ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

বন্যার্তদের সাহায্য করুন, আল্লাহ বিনিময় দেবেন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৯ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৯
বন্যার্তদের সাহায্য করুন, আল্লাহ বিনিময় দেবেন কষ্ট পৌঁছেছে চরমমাত্রায়। ছবি: সংগৃহীত

নদীর পানি অব্যাহত বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং অনবরত বৃষ্টির কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা-পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতির দিকে। বর্ষণ-প্লাবিত বিভিন্ন জেলার লাখ-লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। তারা বিভিন্ন বাঁধ, আশ্রয় কেন্দ্র, স্কুল ও মসজিদ-মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। বিশুদ্ধ পানির সংকটের পাশাপাশি তাদের খাদ্যসংকটও দেখা দিয়েছে। গবাদি পশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন অনেকে।

দুর্যোগ-দুর্বিপাক মানুষকে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি করে দেয়। তাই ঝড়-বৃষ্টি, বন্যাসহ প্রাকৃতিক সব ধরনের বিপর্যয়ের সময় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো সর্ব শ্রেণি ও পেশার মানুষের অবশ্যকর্তব্য।

নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী বন্যার্তদের সাহায্য-সহযোগিতা খুবই জরুরি।

চারিদিকে টলটলে জল।                                          ঘরবাড়িগুলো যেন দ্বীপ! ছবি: সংগৃহীতআর্তমানবতার সেবায় ইসলামের ভূমিকা সর্বাগ্রে। ইসলাম এক্ষেত্রে জোর তাগিদ ও উৎসাহ দিয়েছে। বিপদগ্রস্তের সাহায্য ও অসহায়ের সহযোগিতা করা ইসলামের মহৎ ও মৌলিক শিক্ষা। মানবতাবোধ, সহমর্মিতা, স্বার্থহীন পরোপকার ও সহানুভূতি ইত্যাদি—ইসলামের বুনিয়াদি শিক্ষা। সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ও মানবজাতির পথপ্রদর্শক প্রিয়নবী (সা.)-কে আল্লাহ তাআলা মানবজাতির করুণাস্বরূপ পাঠিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘আমি আপনাকে সমগ্র সৃষ্টির জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি। ’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ১০৭)

সামান্য খাবারের জন্য হাহাকার লেগে আছে।  ছবি: সংগৃহীতপানিবন্দি অসহায় বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ানো ও তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করা ইসলামের বিধান। সমাজের বিত্তবানরা টাকাপয়সা, খাদ্য-বস্ত্র, পানীয় ও ওষুধ—ইত্যাদি নিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে আসার সময় এখনই। ক্ষতিগ্রস্ত বানভাসি মানুষ অর্ধাহারে-অনাহারে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে। বন্যার্তদের কাছে একেকটি দিন যেন এখন—‘দুর্বিষহ কষ্টের অনন্তকাল’।

চারিদিকে অথৈ পানি।  বুকে জমেছে একরাশ কষ্ট।  ছবি: বাংলানিউজ‘দীনে করো দান’ সওয়াব মিলবে অফুরান
বন্যার্ত অসহায়দের সেবায় সামর্থ্যবান প্রতিটি ব্যক্তির এগিয়ে আসা উচিত। তুলনামূলক বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে সাহায্য করার বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা সর্বোচ্চ প্রতিদান দেবেন। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি বীজের মতো, যা উৎপন্ন করল সাতটি শীষ। প্রতিটি শীষে রয়েছে একশ দানা। আর আল্লাহ যাকে চান তার জন্য বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৬১)

থাকার ঘরে পানি, বাইরেও পানি থৈ থৈ।  ছবি: সংগৃহীতঅসহায়দের সাহায্য করলে সংগ্রাম-জিহাদের নেকি
দরিদ্রক্লিষ্ট বনি আদম ও অসহায় নারীদের সাহায্য করতে প্রিয়নবী (সা.) অনেক বেশি উৎসাহ দিয়েছেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘বিধবা ও অসহায়কে সাহায্যকারী ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর সমতুল্য। ’ তিনি আরও বলেন, এবং সে ওই নামাজ আদায়কারীর মতো যার ক্লান্তি নেই এবং ওই রোজা পালনকারীর মতো, যার রোজায় বিরাম নেই। ’ (বুখারি, হাদিস নং: ৬০০৭)

বানের পানি ভাসিয়ে নিয়েছে অনেক কিছু।  ছবি: সংগৃহীতঅসহায়কে সহযোগিতা করলে বিনিময় দেবেন আল্লাহ
অসহায়, পীড়িত, ক্ষুধার্ত-তৃষ্ণার্ত ও বিপদাক্রান্ত মানুষকে সহযোগিতা করলে আল্লাহ উভয় জগতে প্রতিদান দেবেন। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে মুমিন কোনো মুমিনের ক্ষুধা নিবারণ করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে কেয়ামতের দিন জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। যে মুমিন কোনো মুমিনের তৃষ্ণা দূর করেছে, আল্লাহ তাআলা তাকে কেয়ামতের দিন মোহরাঙ্কৃত জান্নাতি সুধা থেকে পান করাবেন। যে মুমিন কোনো মুমিনকে বস্ত্র দান করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের উন্নতমানের সবুজ কাপড় পরাবেন। (তিরমিজি, হাদিস নং: ২৩৮৬)

কষ্টের শেষ নেই।  ছবি: বাংলানিউজমানবসেবায় ইসলামের তাগিদ-উৎসাহ
মানবসেবা, দুস্থদের সাহায্য ও অসহায়ের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে ইসলামের বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা রয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার শুশ্রুষা করোনি। ’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার রব। আপনি তো বিশ্বজাহানের প্রতিপালক, কীভাবে আমি আপনার শুশ্রুষা করবো? তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, অথচ তুমি তার সেবা করোনি। তুমি কি জান না, যদি তুমি তার শুশ্রুষা করতে তবে তুমি তার কাছেই আমাকে পেতে? হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে খাবার দাওনি। ’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার রব, আপনি তো বিশ্বজাহানের প্রতিপালক, কীভাবে আপনাকে আহার করাবো?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জান না, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে খাবার দাওনি। তুমি কি জান না যে, তুমি যদি তাকে খাবার খাওয়াতে আজ তা পেতে? হে আদম সন্তান, তোমার কাছে আমি পানীয় চেয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে পানীয় দাওনি। ’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার প্রভু, আপনি সমগ্র জগতের প্রতিপালক, কীভাবে আপনাকে পান করাবো?’ তিনি বলবেন, ‘তোমার কাছে আমার অমুক বান্দা পানি চেয়েছিল, কিন্তু তাকে তুমি পান করাওনি। তাকে যদি পান করাতে, তবে নিশ্চয়ই আজ তা পেতে। ’ (মুসলিম, হাদিস নং: ৬৭২১)

‘ছবি না তুলে হামাক শুকনো খাবার দেন বাহে’।  ছবি: বাংলানিউজতাই আসুন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাহাযার্থ্যে কিছু উদ্যোগে শামিল হই। ইসলামের মর্মবাণী অনুসারে মানুষের সাহায্যে তার পাশে দাঁড়াই। যথাসাধ্য সাহায্য-সহযোগিতা করে আক্রান্তদের কষ্ট লাঘব করি। বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা দুনিয়া-আখেরাতে প্রতিদান দেবেন। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২০১৯, জুলাই ২১, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।