মুসলিমরা বহুদিন ধরে মসজিদের জন্য আবেদন করে আসছিলেন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে। শেষমেষ মসজিদ তৈরির সব ব্যবস্থা করা হয়।
এটি গত কয়েক শতাব্দীর মধ্যে এথেন্সের প্রথম আনুষ্ঠানিক মসজিদ। ভোটনিকোস জেলায় এটির অবস্থান। মসজিদটিতে কোনো গম্বুজ নেই। তবে একটি মিনার রয়েছে। ২০১৭ সালে মিনারটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়।
নতুন মসজিদের নির্মাণে গ্রিসের বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন সেবাসংস্থা জড়িত; এতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, অবকাঠামো মন্ত্রণালয় ও এথেন্স পৌরসভা ছাড়াও দেশটির নৌবাহিনী জড়িত রয়েছে। রাজধানী এথেন্সের মুসলমানরাও মসজিদটি নির্মাণে আর্থিকভাবে সহযোগিতায় অংশ নিয়েছে।
রয়টার্সের তথ্য মতে এথেন্সে মুসলিমদের সংখ্যা প্রায় এক লাখ। তাদের মধ্যে বৃহত্তর এথেন্স অঞ্চলের হাজার হাজার মুসলিম অভিবাসী অনানুষ্ঠানিক ইবাদত-বন্দেগির জন্য বেসমেন্ট এবং অপ্রয়োজনীয় দোকানগুলোর কক্ষ ব্যবহার করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। পাশাপাশি মসজিদ নির্মাণের জন্য তারা চেষ্টা-কসরত করে আসছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের চাওয়া পূর্ণ হতে চলেছে।
গ্রিসের শিক্ষা মন্ত্রী কোস্তাস গভ্রোগলু সাংবাদিকদের বলেন, ইমামের মাধ্যমে এ মসজিদের প্রথম নামাজ আদায় করা হবে। আমরা আশা করি সেপ্টেম্বর নাগাদ তা সম্ভব হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, মসজিদটি কারো ব্যক্তিগত মালিকানাধীন স্থান নয়। বরং এটি সর্বজনীন। কারণ এটি আমাদের এবং আপনাদের। আর আমরা এবং আপনারা সবাই একে অপরের। এটার মালিক কোনো ব্যক্তি, কোনো সম্প্রদায় কিংবা কোনো সমাজ ও ভিনদেশী কেউ নয়।
মসজিদের ইমাম জাকি মোহাম্মাদ বলেন, মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলতে চাই যে, অবশেষে আমরা একটি মসজিদ পেয়েছি। যেখানে আমরা ইবাদত-বন্দেগি করতে পারবো। আমাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করতে পারবো।
আশির হায়দার নামের একজন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে গ্রিসের পক্ষ থেকে এথেন্সের মুসলমানদের জন্য এটি একটি মহৎ উপহার এবং এটি একটি এমন প্রতীকী কাজ, যা ইসলামের প্রতি গ্রিস রাষ্ট্রের শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে।
কয়েক দশক আগে এথেন্সে মসজিদ নির্মাণ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। তার ফল স্বরূপ এটি নির্মাণ হয় এবং উদ্বোধনের পথে। তবে এথেন্স এখন পর্যন্ত মসজিদ ছাড়া একমাত্র ইউরোপীয় রাজধানী শহর।
ইতিহাসে দেখা যায়, ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে ওসমানি (অটোমান) সাম্রাজ্য থেকে গ্রিস স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে এথেন্সে কোনো অফিসিয়াল মসজিদ ছিল না। এথেন্সে স্বাধীনতাপূর্ব যুগের অবশিষ্ট মসজিদটিকে ‘তিজিস্তারাকিস মসজিদ’ যা ‘গ্রিস লোককলার জাদুঘর’-এ রূপান্তরিত করা হয় এবং ফেথিয়ে মসজিদকে একটি গুদামঘরে পরিণত করা হয়।
তাই তখন থেকে মুসলমানরা শত শত জায়গা, দোকানপাট ও অন্ধকার গুদাম ইত্যাদিতে অস্থায়ী মসজিদ বানিয়ে নামাজ ও ইবাদত-বন্দেগি করতে শুরু করেন। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে মুসলমানরা সহিংসবাদীদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। ইবাদতঘরগুলোও আক্রমণের শিকার হয়েছে বহুবার।
১৮৯০ সালে একটি মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা সংসদের একটি আইন নিয়ে শুরু হয়েছিল। কিন্তু ২০০৪ সালের অলিম্পিক গেমসের কারণে মসিজদ-নির্মাণসংক্রান্ত সব কাজে স্থবিরতা চলে আসে।
ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২১৩১ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৯
এমএমইউ