ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

যেসব মানুষের গিবত করা যায়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৯
যেসব মানুষের গিবত করা যায় ছবি : সংগৃহীত

প্রশ্ন: কোনো ব্যক্তি যদি এমন হয় যে ধর্মীয় ক্ষেত্রে মানুষ তাকে অনুসরণ করে, অথচ তার চিন্তাচেতনার মধ্যে ভ্রান্তি আছে, এমন ব্যক্তির অনিষ্টতা ও ভ্রান্তি বিষয়ে তুলে ধরা কি গিবত হবে?

উত্তর: কোনো ব্যক্তি যদি ধর্মীয় ক্ষেত্রে মানুষের কাছে অনুসরণীয় ব্যক্তি হয়, আর তার দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাচেতনা ভ্রান্ত হয়, তাহলে মানুষের সামনে তার ভ্রান্ত চিন্তা তুলে ধরা যাবে, যাতে মানুষ ওই ব্যক্তির বিভ্রান্তিপূর্ণ চিন্তাচেতনার শিকার হয়ে পথভ্রষ্ট না হয়। এটা শরিয়তের দৃষ্টিতে গিবত হবে না।

বরং মানুষের দ্বিনের হেফাজতের জন্য ভারসাম্য বজায় রেখে ঝগড়া-বিবাদ থেকে বেঁচে থেকে, পরিবেশ-পরিস্থিতি ও সর্বসাধারণের কল্যাণের প্রতি লক্ষ করে সেই ব্যক্তির বিভ্রান্তিমূলক চিন্তাধারা সম্পর্কে আলোচনা করা এক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় প্রয়োজন।

ইমাম নববী (রহ.) ‘রিয়াজুস সালেহিন’ কিতাবে এবং ইমাম গাজ্জালি (রহ.) ‘ইহইয়া’ কিতাবে লিখেছেন, ধর্মীয় উদ্দেশ্যে একজন মৃত বা জীবিত ব্যক্তির গিবত করা বৈধ, বিশেষত যখন এ ছাড়া বিকল্প কোনো পথ থাকে না। আর ছয় স্থানে এই বৈধতা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চতুর্থ নম্বর হলো, কোনো ব্যক্তির অনিষ্ট থেকে মুসলমানদের হেফাজত করা এবং তাদের নসিহত করা। আর পঞ্চম নম্বর হলো, যদি সেই ব্যক্তি নিজেই নিজের বিদআত প্রকাশ করে, তাহলে শুধু ততটুকুই মানুষের সামনে বলা যাবে, যতটুকু ওই ব্যক্তি প্রকাশ করেছে। এর বেশি তার কোনো দোষত্রুটি নিয়ে আলোচনা করবে না। এ ছাড়া এ বিষয়ে প্রমাণ রয়েছে, মাওসুয়াহ ফিকহিয়া কুয়েতিয়্যাহর ৩১ নম্বর খণ্ডের ৩৩৫ ও ৩৩৬ পৃষ্ঠায়। আদুররুল মুখতারেও এ সম্পর্কিত প্রমাণ রয়েছে। (খণ্ড : ৯, পৃষ্ঠা-৫৮৬ ও ৫৮৬, মাকতাবায়ে জাকারিয়া, দেওবন্দ)

ফকিহ আবুল লাইস সমরকন্দি ‘তাম্বিহুল গাফিলিন’ কিতাবে লিখেছেন, গিবত চার ধরনের। এর মধ্যে একটি বৈধ মুবাহ তথা শরিয়ত কর্তৃক অনুমোদিত। আর তা হলো, যে ব্যক্তি নিজের ভ্রান্ত বিশ্বাসের কথা প্রকাশ্যে বলে অথবা বিদআতের সঙ্গে জড়িত। সুতরাং যদি ফাসেকের ব্যাপারে মানুষকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে কিছু বলে, তা গিবত তো হবেই না, বরং বক্তব্যদাতাকে বিশেষ সম্মান দান করবে। [ফতোয়া দেওয়ার তারিখ : ৭ এপ্রিল ২০১৯] (সংক্ষেপিত)

যে ছয়টি কারণে গিবত করা জায়েজ
এক. জুলুম থেকে নিজে বাঁচতে, অন্যকে বাঁচাতে জালিমের ব্যাপারে এমন ব্যক্তির কাছে গিবত করতে পারবে, যে একে প্রতিহত করতে পারবে।

দুই. খারাপ কাজ বন্ধ করার জন্য সাহায্য চাইতে এমন ব্যক্তির কাছে গিবত করতে পারবে, যে তা বন্ধ করার ক্ষমতা রাখে।

তিন. কোনো বিষয় সম্পর্কে ইসলামী বিধান জানতে গিবত করে মূল বিষয় উপস্থাপন করা জায়েজ আছে। যেমন—এ কথা বলা যে অমুক ব্যক্তি আমাকে আঘাত করেছে, আমার জন্য কি তাকে আঘাত করা জায়েজ? ইত্যাদি।

চার. সাধারণ মুসলমানদের ধোঁকা ও প্রতারণা থেকে বাঁচাতে গিবত করা জায়েজ। যেমন—সাক্ষ্য সম্পর্কে, হাদিস ও ইতিহাস বর্ণনাকারী সম্পর্কে, লেখক, বক্তা প্রমুখ সম্পর্কে জনসমক্ষে বলা বৈধ, যাতে মানুষ তার ধোঁকা ও মিথ্যাচার থেকে বাঁচতে পারে।

পাঁচ. প্রকাশ্যে যদি কেউ গর্হিত কাজ করে, তাহলে তার অপকর্ম এমন ব্যক্তির কাছে বর্ণনা করা যায়, যারা এর দ্বারা বিভ্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচতে পারে। যেমন—কেউ প্রকাশ্যে মদ খায়, তাহলে মানুষের সামনে তার সম্পর্কে বলা জায়েজ। যেন এমন খারাপ কাজ করতে ভবিষ্যতে কেউ সাহস না করে।

ছয়. কারো পরিচয় প্রকাশ করতে তার গিবত করা যায়, যদি সে এই নামে প্রসিদ্ধ হয়। যেমন—কেউ কানা। তার পরিচয় দেওয়া দরকার। কিন্তু কানা বললেই সবাই চিনে ফেলে। তখন কানা বলা বাহ্যিক দৃষ্টিতে গিবত হলেও এটা বলা বৈধ। এতে গিবতের গুনাহ হবে না। (তাফসিরে রুহুল মাআনি : ১৪/২৪২, সুরা : হুজরাত, আয়াত : ১২)

সৌজন্যে: দৈনিক কালের কণ্ঠ

ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা ও প্রশ্ন পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।