ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

মানবতার কল্যাণ কামনায় শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমা

মো. রাজীব সরকার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২০
মানবতার কল্যাণ কামনায় শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমা

গাজীপুর: দুই হাত তুলে আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফ, দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত, মুসলিম উম্মাহর শান্তি-ঐক্য, হেদায়েত, হেফাজত, রহমত, মাগফিরাত, নাজাত, দেশ ও বিশ্ব মানবতার কল্যাণ কামনায় আখেরি মোনাজাতে শেষ হলো এবারের বিশ্ব ইজতেমা।

এ সময় 'আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন' ধ্বনিতে মধ্যাহ্নের আকাশ-বাতাস মুখরিত করে মহামহিম ও দয়াময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি লাভের আশায় লাখো মুসল্লি আকুতি জানান। অনেকই কেঁদে কেঁদে দুই চোখের পানিতে বুক ভাসান।

প্রথম ও শেষ পর্বের আখেরি মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে শেষ হলো ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমা।

রোববার (১৯ জানুয়ারি) বেলা ১১টা ৫০মিনিটের দিকে শুরু হয় আখেরি মোনাজাত। এবার ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন ভারতের নিজামুদ্দিনের মাওলানা জামশেদ। এ মোনাজাত চলে প্রায় ১৭ মিনিট।

সকাল থেকে হেদায়েতি বয়ানের পর লাখো মুসল্লির প্রতীক্ষার অবসান ঘটে জনসমুদ্রে হঠাৎ নেমে আসে নীরবতা। সেবার প্রাণান্তকর চেষ্টা ছিল দেশ বিদেশের লাখো মুসল্লির সঙ্গে মোনাজাতে শরিক হয়ে নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা।

আরও পড়ুন: আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে লাখো মুসল্লি তুরাগতীরে

বিশ্ব ইজতেমায় গভীর আবেগপূর্ণ আখেরি মোনাজাতে গোটা দুনিয়ায় পথভ্রষ্ট মুসলমানের সঠিক পথের দিশা এবং তাবলীগের কাজে সবাইকে নিয়োজিত হওয়ার তওফিক কামনা করে মহান আল্লাহ রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত প্রার্থনা করা হয়। ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণ কামনায় দেশ বিদেশের লাখো মুসলিম স্রষ্টার শাহি দরবারে কান্নাকাটি করেন, চোখের অশ্রু ঝরান। মহামহিম ও দয়াময় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে আকুতি ব্যক্ত করেন ধনী-গরিব, নেতা-কর্মী, শ্রমিক-মালিকসহ সব পেশার বিভিন্ন বয়সের সর্বস্তরের লাখো মুসল্লি।  কাঙ্খিত আবেগঘন অযুত কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে রাহমানুর রাহিম আল্লাহর মহত্ম ও শ্রেষ্ঠত্ব।  

মোনাজাতে অংশ নিতে রোববার (১৯ জানুয়ারি) ভোর থেকে চারদিক থেকে মুসল্লিরা হেঁটেই ইজতেমাস্থলে পৌঁছেন। সকাল ৯টার আগেই ইজতেমা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে মুসল্লিরা মাঠের আশে-পাশের অলি-গলি, রাস্তা, পার্শ্ববর্তী বাসা-বাড়ি-কলকারখানা-অফিস-দোকানের ছাদে, যানবাহনের ছাদে ও তুরাগ নদীতে নৌকায় অবস্থান নেন। ইজতেমাস্থলে পৌঁছাতে না পেরে মানুষজন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেন।

আখেরি মোনাজাতের জন্য রোববার আশে-পাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানাসহ বিভিন্ন অফিস-আদালতে ছিল ছুটি। নানা বয়সী ও পেশার মানুষ এমনকি মহিলারাও ভিড় ঠেলে মোনাজাতে অংশ নিতে ইজতেমা ময়দান এলাকায় আসেন।

আরও পড়ুনবিশ্ব ইজতেমা শেষ পর্ব: আখেরি মোনাজাত শুরু

শেষ দিনে বয়ান করেন যারা:
রোববার (১৯ জানুয়ারি) বাদ ফজর উর্দূতে বয়ান করেন ভারতের নিজামুদ্দিনে মুরুব্বি ইকবাল হাফিজ। পরে তা বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা ওয়াসিফুল ইসলাম। পরে হেদায়েতি বয়ান করেন নিজামুদ্দিনের মাওলানা জামশেদ। তা বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা আশরাফ আলী।

বিদেশি মেহমান:
ভারত, পাকিস্তান, ইরান, ইরাক, সৌদিআরব, এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ ৫৫টি দেশের ২ হাজার ৪১০ জন মুসল্লি বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশগ্রহণ করেন। এদের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক বিদেশি মেহমান বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেন।

মোনাজাতে নারীদের অংশগ্রহণ:
আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে শতশত নারী মুসল্লি ইজতেমা ময়দানের আশেপাশে, বিভিন্ন মিলকারখানা, বাসা-বাড়িতে এবং বিভিন্ন দালানের ছাদে ও ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে বসে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন।

ইজতেমায় ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প:
এবারের বিশ্বইজতেমায় আগত মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কাজ করছে। স্বেচ্ছাসেবী, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করেছে। মন্নুনগর এলাকায় হামদর্দ ফ্রি-মেডিক্যাল ক্যাম্প ছাড়াও গাজীপুর সিটি করপোরেশন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ছাড়াও টঙ্গী ওষুধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি ময়দানের মুসুল্লিদের ফ্রি চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছেন।

গত বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বাদ মাগরিব আম বয়ানে শুরু হয় বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এরপর শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বাদ ফজর আম বয়ানে এর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পরে ১২ জানুয়ারি (রোববার) আখেরি মোনাজাতে শেষ হয় প্রথম পর্ব। ফের ১৬ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) বিকেলে প্রাক বয়ানে শুরু হয় বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বাদ ফজর আম বয়ানে একইভাবে শুরু হয় দ্বিতীয় পর্ব। রোববার (১৯ জানুয়ারি) আখেরি মোনাজাতে শেষ হলো এবারের বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা। এবার তিনদিন ব্যাপী ইজতেমার প্রথম পর্ব পরিচালনা করেন মাওলানা জোবায়ের অনুসারি মুরুব্বিরা এবং দ্বিতীয় পর্ব পরিচালনা করেন মাওলানা সাদ অনুসারী মুরুব্বিরা।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন জানান, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে মুসল্লিদের নিরাপত্তায় ৯ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। প্রথম পর্ব থেকে শুরু করে দ্বিতীয় পর্বে আখেরি মোনাজাত শেষে মুসল্লিরা ময়দানে থাকা পর্যন্ত পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২০
আরএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।