারবিনি আলা তুহফাতিল মুহতাজ : ৩/৩১১)
উত্তরাধিকারের ব্যবস্থা
মায়ের দিকে বংশ সাব্যস্ত হওয়ায় সে মা ও মায়ের নিকটাত্মীয়দের উত্তরাধিকারী হবে। (রদ্দুল মুহতার, ৬/৭৭৬)
তার সাক্ষ্যদানের হুকুম
অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তান ন্যায়পরায়ণ হলে, অন্যদের মতো তার সাক্ষীও ইসলামে গ্রহণযোগ্য। (তাবঈনুল হাকাইক, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ২২৬)
ধর্মের কী ফয়সালা
অবৈধ শিশুসন্তানের মা-বাবা উভয়ে যদি আলাদা ধর্মানুসারী হয়, তখন উভয়ের মধ্যে যার ধর্ম উত্কৃষ্ট, সন্তান তার ধর্মের বলে ধর্তব্য হবে। শিশুসন্তান অবুঝ হওয়ার কারণেই মা-বাবার মধ্যে যে উত্কৃষ্ট ধর্মাবলম্বী, শিশুকে তার ধর্মের অনুসারী ধরা হবে।
অতএব, যদি মা-বাবার যে কেউ একজন মুসলিম ও অন্যজন অমুসলিম হয়, তাহলে সন্তান মুসলিম হিসেবে ধর্তব্য হবে। হাদিসে এসেছে, ‘সব সন্তান স্বভাবধর্ম ইসলামের ওপর জন্মগ্রহণ করে; কিন্তু পরবর্তী সময়ে তার মা-বাবার ভুল দীক্ষায় সে ইহুদি, খ্রিস্টান, অগ্নিপূজক ইত্যাদি হয়। ’ (বুখারি, হাদিস নং : ১৩৫৮, রদ্দুল মুহতার : ৩/১৯৬)
ব্যভিচারীর সন্তান বলে গালি দেওয়া
অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তানকে ব্যভিচারীর সন্তান বলে গালি দেওয়া বৈধ নয়। কেউ যদি তাকে ব্যভিচারী বলে গালমন্দ করে, তাহলে গালিদাতাকে অপবাদ দেওয়ার শাস্তি ভোগ করতে হবে। কারণ মা-বাবা অন্যায়কারী হলেও সে ‘সন্তান’ তাতে অংশীদার নয়। (মাবসুতে সারাখসি : ৯/১২৭)
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘কারো অন্যায়ের বোঝা অন্য ব্যক্তি বহন করবে না। ’ (সুরা : আনআম, আয়াত : আয়াত ১৬৪)
‘অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তান’র প্রাদুর্ভাব থেকে আল্লাহ তাআলা আমাদের দেশ ও দশকে রক্ষা করুন।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৯
এমএমইউ/