ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে ‘বাঘার শাহী মসজিদ’

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২০
সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে ‘বাঘার শাহী মসজিদ’ বাঘা শাহী মসজিদ, ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: মুঘল সাম্রাজ্যের এক অন্যতম নিদর্শন রাজশাহীর বাঘা শাহী মসজিদ। শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে বাঘা উপজেলা সদরে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক মসজিদ।

১৫২৩-১৫২৪ সালে (৯৩০ হিজরি) হুসেইন শাহী বংশের প্রতিষ্ঠাতা আলাউদ্দিন শাহর ছেলে সুলতান নাসির উদ্দিন নুসরত শাহ মসজিদটি নির্মাণ করেন।  

সংস্কারের অভাবে মসজিদটি বর্তমানে জরাজীর্ণ। স্থাপনার বিভিন্ন অংশ খসে পড়তে শুরু করেছে। অথচ প্রাচীন ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এ স্থাপনা সংরক্ষণে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই।

২৫৬ বিঘা জমির ওপর অবস্থিত মসজিদটি। সমভূমি থেকে ৮-১০ ফুট উঁচু করে মসজিদের আঙিনা তৈরি করা। তবে এর উত্তর পাশের ফটকের ওপরের স্তম্ভ ও কারুকাজ ধ্বংসপ্রাপ্ত। মসজিদটিতে ১০টি গম্বুজ আছে। আর ভেতরে রয়েছে ছয়টি স্তম্ভ। রয়েছে কারুকার্যখচিত ৪টি মেহরাব। মসজিদের দৈর্ঘ্য ৭৫ ফুট, প্রস্থ ৪২ ফুট, উচ্চতা ২৪ ফুট ৬ ইঞ্চি।  

মাঝখানের দরজার ওপর ফারসি ভাষায় লেখা একটি শিলালিপি রয়েছে। মসজিদটির গাঁথুনি চুন-সুরকি দিয়ে। মসজিদের রয়েছে পাঁচটি প্রবেশদ্বার। চারদিক থেকে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এবং প্রাচীরের দুই দিকে দু’টি প্রবেশদ্বার রয়েছে। মসজিদের ভেতরে-বাইরে সর্বত্রই টেরাকোটার নকশা।  

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাঘা শাহী মসজিদটি অনবদ্য পোড়ামাটির অলঙ্করণের জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তবে অনেক অলঙ্করণ এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেলেও মসজিদের ভেতরে ও বাইরে এখনো তা বেশি কিছু বিদ্যমান।  

ইটের তৈরি বাঘা শাহী মসজিদটি বর্তমানে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে একটি সংরক্ষিত ইমারত। এর কাঠামো আয়তাকার। এটির বাইরের দিকের পরিমাপ দৈর্ঘ্যে প্রায় ২৩.১৬ মিটার এবং প্রস্থে ১২.৮০ মিটার।  

মসজিদের সামনে একটি বিশাল দিঘি রয়েছে। দিঘিটিও একটি দর্শনীয় স্থান। এছাড়া বাঘা মসজিদের পাশেই রয়েছে একটি মাজার। মসজিদের উত্তর পাশেই রয়েছে হজরত শাহ্ দৌলা ও তার পাঁচ সঙ্গীর মাজার। ১৯৭২ সালে বাঘা মসজিদের পশ্চিম-দক্ষিণ পাশে তৈরি হয়েছে শাহ্ দৌলার নামে শাহ্ দৌলা ডিগ্রি কলেজ।

নাসির উদ্দীন নুসরত শাহ জনকল্যাণের জন্য মসজিদের সামনেই একটি দিঘি খনন করেন। দিঘিটি ৫২ বিঘা জমির ওপর রয়েছে। দিঘির চার পাশে রয়েছে সারি সারি নারিকেল গাছ। দিঘিটির চারটি বাঁধানো পাড় নির্মাণ করা হয়েছে।  

মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে জহর খাকী পীরের মাজার। মূল মাজারের উত্তর পাশে রয়েছে তার কবর। মসজিদ সংলগ্ন মাটির নিচ থেকে মহল পুকুর আবিষ্কৃত হয়। ১৯৯৭ সালে মাজারের পশ্চিম পাশে খননকাজের সময় ৩০ ফুট বাই ২০ ফুট আয়তনের একটি বাঁধানো মহল পুকুরের সন্ধান মেলে। এ পুকুরটি একটি সুড়ঙ্গপথ দিয়ে অন্দরমহলের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তিন দিক থেকে বাঁধানো সিঁড়ির ভেতরে নেমে গেছে।  

ঐতিহাসিক এই মসজিদের ভেতরে ও বাইরে রয়েছে প্রচুর পোড়ামাটির ফলক। এ মসজিদসংলগ্ন এলাকায় প্রতি বছর ঈদুল ফিতরের দিন থেকে তিনদিন পর্যন্ত বাঘার ঈদ মেলা আয়োজন করা হয়। ৫০০ বছরের ঐতিহ্য এ মেলাটি। সম্প্রতি মাজার ঘেঁষে অপরূপ কারুকাজে আরো একটি নতুন মসজিদ নির্মিত হয়েছে।  

ঐতিহ্যের এ শৈল্পিক স্থাপনার শরীরজুড়ে এখন শুধুই অযত্ন আর অবহেলার ছাপ। মসজিদের দেয়ালের কিছু কিছু অংশের পলেস্তারা ধসে পড়েছে। তবে বর্তমানে এ মসজিদে আর নামাজ আদায় হয় না।

ওয়াকফ এস্টেটের বর্তমান মোতওয়াল্লি খন্দকার মুনসুরুল ইসলাম রইশ বলেন, মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণ ও পুরনো নকশা অক্ষুণ্ন রেখে সংস্কারের দায়িত্ব এখন আমাদের। মসজিদটি সংস্কারের জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। মসজিদের যেসব অংশে সংস্কার প্রয়োজন সেগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি। দ্রুত সংস্কারের কাজ শুরু করবো।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২০
এসএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।