সন্তানের জন্য সবচেয়ে আপন হলো মাতা-পিতা। তদ্রুপ মা-বাবার জন্য সবচেয়ে আপন হলো সন্তান।
একত্ববাদের বাণী শোনানো: সন্তান জন্মের পর প্রথম সুন্নত কাজ হলো ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দেওয়া। এর ফলে সন্তানের কানে সর্বপ্রথম একত্ববাদের বাণী পৌঁছে। আবু রাফে (রা.) বলেন, আমি মহানবী (সা.)-কে দেখেছি, ফাতিমা (রা.)-এর গর্ভে হাসান (রা.) জন্মগ্রহণ করলে তিনি তাঁর কানে নামাজের আজানের মতো আজান দিয়েছেন (তিরমিজি, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৮৩)
মহানবী (সা.) বলেন, যখন তোমাদের সন্তান কথা বলতে শিখে তখন তাদের কালেমা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ শিক্ষা দাও। (বায়হাকি)
অর্থবহ নাম রাখা: মানুষের ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটে নামের মাধ্যমে। দুনিয়ার এ নামেই পরকালে তাকে ডাকা হবে। এ নামের প্রভাব পড়ে বংশের মধ্যে। ফলে মা-বাবার কর্তব্য হলো তার সন্তানের একটি অর্থবহ নাম রাখা। মহানবী (সা.) অর্থবহ নয় এমন অনেক নাম পরিবর্তন করেছেন। যেমন—আব্দুল ওজ্জা নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন আবদুল্লাহ, আসিয়া নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন জামিলা। বুররা নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন জয়নব।
আকিকা করা: শিশুর জন্মের সপ্তম দিন আকিকা করা সুন্নত। মহানবী (সা.) বলেন, প্রতিটি শিশু তার আকিকার সঙ্গে বন্ধক থাকে। সুতরাং তার জন্মের সপ্তম দিন তার পক্ষ থেকে পশু জবেহ করবে, মাথার চুল মুণ্ডন করবে ও নাম রাখবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ছেলের জন্য দু’টি ছাগল এবং মেয়ের জন্য একটি ছাগল আকিকা করবে (বায়হাকি)।
খতনা করানো: মা-বাবার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হক হলো পুত্রসন্তানের খতনার ব্যবস্থা করা। এটি সুন্নতে ইবরাহিমি। ইবরাহিম (আ.) বৃদ্ধ বয়সে নিজের খতনা নিজে করেছেন। মহানবী (সা.) বলেছেন, মানবীয় স্বভাবসম্মত কাজ পাঁচটি। তন্মধ্যে একটি হলো খতনা।
যথাযথ প্রতিপালন: সন্তানকে যথাযথ প্রতিপালন করা মা-বাবার অপরিহার্য কর্তব্য। সন্তানের জীবনের নিরাপত্তা, শিক্ষা, চিকিৎসা, রোগমুক্ত রাখা, স্বাস্থ্যবান হিসেবে গড়ে তোলা এবং জীবনের উন্নতি ও বিকাশকল্পে যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালানো মা-বাবার কর্তব্য। তার পুষ্টিকর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানিসহ প্রয়োজনীয় সব কিছুর ব্যবস্থা করা আবশ্যক। মহানবী (সা.) হাসান-হোসাইনকে (রা.) চুমু দিতেন। এক গ্রাম্য ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলেন, আপনারা কি শিশুদের চুমু দেন, আমরা তো চুমু দিই না। মহানবী (সা.) তার কথা শুনে বলেন, যদি আল্লাহ তোমাদের অন্তর থেকে দয়া-মায়া উঠিয়ে নেন, তাহলে আমার কী করার আছে! (বুখারি ও মুসলিম)
দ্বীনি শিক্ষা দান: মা-বাবার প্রধান দায়িত্ব হলো স্বীয় সন্তানকে দ্বীনি শিক্ষা দান করা। মহানবী (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর দ্বীনি জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। (ইবনে মাজাহ, বায়হাকি, মিশকাত, পৃষ্ঠা ৩৪)
শিষ্টাচার শিক্ষা দান: সন্তানকে নম্রতা, ভদ্রতা ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়া মা-বাবার প্রধান দায়িত্ব। মহানবী (সা.) বলেছেন, বাবা স্বীয় সন্তানকে শিষ্টাচারের চেয়ে উত্তম কিছু শিক্ষা দিতে পারে না। ’ (তিরমিজি, মিশকাত, পৃষ্ঠা ৪২৩)
বড়দের শ্রদ্ধা ও ছোটদের স্নেহ করার প্রশিক্ষণ দিতে হবে মা-বাবাকেই। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ছোটদের স্নেহ করে না এবং বড়দের সম্মান করেন না, সে আমার প্রকৃত উম্মত নয়। ’ (তিরমিজি, মিশকাত, পৃষ্ঠা ৪২৩)
ইবাদতে অভ্যস্ত করা: মা-বাবার অন্যতম দায়িত্ব হলো সন্তানকে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নামাজ, রোজা, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল ইত্যাদি ইবাদতে অভ্যস্ত করা। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের সন্তানের বয়স সাত বছর হয় তখন নামাজ পড়ার তাগিদ দাও এবং যখন ১০ বছর বয়সে উপনীত হয় তখন নামাজ পড়ার জন্য শাসন করো। আর তখন তাদের বিছানা পৃথক করে দাও। ’ (আবু দাউদ, মিশকাত পৃষ্ঠা ৫৮)
সন্তানের জন্য দোয়া: সন্তানকে আদব-কায়দা ও সুশিক্ষা দেওয়াই যথেষ্ট নয়, তাদের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে দোয়াও করতে হবে। অনুরূপ সন্তান লাভের জন্য দোয়া করতে হবে। জাকারিয়া (আ.) এভাবে দোয়া করেছেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আপনার পক্ষ থেকে আমাকে নেক সন্তান দান করুন, অবশ্যই আপনি দোয়া শ্রবণকারী। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩৮)
বিয়ের ব্যবস্থা করা: সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হলে তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করা মা-বাবার অন্যতম দায়িত্ব। মহানবী (সা.) তিনটি কাজ দ্রুত করতে বলেছেন—১. ওয়াক্ত হলে নামাজ পড়া, ২. ছেলে-মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হলে বিয়ের ব্যবস্থা করা, ৩. জানাজা উপস্থিত হলে জানাজা পড়া। (তিরমিজি ও মিশকাত)
মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।
লেখক: প্রধান ফকিহ, আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০২০