স্বাভাবিকতই ইবাদতের জন্য কায়িক ও শারীরিক শক্তি-সামর্থ্য প্রয়োজন। শারীরিক শক্তি ও কায়িক সামর্থ্য আল্লাহ তাআলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেয়ামত।
তিনি বলেন, ‘পাঁচটি জিনিসকে পাঁচটি জিনিস আসার আগে গনিমতের অমূল্য সম্পদ হিসেবে মূল্যায়ন করো। জীবনকে মৃত্যু আসার আগে। সুস্থতাকে অসুস্থ হওয়ার আগে। অবসর সময়কে ব্যস্ততা আসার আগে। যৌবনকে বার্ধক্য আসার আগে এবং সচ্ছলতাকে দরিদ্রতা আসার আগে। ’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা: ৮/১২৭; সহিহুল জামে, হাদিস নং: ১০৭৭)
স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও চিকিৎসা সম্পর্কে ইসলামে রয়েছে বিশদ আলোচনা। স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে ইসলাম সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। সতর্কতা সত্ত্বেও কোনো রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হয়ে গেলে এর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার প্রতিও রয়েছে জোরালো তাগিদ।
ইসলাম রোগ প্রতিরোধেও গুরুত্বারোপ করেছে। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে উৎসাহিত করেছে। এজন্য আমরা দেখতে পাই, যে বিষয়গুলোর কারণে মানুষের রোগ হয় ইসলাম আগেই সেগুলোকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। ইসলামে হালাল-হারাম খাবারের বিবরণ দেখলে তা সহজেই অনুমেয়।
ওয়াহাব ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় তোমার ওপর তোমার শরীরের হক আছে। ’ (বুখারি, হাদিস নং: ৫৭০৩; তিরমিজি, হাদিস নং: ২৩৫০)
স্বাস্থ্য রক্ষা করা শরিয়তের তাগিদ। শরীরের যথেচ্ছ ব্যবহার উচিত নয়। কোরআন-সুন্নাহ এবং ইসলামি শরিয়াত স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যেমন গুরুত্ব দিয়েছে তেমনি তা কার্যকরের ফলপ্রসূ উপায় বাতলে দিয়েছে। যেমন, নেশা জাতীয় দ্রব্য হারাম করা এবং পরিমিত আহার ও সময়ানুগ খাবার গ্রহণ ইত্যাদি। কাজেই স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সচেষ্ট হওয়া প্রত্যেক মুসলমানের ঈমান ও বিশ্বাসের দাবি।
কোনো কারণে মানুষ অসুস্থ হলে আল্লাহ তাকে তার অসুস্থতার কারণে সওয়াব ও পুণ্য দান করেন। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে অসুস্থ হলে অবশ্যই তাকে কেয়ামতের দিন শাস্তির সম্মুখিন হতে হবে। তাছাড়া অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা গ্রহণের চেয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সুস্থ থাকাকে ইসলাম অধিক উৎসাহিত করেছে। হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন বান্দাকে নিয়ামত সম্পর্কে সর্বপ্রথম যে প্রশ্নটি করা হবে তা হলো তার সুস্থতা সম্পর্কে। তাকে বলা হবে আমি কি তোমাকে শারীরিক সুস্থতা দিইনি?’ (তিরমিজি)
নবী করিম (সা.) তার সাহাবিদের দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করতে উৎসাহিত করেছেন এবং তিনি নিজে অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ করো, কেননা মহান আল্লাহ এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, যার প্রতিষেধক তিনি সৃষ্টি করেননি। তবে একটি রোগ আছে যার কোনো প্রতিষেধক নেই, সেটি হলো বার্ধক্য। ’ (আবু দাউদ)
কাজেই স্বাস্থ্য সচেতনতা, শরীরের প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং রোগ-বালাই হলে চিকিৎসা নেওয়া একজন মুমিনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। মুমিনের পার্থিব-অপার্থিব প্রতিটি কর্মের মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করেন। আর তার পক্ষ থেকে পুণ্য ও সওয়াব লাভে ধন্য হন।
ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৯
এমএমইউ