ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

মসজিদে নববীতে ৩০ বছর ধরে ক্যালিগ্রাফি করেন শফিক

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫০ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১৯
মসজিদে নববীতে ৩০ বছর ধরে ক্যালিগ্রাফি করেন শফিক ক্যালিগ্রাফির কাজ করছেন শফিক-উজ-জামান। ছবি: সংগৃহীত

মসজিদে নববী মানে সবুজ গম্বুজের ছায়া। স্বর্গীয় সৌরভে মৌতাত আঙিনা। প্রিয়নবী (সা.) এর রওজা মুবারক। অনিন্দ্য সুন্দরের মায়ামাখা প্রাঙ্গন। পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ নিরন্তর স্বপ্ন দেখেন মসজিদে নববীর সান্যিধ্য-পরশে জীবন কাটানোর। কিন্তু এমন সৌভাগ্য কয়জনের জীবনে জুটে? তবে কেউ যদি মসজিদে নববীর গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজেই ৩০ বছর কাটান স্বর্গীয় এ পরিবেশে!? তাহলে নিশ্চয় ভাবতেই অবাক লাগে।

কিন্তু ঠিক এমন কাজটি করার দুর্লভ সৌভাগ্য লাভ হয়েছে উসতাদ শফিক-উজ-জামানের। বিগত ৩০ বছর ধরে তিনি মসজিদে নববীর একজন একনিষ্ঠ আরবি ক্যালিওগ্রাফার হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।

শফিক-উজ-জামানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা পাকিস্তানে। ৪০ বছর আগে স্বপ্নের মসজিদে নববীতে এ ধ্রুপদী-বর্নিল কাজে যোগ দিতে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। বর্তমানে জিয়ারতে গেলে মসজিদে নববীর ভেতরের পিলারগুলোতে বিভিন্ন রকমের শিল্পলিপি দেখা যায়। যার বেশিরভাগই করেছেন শফিক উজ জামান।

ক্যালিগ্রাফির কাজ করছেন শফিক-উজ-জামান।  ছবি: সংগৃহীত

শফিক-উজ-জামান সৌদিতে যাওয়ার পর সর্বপ্রথম রিয়াদের একটি দোকানে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর তার সামনে আসে জীবন পরিবর্তনের সুবর্ণ সুযোগ। আর সুযোগটি লুফে নিতে তিনি ন্যূনতম দেরি করেননি। সৌদি আরবভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘বেস্ট ক্যালিওগ্রাফার ফর হারাম’ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার পর তার জীবন সম্পূর্ণরূপে বদলে যায়। নেমে আসে অনাবিল সুখ-শান্তির বারিধারা।

এর আগে শৈশবে ও তারুণ্যের শুরুর দিনগুলোতে শফিক কয়েকটি ক্যালিগ্রাফি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জিতেছেন। কিন্তু ‘বেস্ট ক্যালিওগ্রাফার ফর হারাম’ জয় তাকে ‘অনন্যতা’র সুযোগ তৈরি করে দেয়। এতে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করে মসজিদে নববীর দায়িত্বশীলদের নজর কাড়েন।

মসজিদে নববীতে ক্যালিগ্রাফির ফলক বসানো হচ্ছে।  ছবি: সংগৃহীত

একটি সাক্ষাৎকারধর্মী ভিডিওতে শফিক জানান, সৌদি আরবের লোকেরা তাকে আরব মনে করেছিলেন। উৎকৃষ্ট মানের আরবি বলতে ও নানা বৈচিত্রে আরবি হস্তাক্ষর অঙ্কন করতে পারার কারণে তারা এমনটা মনে করতেন। কিন্তু যখন জানতে পারেন শফিক পাকিস্তানের, তখন তারা বেশ অভিভূত হন।

শৈশব থেকে স্বচ্ছন্দ্যে ক্যালিগ্রাফি করলেও তিনি বিশ্বাস করেন, গত ৩০ বছর তার জীবনের বর্ণোজ্জ্বল সময়।  এর মাধ্যমে তিনি নিজের জীবনে অভূতপূর্ব পরিবর্তন এনেছেন।  এ দীর্ঘ সময় ধরে তিনি মসজিদে নববীর একজন নিষ্ঠাবান ও চৌকস ক্যালিগ্রাফর হিসেবে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

ক্যালিগ্রাফির কাজ করছেন শফিক-উজ-জামান।  ছবি: সংগৃহীত

শফিক-উজ-জামান ১৭৭ টি গম্বুজ নিয়ে কাজ করেছেন এবং এখনও করছেন।  তিনি বলেন, রাসুল (সা.) এর পবিত্র মসজিদে কাজ করতে পারাটা তাকে শান্তি-সমৃদ্ধি ও অপার সুখ এনে দিয়েছে। আঁকাআঁকির কাজগুলো করতে বেশ সময় লাগলেও তিনি কাজটি বেশ উপভোগ করেন। নিপুণতার স্বাক্ষর রেখে এতে সৌন্দর্যের পালক লাগিয়ে দেন।

বস্তুত এটি গৌরবোজ্জ্বল মর্যাদাপূর্ণ ও অপূর্ব সম্মানের। এখন মসজিদে নববীর দেয়ালে দেয়ালে তার শিল্প ও কর্ম-কুশলতা দেখা যায়। এভাবে কাজ করে শাফিক-উজ-জামান মহান আল্লাহ ও রাসুল (সা.) এর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চান বলে জানান।

ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৯ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।