আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৮)
একজন মুসলমানের ওপর অত্যাবশ্যকীয় কর্তব্য হলো, অন্যের সকল হক-অধিকার পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রদান করা।
ধনী-সামর্থ্যবান ব্যক্তি গ্রহনযোগ্য কারণ ছাড়া ঋণ আদায়ে অবহেলা করা হারাম। এটি প্রতিপক্ষের প্রতি অন্যায়। এমন কার্যকলাপের কারণে একালে ও পরকালে লজ্জিত হতে হবে।
ইসলাম ঋণ ও লেনদেনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে। অনেক বড় মান-মর্যাদা দিয়েছ। একজন ফিকহ শাস্ত্রজ্ঞ এটিকে ‘দ্বীনের অর্ধেক’ বলেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) রাসুল (সা.) সম্পর্কে বর্ণনা করেন, ঋণগ্রস্ত মৃত ব্যক্তির লাশ (জানাজার জন্য) হাজির করা হলে রাসুল (সা.) জিজ্ঞেস করতেন, ‘সে কি অপরিশোধিত কোনো ঋণ রেখে গেছে? যদি বলা হতো, তিনি পরিশোধ করে গেছেন, তাহলে তিনি তার (জানাজা) নামাজ পড়াতেন। অন্যথায় বলতেন, তোমরা তোমাদের সাথীর জানাজা পড়ে নাও। ’ (বুখারি ও মুসলিম)
আমাদের মাঝে এমনও আছে যারা ঋণ নিয়ে খুব উদাস মনোভাব পোষণ করেন। ঋণদাতার অধিকারের প্রতিও সজাগ দৃষ্টি রাখে না। রাসুল (স.) বলেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় প্রাণ উৎসর্গকারী শহিদের ঋণ ব্যতিত তার অন্য সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে। ’
হাশরের ময়দানে ঋণদাতাকে তার প্রতিপক্ষের নেক আমল দিয়ে তার প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়া হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যের প্রতি অন্যায়-নিপীড়ন করেছে বা কারো অধিকার হরণ করেছে, সে অর্থ-কড়ি দিয়ে তা পরিশোধের সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার আগে যেন মিটিয়ে দেয়, অন্যথায় তার প্রতিদান হিসেবে প্রতিপক্ষের নেক আমল ঋণদাতাকে দেয়া হবে, এমনকি তার কাছে ঋণ-সমপরিমান নেক আমল না থেকে থাকে, তবে ঋণদাতার বদ আমল প্রতিপক্ষের ঘাড়ে তুলে দেয়া হবে। ’ (বুখারি শরিফ)
অন্য মুসলমান ভাই থেকে ঋণ গ্রহণকালে তা যথাযথ সময়ে পরিশোধের মনোভাব তৈরি করতে হবে। লেনদেন প্রদানে শুদ্ধ ও সুন্দর নিয়্যত থাকবে। হৃদয়ে সুস্পষ্ট সংকল্প করতে হবে। এর দ্বারা আল্লাহ তার জন্য পরিশোধের পথ-পাথেয় যোগাবেন। সকল বাধা-বিপত্তি দূর করে দেবেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যের সম্পদ গ্রহণ করে এবং তা আদায়ের পূর্ণ ইচ্ছা রাখে; আল্লাহ তায়ালা তার পক্ষ থেকে তা আদায়ের ব্যবস্থা করেন। আর যে তা গ্রহণ করে বিনাশের ইচ্ছা করে; আল্লাহ তায়ালা তাকে ধ্বংস করে দেন। ’ (বোখারি)
অন্য দিকে আল্লাহ তাআলা ঋণদাতাকে তার প্রতিপক্ষের প্রতি সদয় হতে বলেছেন। ইচ্ছে থাকার পরও ঋণ প্রদানে অক্ষম হলে তাকে সময় দিতে হবে। ‘যদি ঋণগ্রহীতা অভাবগ্রস্ত হয়, তবে তার স্বচ্ছলতা আসা পর্যন্ত সময় দেওয়া উচিত। আর যদি ক্ষমা করে দাও, তবে তা খুবই উত্তম, যদি তোমরা উপলব্ধি করো। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৮০)
ঋণ গ্রহণের পর কোনো বিপদাপদে মুখোমুখি হয়ে যদি কেউ নিজ দুর্বলতা অবলীলায় স্বীকার করে। তার ঋণ মাফ করার প্রত্যর্পণের দায়িত্ব নিয়ে রাসুল (সা.) বলেন, ‘এক ব্যবসায়ী ছিলেন যিনি মানুষদের ঋণ দিতেন, পরে যখন ঋণ গ্রহীতাকে অপারগ দেখতেন, তিনি তার ছেলেদের ডেকে বলে দিতেন, অমুক ব্যক্তির কাছে দেনা দাবি করো না। হয়তো এর মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের মাফ করে দিবেন। পরে আল্লাহ তাকে মাফ করে দিয়েছেন। ’ (বুখারি ও মুসলিম শরিফ)
ঋণ আদায়ে অক্ষম ব্যক্তির প্রতি করুণা-অনুকম্পা করার ধরুন আল্লাহর রহমতের অংশীদার হওয়া যায়। এমন বান্দাকে আল্লাহ তাআলা তাকে মহান প্রতিদানে ভূষিত করবেন। পবিত্র কোরআনে এই মর্মে আয়াতও রয়েছে।
তাই আসুন, অন্যের ঋণ আদায়ে সজাগ হই। অপরের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট থাকি নিরন্তর। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন। আমিন।
মদিনা মুনাওয়ারার পবিত্র মসজিদে নববীতে (২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪০ হিজরি মোতাবেক ১ মার্চ ২০১৯) জুমার খুতবাটি উপস্থাপন করেছেন শায়খ ড. হুসাইন ইবনে আবদুল আজিজ আলে শায়খ। খুতবাটির সংক্ষিপ্ত অনুবাদ করেছেন মুহাম্মাদ আতীকুল ইসলাম
অনুবাদক: তরুণ আলেম ও শিক্ষার্থী, অনার্স ২য় বর্ষ, আরবি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়।
ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৯
এমএমইউ