কুতুব মসজিদটি আবিষ্কারের সময় কোনো শিলালিপি পাওয়া না যাওয়ায় এর সঠিক নির্মাণকাল সম্পর্কে তেমন ধারণা পাওয়া যায় না। তবে স্থাপত্য রীতি ও আন্যান্য দিক বিবেচনায় প্রত্নতত্ত্ববিদরা ধারণা করেন এটি ১৬শ শতকে সুলতানি আমলে নির্মাণ করা হয়েছে।
মসজিদটির পাশে একটি কবর রয়েছে। কবরটিকে অনেকে কুতুব শাহ-এর বলে ধরণা করেন। কুতুব শাহের নামানুসারেই মসজিদটিকে কুতুব মসজিদ বা কুতুব শাহ মসজিদ বলা হয়। ১৯০৯ সালে তৎকালীন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটিকে সংরক্ষিত হিসেবে নথিভুক্ত করে।
কুতুব মসজিদের ৪টি কোণে ৪টি অষ্টভূজাকৃতির বুরুজ রয়েছে। এগুলো বলয়াকার স্ফীত রেখার মাধ্যমে অলঙ্কৃত। সাধারণত এ ধরনের মসজিদ তিন গম্বুজবিশিষ্ট হয়। যেখানে মধ্যবর্তী গম্বুজের উভয় পাশে একটি করে তুলনামূলক ক্ষুদ্রাকৃতির গম্বুজ থাকে। কিন্তু এ মসজিদের স্থাপত্য-নিদর্শনের বিন্যাস ভিন্ন ধরনের। বৃহদাকৃতির একটি কেন্দ্রীয় গম্বুজের চার কোণে চারটি ক্ষুদ্র গম্বুজ স্থাপিত রয়েছে। ফলে গম্বুজের উল্লিখিত বিন্যাস মসজিদের অভ্যন্তরভাগকে অসম তিনটি অংশে বিভক্ত করেছে। এর মধ্যবর্তী অংশটির পরিমাপ ১৬ ফুট ১৬ ফুট এবং এর দুই পাশে রয়েছে ২ ফুট মার্জিন এলাকা। আর পার্শবর্তী অংশদ্বয়ের পরিমাপ ৮ ফুট ১৬ ফুট।
এছাড়া মসজিদটির বহির্ভাগে উত্তর-দক্ষিণে ৪৫ ফুট লম্বা, আর পূর্ব-পশ্চিমে ২৫ ফুট চওড়া। অভ্যন্তরে প্রায় ৩৬ ফুট লম্বা, আর ১৬ ফুট চওড়া। অর্থাৎ চারদিকের দেয়ালই প্রায় ৫ ফুট করে পুরু।
অষ্টভূজাকৃতির বুরুজের উপর রয়েছে ৪টি মিনার। এছাড়াও মসজিদটিতে রয়েছে মোট ৫টি গম্বুজ। মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণ দিকে লম্বা ও পূর্ব-পশ্চিমে প্রশস্ত। পশ্চিম দেয়াল ব্যতীত বাকি তিনটি দেয়ালেই কৌনাকৃতির খিলানকৃত প্রবেশপথ রয়েছে ৫টি। ৩টি পূর্বে এবং উত্তর ও দক্ষিণে একটি করে। প্রতিটি খিলানে গোলাকার ফুলবিশিষ্ট টেরাকোটার অলঙ্কার রয়েছে। এতে এ অঞ্চলের কারিগরদের দক্ষতা ও রুচিবোধ ফুটে ওঠে।
পূর্ব দেয়ালের কেন্দ্রীয় প্রবেশপথটির উপরিভাগে সাড়ে ২৬ ফুট লম্বা ও এক ফুটের অধিক পরিমাণ চওড়া একটি অলঙ্কারহীন ফাঁপা স্থান রয়েছে। যেখানে লিপিযুক্ত কোনো ফলক ছিল বলে মনে হয়।
সুলতানি আমলের মসজিদের কার্নিশে এবং বাংলার দোচালা ঘরের কার্নিশে যে স্বাভাবিক বক্ররেখা পরিলক্ষিত হয়, এই মসজিদের ক্ষেত্রে তা মাত্রাতিরিক্ত।
মসজিদের অভ্যন্তরীণ পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মেহরাব রয়েছে। এগুলো সর্পিল নকশাবিশিষ্ট অলঙ্করণ দ্বারা মনোরমভাবে সুসজ্জিত। এখানে ব্যবহৃত অর্ধচন্দ্রাকৃতির একটি টেরাকোটার নকশা এ মসজিদের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।
কুতুব মসজিদের বাইরের দেয়ালে বিভিন্ন নকশা করা রয়েছে। মসজিদটির ছাদের কার্নিশ বক্রাকার। তৎকালীন ময়মনসিংহ অঞ্চলে সুলতানি আমলের সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ এটিই বলে ধারণা করা হয়।
কুতুব মসজিদে যেভাবে যাতায়াত
ট্রেনে যাওয়া সবচেয়ে সুবিধাজনক। প্রতিদিন সকাল ৭ টায় এগারসিন্দুর প্রভাতি (বুধবার বিরতি) কিশোরগঞ্জের উদ্দ্যেশ্যে ছাড়ে। জনপ্রতি ভাড়া ১২০ টাকা। এছাড়াও গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া থেকে বিআরটিসি বাসে করে কুলিয়ারচর যাওয়া যায়। ভাড়া ২০০ টাকা করে। ভৈরব হয়ে যেতে চাইলে, ভৈরব নেমে সিএনজিতে করে কুলিয়ারচর যেতে হবে। তখন শেয়ারে ভাড়া নেবে জনপ্রতি ৪০ টাকা বা একটু বেশি হতে পারে।
কুলিয়ারচর নেমে একটা রিক্সা নিয়ে লঞ্চঘাট। এখান থেকে প্রতিদিন সকাল ৬টা, ৮টা, ৯টা, ১১টা এমনি করে ৩টা পর্যন্ত লঞ্চ ছেড়ে যায় অষ্টগ্রাম, ভাড়া ১০০ টাকা করে। অষ্টগ্রাম পৌঁছতে সাড়ে ৩ ঘন্টা সময় লাগে।
ফিরতি পথে বাজিতপুর হয়ে আসা যায়। বিআরটিসির এসি বাস পাওয়া যায় সারাদিন। ভাড়া ১৮০/২০০ টাকা।
ইসলাম বিভাগে লিখতে পারেন আপনিও। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৯
এমএমইউ