ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

হজের সফরে এমন ভুল যেন না হয়

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০১৯
হজের সফরে এমন ভুল যেন না হয় ছবি : প্রতীকী

পবিত্র হজের ফ্লাইট শুরু হচ্ছে আগামীকাল থেকে। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সকাল সোয়া ৭টায় ৪১৯ জন যাত্রী নিয়ে হজের প্রথম ফ্লাইট ঢাকার হজরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবে।

হজ ইসলামের অন্যতম রুকন বা স্তম্ভ। মুসলিম উম্মাহর ঐক্য-সংহতি ও সাম্য-ভ্রাতৃত্বের প্রতীক।

হজে আর্থিক ও কায়িক শ্রমের সমন্বয় রয়েছে। অন্য কোনো ইবাদতে একসঙ্গে এমন সমন্বয় পাওয়া যায় না। প্রতিবছর হজ উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৩০ থেকে ৪০ লাখ মানুষ সৌদি গমন করেন। হজ আদায়ের পবিত্র ও শ্বাশ্বত এই মিছিলে শরিফ হন বাংলাদেশিরাও। তাই হজ সফরের আনুসাঙ্গিক বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজন।

• ভুল করে অনেকে হজে গিয়ে মুসাফিরের নামাজ পড়ে। অথচ মক্কা-মিনা-মদিনা মিলিয়ে কেউ যদি ১৫ দিন বা তার বেশি থাকার নিয়ত করে, তাহলে মাসআলা হলো- সে মুকিম গণ্য হবে। তাই কোনো হাজি এমন করলে, মক্কা-মদিনা, ও মিনা-মুজদালিফা এবং আরাফায় চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজ চার রাকাতই পড়তে হবে। (মুসলিম, হাদিস নং: ৬৮৭)

• মিনায় অবস্থানের সময়সীমা ১২ বা ১৩ তারিখ। এ সময়টা সেখানে থাকতে হয়। এর মধ্যে কোনো দিন যদি শুক্রবার হয়, তাহলে মিনায় জুমার নামাজ পড়তে হবে। (তাতারখানিয়া, পৃষ্ঠা: ৫৫৩)

• হজে গিয়ে অনেক নারী শরীর আবৃত রাখলেও চেহারা খোলা রাখেন। অথচ মাসআলা হলো, চেহারা দেখানো যাবে না; তবে বোরকার নেকাব চেহারার সঙ্গে লাগিয়ে রাখবে না। এর জন্য এমন কিছু ব্যবহার করতে হবে, যাতে করে নেকাব চেহারার সঙ্গে না লেগে থাকে।

• মসজিদুল হারামে নামাজ আদায়ের সওয়াব এক লাখেরও বেশি। তাই দেখা যায়, অনেক নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজেই মসজিদুল হারামে গিয়ে থাকেন। এ কারণে নারীদের যাতায়াত সহজ করতে গিয়ে প্রচুর ভিড় হয়। ফলে কখনো এমনও হয় যে, তারা হাজারো পুরুষের ধাক্কা খাচ্ছে কিংবা ধাক্কা লেগে যাচ্ছে। হাদিসে প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘নারীরা মসজিদে নামাজ পড়ার চেয়ে ঘরে নামাজ পড়া উত্তম। ’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং: ২৬৫৯৮)

ফিকাহবিদরা এ হাদিসের ওপর ভিত্তি করে বলেছেন, কোনো মহিলা হজ-ওমরাহতে এসে ঘরে নামাজ পড়লে এক লাখের চেয়ে বেশি সাওয়াব পাবে।

• হজে গিয়ে এক শ্রেণির হাজি সেলফি আসক্তিতে পুরো মেতে ওঠেন। অনেকে ছবি-ভিডিও করতে গিয়েও অনেক সময় নষ্ট করেন। অথচ এ ধরনের কাজ সম্পূর্ণ অনুচিত।  

• ইহরাম খোলার (ভঙ্গ করার) সময় অনেক পুরুষ দাড়ি মুণ্ডায়। এমন কাজ করে এধরনের লোকেরা ১০০ বার হজ করলেও তাদের হজ কবুল হবে না।

• ‘তালবিয়া’ বা ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক...’ পড়া ব্যক্তিগত আমল। তাই সবাই যার যার ‘তালবিয়া’ পড়বে। অনেকে লিডারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তালবিয়া পড়তে থাকেন। যদিও এভাবে পড়লে কোনো অসুবিধা নেই। তবে নিজেরা তালবিয়া শিখে নেওয়াই শ্রেয়।

•আরাফা ও মুজদালিফা¬—দুই জায়গাতেই অবস্থান করতে হয়। তবে এ দুই জায়গারর মাঝখানে ৫ কিলোমিটার প্রশস্ত একটি ময়দান রয়েছে। ময়দানটিতে অনেক শৌচাগার ও গাছপালা আছে। এসব দেখে অনেক হাজি জায়গাটাকে মুজদালিফা মনে করেন এবং এখানে অবস্থানও করেন। অথচ জায়গাটি আরাফার ও মুজদালিফা—কোনোটার অন্তর্ভুক্ত নয়; বরং এটি ভিন্ন একটা ময়দান। এখানে হজের কোনো আমল-কাজ নেই। মাগরিব- এশা এখানে একসঙ্গে পড়া জায়েজ নেই। রাতে অবস্থান করাও জায়েজ নেই। বাদ ফজর এখানে অবস্থান করলে ‘মুজদালিফায় অবস্থান’ও আদায় হবে না। যারা পায়দল আরাফা থেকে মুজদালিফায় যান, তাদের অনেকে এ ভুলটা করে বসেন। এতে তাদের ওপর নির্ঘাত ‘দম’ ওয়াজিব হয়ে যায়। কিন্তু তারা অজ্ঞতার কারণে ‘দম’ আদায় করে না; ফলে তাদের হজ হয় না।

• কোরবানি ব্যাংকের মাধ্যমে আদায় করা উচিত নয়। কারণ এতে কখনো কখনো হাজি ১০ তারিখে বড় শয়তানের প্রতীকী স্তম্ভে হাজি সাহেবের কংকর মারা হয় না। অন্যদিকে কোরবানি হয়ে যায়। আবার কখনো এমনো হয় যে, কোরবানি সম্পন্ন হওয়ার আগে মাথা মুণ্ডানো হয়ে যায়। আর এ উভয় ভুলের কারণে তামাত্তু ও কিরান হজ আদায়কারীর ওপর দম ওয়াজিব হয়ে যায়। কারণ ১০ তারিখের দিন এই তিনটি কাজে তাদের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি—এক. বড় শয়তানের প্রতীকী স্তম্ভে কংকর মারা। দুই. কোরবানি আদায় করা। তিন. মাথা মুণ্ডানো। (এ জন্য নিজেরা বা বিশ্বস্ত লোক পাঠিয়ে কোরবানির ব্যবস্থা করা জরুরি। )

ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৪ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।