ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

অন্যায়ভাবে পশু-পাখি হত্যা করা যাবে না

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৪ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২০
অন্যায়ভাবে পশু-পাখি হত্যা করা যাবে না

মহান স্রষ্টা আল্লাহ তাআলা মানুষ সৃষ্টির পাশাপাশি মানবজাতির প্রয়োজন পূরণের যাবতীয় ব্যবস্থা রেখেছেন। এবং তাদের কল্যাণে অসংখ্য জীবজন্তু সৃষ্টি করেছেন। মানুষের ন্যায় তাদেরও রয়েছে এ ভূপৃষ্ঠে সরব বসবাস। তারাও আল্লাহ তাআলার সুবিশাল সৃষ্ট পরিবারের সদস্য। এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা প্রাণী সম্পর্কে বলেন, ‘ভূপৃষ্ঠে বিচরণশীল প্রত্যেকটি জীব এবং (বায়ুমণ্ডলে) নিজ ডানার সাহায্যে উড়ন্ত প্রত্যেকটি পাখি তোমাদের মতোই একেকটি জাতি।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৩৮)।

ইসলাম জীবজন্তুর ওপর মানুষের অধিকার নিশ্চিত করেছে। প্রাণীদের সুষম খাদ্য গ্রহণ, সুস্থ-সুন্দর জীবন যাপনে তাদের প্রতি স্নেহশীল আচরণ সৃষ্টির সেরা মানবজাতি হিসেবে আমাদের কর্তব্যও বটে।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আহার করো ও তোমাদের গবাদি পশু চরাও। অবশ্যই এতে বহু নিদর্শন আছে বিবেকসম্পন্নদের জন্য। ’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ৫৪) অর্থাৎ বিভিন্ন প্রকার উৎপন্ন ফল-ফসলের মধ্যে কিছু মানুষের পানাহার ও বিলাস-ভোগের জন্য, আর কিছু জীবজন্তুদের জন্য। কিন্তু সমাজে এমন কিছু নিষ্ঠুর মানুষ আছে, যারা নির্বোধ প্রাণীদের প্রতি চরম অবজ্ঞা-অবহেলা প্রদর্শন করে। কারণে-অকারণে তাদের কষ্ট দেওয়া কিংবা হত্যা করাকে খুবই সাধারণ বিষয় মনে করে।

সম্প্রতি ভারত ও বাংলাদেশে প্রাণী হত্যার দুটি ঘটনা মানবতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। প্রথমটি ঘটেছে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য কেরালায়। একটি গর্ভবতী হাতি খাবারের সন্ধানে জঙ্গল থেকে লোকালয়ে আসার কারণে নির্দয় কিছু মানুষ হত্যার উদ্দেশ্যে বাজিভর্তি আনারস খেতে দেয় সেটিকে। খাওয়ার পরপরই মুখে বিস্ফোরণ ঘটে। ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় হাতিটির মুখ ও জিব। অসহ্য যন্ত্রণা এবং তৃষ্ণা ও খিদে নিয়ে সারা গ্রাম পানির খোঁজে হেঁটে বেড়ায় হাতিটি। খুঁজতে খুঁজতে পৌঁছে যায় ভেলিয়ার নদী পর্যন্ত। পানি পেয়েই সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে পড়ে নদীর মাঝে। সেখানেই ঘটে তার মর্মান্তিক মৃত্যু। এমন নিষ্ঠুর প্রাণী হত্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক নিন্দা ও সমালোচনার সৃষ্টি করেছে।

দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটেছে ফেনীর সোনাগাজীতে। গভীর রাতে এক নিরীহ কৃষকের একটি অন্তঃসত্ত্বা গাভি চুরি করে চামড়াযুক্ত গাভির মাথা গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। যা অত্যন্ত নির্মম ও ন্যক্কারজনক দৃশ্য। নৃশংস এ প্রাণী হত্যার বিষয়টিও গণমাধ্যমে সচিত্র প্রকাশ পেয়েছে।

অথচ ইসলামে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র প্রাণীকে অযথা কষ্ট দেওয়া, আটকে রাখা এবং নিরীহভাবে হত্যা করাকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্যায়ভাবে প্রাণী হত্যাকারীর শাস্তির কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি চড়ুই বা তার চাইতে ছোট কোনো প্রাণীকে অযথা হত্যা করে, তাকে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। তখন জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! তার অধিকার কী? তিনি বলেন, তার অধিকার হলো তাকে যথানিয়মে জবেহ করে ভক্ষণ করা এবং তার মাথা কেটে নিক্ষেপ না করা। ’ (নাসায়ি, হাদিস : ৪৩৪৯) এর বিপরীতে যারা প্রাণীদের যথাযথ যত্ন নেবে এবং সেবা করবে, তাদের জন্য রয়েছে গুনাহ মাফের ঘোষণা।

একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবাদের এসংক্রান্ত একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন এভাবে, ‘একবার এক লোক রাস্তায় চলতে চলতে পিপাসায় কাতর হয়ে পড়ল। সে একটি কূপ দেখতে পেয়ে তাতে নেমে পানি পান করল। কূপ থেকে উঠে সে দেখল, একটি কুকুর হাঁপাচ্ছে এবং পিপাসায় কাতর হয়ে কাদামাটি চাটছে। সে ভাবল, আমার যেরূপ পিপাসা পেয়েছিল কুকুরটিরও অনুরূপ পিপাসা পেয়েছে। সে আবার কূপের মধ্যে নামল এবং পায়ের মোজায় পানি ভরে তা মুখে কামড়ে ধরে উঠে এসে কুকুরটিকে পানি পান করাল। আল্লাহ তার এ কাজে খুশি হয়ে তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দিলেন। সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এসব প্রাণীর সেবা করলেও আমাদের সওয়াব দেওয়া হবে? তিনি বললেন, প্রতিটি জীবিত প্রাণীর সেবার জন্য সওয়াব আছে। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫৫০)

আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রাণীদের প্রতি যথাযথ যত্নশীল হওয়ার তাওফিক দান করুন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩২ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২০
ইসলাম ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।