খুলনা: দীর্ঘ প্রতীক্ষিত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের উদ্বোধন করা হয়েছে।
শুক্রবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান মসজিদের উদ্বোধন ফলক উন্মোচন করেন।
পরে জুমার নামাজ শুরু হওয়ার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। অনেক বিলম্ব ও জটিলতা অতিক্রম করে মসজিদে নামাজ উপযোযোগী পরিবেশ সৃষ্টি এবং আজ প্রথম জুমার নামাজ আদায়ের মাধ্যমে নিয়মিত ওয়াক্তিয়া নামাজ আদায় সম্ভব হওয়ায় মহান আল্লাহপাকের কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন।
তিনি এ মসজিদ নির্মাণের দীর্ঘ প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে তার একান্ত আগ্রহ, ব্যক্তিগত এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রচেষ্টার কথাও স্মরণ করেন। উপাচার্য বিশেষ করে একনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশোধিত প্রকল্পের আওতায় এ মসজিদের জন্য প্রণীত উপ-প্রকল্পটিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দেওয়ায় তাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান।
এছাড়া এ প্রকল্পটি অনুমোদনের সঙ্গে বিভিন্ন স্তরে সম্পৃক্ত অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, সচিবরা, ইউজিসিসহ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, সত্যিই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আজ একটি আনন্দের দিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও আশপাশের ছাত্রদের বাইরেও শতশত মুসল্লি মসজিদে জুমার নামাজ আদায়ে আসার জন্য তাদের তিনি ধন্যবাদ জানান।
উপাচার্য বলেন, মসজিদ আল্লাহর ঘর, ইবাদতের জায়গা। এখানে সবাই নামাজ আদায় করতে পারবেন। মসজিদে এসে মুসল্লিরা যাতে সুন্দর পরিবেশে নামাজ আদায় করতে পারেন এবং তাদের অন্তরে প্রশান্তি পায়, মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের সুযোগ হয়, নিজেদের ভুল-ত্রুটির মাগফিরাত কামনার সঙ্গে সঙ্গে ন্যায়, সত্য ও কল্যাণের পথে চলা যায় সেদিকে আলোকপাত করেন। তিনি মসজিদের একপাশে পর্দার সঙ্গে যাতে মহিলারা নামাজ আদায় করতে পারেন সে ব্যবস্থা রাখার প্রতি মসজিদ কমিটিকে নির্দেশনা দেন এবং মসজিদসহ আশপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ওপরও বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
উপাচার্যের শুভেচ্ছা বক্তব্যের আগে বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক খান গোলাম কুদ্দুস, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম, মসজিদের দ্বিতীয়পর্বের চূড়ান্ত নকশা প্রণয়নকারী টিমের প্রধান স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক শেখ মো. মারুফ হোসেন সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। পরে মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মওলানা মুফতি আব্দুল কুদ্দুস বয়ানের পর এ মসজিদের প্রথম জুমার নামাজে ইমামতি করেন।
নামাজ শেষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, দেশ-জাতি, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করে দোয়া করা হয়। দোয়ার আগে পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মো. মোস্তাকিম বিল্লাহ।
এর আগে বেলা সাড়ে ১২টায় এ মসজিদের প্রথম আজান দেন মসজিদের খাদেম হাফেজ মো. ওয়াহিদুজ্জামান।
নামাজ ও বয়ায়নের আগেই মুসল্লিতে পূর্ণ হয়ে যায় মসজিদ। প্রায় দু’হাজার মুসল্লি প্রথম এ জুমার নামাজে শরিক হন। নামাজ ও দোয়ার পর বহু সংখ্যক মুসল্লি উপাচার্যের সঙ্গে কুশল বিনিময়কালে দৃষ্টিনন্দন ও সুপরিসর এ মসজিদ নির্মাণের একান্ত প্রচেষ্টার জন্য তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে তার জন্য দোয়া করেন।
১৪৫০০ বর্গফুট আয়তনের একতলার এ মসজিদটি এক গম্বুজ বিশিষ্ট। এ গম্বুজটি খুলনাঞ্চলের সর্ববৃহৎ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এম আবদুল কাদির ভূঁইয়া ২০০৩ সালে এ মসজিদটির নির্মাণের উদ্যোগ নেন। স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের তৎকালীন শিক্ষক মুহাম্মদ আলী নকী মসজিদটির প্রাথমিক নকশা প্রণয়ন করেন। তবে মসজিদের প্রাথমিক ভিত্তির কাজ শুরুর পর দীর্ঘদিন আর এর নির্মাণ কাজ এগোয়নি। ২০১৪ সালে বর্তমান উপাচার্য মসজিদের নির্মাণ কাজ পুনরায় শুরুর এবং তা শেষ করার নিরন্ত উদ্যোগ নেন। এ সময় মসজিদটির নকশার কিছুটা পরিবর্তন সাধন করে পূর্ণাঙ্গ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২০
এমআরএম/ওএইচ/