অর্থে স্বাবলম্বী ব্যক্তির জন্য কর্তব্য হজ পালন করা। হজ উপেক্ষা করলে ব্যক্তিজীবনের ধ্বংস অনিবার্য।
ইসলাম যে পাঁচটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, সেগুলোর অন্যতম এ হজ। ভিত্তি ছাড়া যেমন সভ্য দুনিয়ার কোনো কিছু নির্মিত হয় না, তেমনি হজ ছাড়া নির্মিত হয় না মুমিন হৃদয়ে ভালোবাসার কাবাঘর। হজ যে ইসলামের খুঁটি, এ কথা বাঙ্ময় হয়েছে রাসুল (সা.)-এর একটি কথায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘ইসলামের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পাঁচটি বিষয়ের ওপর। যথা—১. এই মর্মে সাক্ষ্যদান যে আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই ও মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। ২. যথাযথভাবে নামাজ আদায় করা। ৩. জাকাত প্রদান। ৪. হজ। ৫. রমজান মাসের রোজা পালন। ’ (বুখারি, হাদিস নং: ৮)
হজ পুণ্য ও সফলতার আশিস। অর্জনের ঝুলি সওয়াবে টইটম্বুর করার মহা তিথি। জীবনকে সফলতার সাম্পানে চালানোর শুভক্ষণ। হজের সওয়াবে ভরা এ মৌসুমে রবের দরবারে হাজিরা দিতে পারলে জীবনের উদ্দেশ্য সফল। শুভ্র পোশাকে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে কাবার বুকে চুমো দিয়ে ব্যক্তিজীবনকে করবে সাফল্যমণ্ডিত। পাপকাজ ও অযথা কথনের বাহুল্য থেকে বিরত থাকতে পারলে হাজির জীবন হবে পাপ-পঙ্কিলতাহীন সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুর মতো। প্রভাতে ফোটা প্রথম লাল গোলাপের মতো। বিশুদ্ধ মননের হাজির উপমা দিতে গিয়ে ইসলামের নবী বলেন, ‘যে ব্যক্তি হজ করল ও হজ অবস্থায় কথা ও কাজে পাপ থেকে বিরত রইল, সে হজ শেষে সেদিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে ঘরে ফিরবে, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল। ’ (বুখারি, হাদিস : ১৫২১, মুসলিম, হাদিস : ১৩৫০)
প্রিয়নবীর আরেকটি হাদিসের কথা আরো বাঙ্ময় ও সুস্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘কবুল হজের একমাত্র প্রতিদান জান্নাত। ’ (বুখারি, হাদিস : ১৭৭৩, মুসলিম, হাদিস : ১৩৪৯)
হজ আমাদের উভয় জীবনে দান করে সফলতা। করে মহিমান্বিত। জীবনের জমিনকে করে উর্বর। জীবন উদ্ভিদে বর্ষণ করে রহমতের বারিধারা। আখিরাতের জীবনে রয়েছে যেমন সওয়াবের ভাণ্ডার, তেমনি দুনিয়ার জীবনে রয়েছে অর্থ-বিত্তে বুকটান দিয়ে দাঁড়ানোর হিম্মত লাভের প্রেরণা। দুনিয়ার রিজিকে এনে দেয় সমৃদ্ধি। দূর করে দেয় অভাব-অনটন। হজের প্রতি মানবকে উৎসাহিত করে খোদার পয়গম্বর মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘তোমরা বরাবর হজ ও ওমরাহ করো। হাপর যেমন লোহা, সোনা ও রুপার কলঙ্ক দূর করে ফেলে, হজ ও ওমরাহ তেমনি অভাব ও পাপ মুছে ফেলে। আর কবুল হজের একমাত্র পুরস্কার হলো জান্নাত। ’ তিরমিজি, হাদিস : ৮১০)
হজ মানুষকে শিক্ষা দেয় ভ্রাতৃত্ববন্ধনের। সহমর্মিতা প্রদর্শনের। তৃষিত হৃদয়ের পুষিত স্বপ্ন নিয়ে বান্দা হাজির হয় তার প্রতিপালকের ঘরের সামনে। কালো গিলাফে আচ্ছাদিত জগতের শ্রেষ্ঠ ঘরের সামনে ঝুঁকে যায় তার মস্তক। হৃদয় জায়নামাজ সিঞ্চিত হয় ভালোবাসায়। শুদ্ধতার শহরে শুভ্রতার মেলা বসে। মার্জিত শরীরে সাদা সাদা কাপড়। খোদার প্রেমে উপস্থিত সবার পোশাক এক ও অভিন্ন। তাদের লক্ষ্য রবকে খুশি করা। রেজামন্দি হাসিল করা। শাশ্বত বিশ্বাস, পরিশুদ্ধ বাসনা আর মনের আকুলতা নিয়ে প্রতিদিন হাজির হয় কাবা প্রাঙ্গণে। প্রেমের কোমল দৃষ্টিতে ঘুরে ঘুরে চেয়ে চেয়ে দেখে শুদ্ধ ভালোবাসার পবিত্র ঘরকে। সিজদায় নাক, কপাল উজাড় করে দেয় রবের জমিনে। মোনাজাতে মোনাজাতে প্রার্থনা করে মালিকের সন্তুষ্টির।
হজ ভালোবাসা প্রকাশের সদর দরজা। এখানে আগত সবার পোশাক, ভাষা, উচ্চারণ এক। সবাই সমস্বরে আবেগমিশ্রিত কণ্ঠে হাজিরা দিচ্ছে উপস্থিতির। অভিন্ন ভাষায় ঘোষণা করছে—‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। ’
বান্দার সরল ও বিশুদ্ধ প্রচেষ্টায়, মজনু হয়ে প্রেমের শহরে ঘুরে বেড়ানো ও আল্লাহকে পাওয়ার বাসনায় তীব্র মন দেখে আল্লাহ খুশি হন। তাকে মাফ করে দেন। রহমতের শীতল চাদরে আবৃত করেন। আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী হজব্রত পালন করতে পারলে ব্যক্তি লাভ করে ক্ষমার জীবন। মানুষের কল্যাণকামী নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘তুমি যখন হজ সমাপনকারীর সাক্ষাৎ লাভ করবে, তখন তাকে সালাম দেবে। তার সঙ্গে মুসাফাহ করবে ও তার কাছে পাপ মোচনের দোয়া চাইবে, সে ঘরে প্রবেশের আগে। কারণ সে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে এসেছে। ’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৫৩৭১)
আল্লাহ আমাদের কাবা জিয়ারতের তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক
ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৯
এমএমইউ