ঢাকা: পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে পর্যায়ক্রমে ৫টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পবিত্র ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদের খতিব-ইমাম, ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
দেশে করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে জাতীয় ঈদগাঁয়ে ঈদের জামাতের আয়োজন করা হয়নি। এছাড়াও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকেও এরাব ঈদ জামাতের ব্যবস্থা করা হয়নি।
তবে সরকারের নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে মুসল্লিরা পাড়া-মহল্লার মসজিদে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে গত রোববার (১৮ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঈদুল আজহায় বুধবার (২১ জুলাই) সকাল ৭টা, ৮টা, ৯টা, ১০টা ও ১০টা ৪৫ মিনিটে বায়তুল মোকাররমে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
সকাল ৭টায় প্রথম জামাতের ইমাম থাকবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মো. মিজানুর রহমান। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মুকাররমের মুয়াজ্জিন মো. আতাউর রহমান।
সকাল ৮টায় দ্বিতীয় জামাতে ইমাম থাকবেন বায়তুল মোকারমের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী নদভী। মুকাব্বির থাকবেন মুয়াজ্জিন হাফেজ ক্বারী কাজী মাসুদুর রহমান।
সকাল ৯টায় তৃতীয় জামাতে ইমাম থাকবেন পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা এহসানুল হক। মুকাব্বির থাকবেন হাফেজ ক্বারী হাবিবুর রহমান মেশকাত।
সকাল ১০টায় চতুর্থ জামাতে ইমামতি করবেন পেশ ইমাম মাওলানা মহিউদ্দীন কাসেম। মোকাব্বির হবেন মুয়াজ্জিন ক্বারী মো. ইসহাক।
এছাড়া সকাল সাড়ে ১০টা ৪৫ মিনিটে ঈদের পঞ্চম ও শেষ জামাতে ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস হাফেজ মাওলানা ওয়ালিয়ূর রহমান খান। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মোকাররমের প্রধান খাদেম মো. শহীদুল্লাহ।
এই ৫টি জামাতে কোনো ইমাম অনুপস্থিত থাকলে বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, মুফতী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাসের বাংলানিউজকে বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রকোভ আকার ধারণ করেছে। এই লক্ষ্যে সরকারের নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মোতাবেক খোলা স্থানে এবার কোনো ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়নি। সেসঙ্গে এবার জাতীয় ঈদগাঁয়ে নামাজ আদায়ের কোনো ব্যবস্থা বা কার্যক্রম নেওয়া হয়নি। ডিএসসিসি আহ্বান জানায়, ঈদের নামাজ আদায়ে পাড়া-মহল্লায় যাতে সবাই স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে মেনে চলুন।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে বিবেচনায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে গত ১৩ জুলাই এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদের খতিব-ইমাম, ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিশেষ নির্দেশনায় বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসজনিত রোগ সংক্রমণের পরিস্থিতি বিবেচনায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত ৩০ জুন ও ৫ জুলাই কতিপয় বিধি-নিষেধ আরোপ করে নির্দেশনা জারি করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের এখন কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ কর্তৃক জারি করা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিম্নবর্ণিত শর্তসাপেক্ষে ১৪৪২ হিজরি/২০২১ সালের পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজের জামাত আদায়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।
করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি ও মুসল্লিদের জীবন-ঝুঁকি বিবেচনা করে স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা ও সমন্বয় করে যথোপযুক্ত বিবেচিত হলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জারি করা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক ঈদুল আজহার জামাত মসজিদ, ঈদগাহ বা খোলা জায়গায় আয়োজনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মসজিদে ঈদের নামাজ আয়োজনের ক্ষেত্রে কার্পেট বিছানো যাবে না। নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দ্বারা জীবাণুমুক্ত করতে হবে। মুসল্লিরা প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন।
প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা থেকে ওজু করে মসজিদ/ঈদগাহে আসতে হবে। ওজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে।
করোনার সংক্রমণ রোধে মসজিদ/ঈদগাহে ওজুর স্থানে সাবান, পানি ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে।
মসজিদ/ঈদগাহের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার/হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান ও পানি রাখতে হবে।
ঈদের নামাজের জামাতে আগত মুসল্লিকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না।
ঈদের নামাজ আদায়ের সময় কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। এক কাতার অন্তর অন্তর দাঁড়াতে হবে।
শিশু, বয়োবৃদ্ধ, অসুস্থ ব্যক্তি এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের ঈদের নামাজের জামাতে অংশগ্রহণ নিরুৎসাহিত করা হলো।
সর্বসাধারণের সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনীর নির্দেশনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।
করোনার সংক্রমণ রোধে ঈদের জামাত শেষে কোলাকুলি এবং পরস্পর হাত মেলানো পরিহার করতে হবে।
করোনা মহামারির এ বৈশ্বিক মহাবিপদ হতে রক্ষা পেতে বেশি বেশি তওবা, আস্তাগফিরুল্লাহ ও কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে এবং আমাদের কৃত অন্যায়-অপরাধের জন্য ঈদের নামাজ শেষে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।
খতিব, ইমাম, মসজিদ/ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক নির্দেশনাগুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
উল্লিখিত নির্দেশনা লংঘিত হলে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে। করোনার সংক্রমণ রোধে স্থানীয় প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সংশ্লিষ্ট মসজিদের পরিচালনা কমিটিকে উল্লিখিত নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার জন্য অনুরোধ জানানো হলো।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৭ ঘণ্টা, জুলাই, ২০, ২০২১
এসজেএ/এএটি