নিয়তের কারণেই মানুষের ইবাদত ও অন্যান্য স্বাভাবিক কর্মে পার্থক্য তৈরি হয়। যেমন নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের খোরপোষের ব্যবস্থা করা মানুষের স্বভাবগত অভ্যাস।
হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘সব আমল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক ব্যক্তি তা-ই পাবে, যা সে নিয়ত করবে।
সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের দিকে হিজরত করবে তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের দিকে হবে। আর যে ব্যক্তি হিজরত করবে দুনিয়ার উদ্দেশ্যে কিংবা কোনো মহিলাকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে, তাহলে তার হিজরত হবে সেই দিকে, যে দিকে সে হিজরত করল। ’ (বোখারি, হাদিস নং : ০১, মুসলিম, হাদিস নং : ১৯০৭)
নিয়ত যদি ভালো হয় তাহলে কখনও কাজ না করতে পারলেও শুধু নিয়তের কারণে সওয়াবের অংশীদার হওয়া যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঘুমাতে আসে এবং নিয়ত করে যে, সে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদ পড়বে। কিন্তু তার চোখ লেগে যায় এবং ফজর পর্যন্ত সে আর জাগ্রত হয় না, তাহলে সে যা নিয়ত করেছিল তার পরিপূর্ণ সওয়াব তাকে দেওয়া হয়। ’ (নাসাঈ, হাদিস নং : ১৭৮৭)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজের নিয়ত করে অথচ এখনও করেনি, তখন আল্লাহ তায়ালা তাকে পূর্ণ এক নেকি দান করেন। ’ (বোখারি, হাদিস নং : ৬১২৬, মুসলিম, হাদিস : ১৩১)
অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি খালেস নিয়তে আল্লাহর কাছে শাহাদতের মৃত্যুর আশা করবে, সে নিজের বিছানায় মারা গেলেও আল্লাহ তায়ালা তাকে শহীদদের মর্যাদায় পৌঁছিয়ে দেবেন। ’ (মুসলিম, হাদিস নং : ৪৯০৭)
আরেকটি হাদিসে তাবুক যুদ্ধের ময়দানে উপস্থিত সাহাবিদের উদ্দেশ করে রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই মদিনায় এমন কিছু মানুষ রয়েছে, (তাবুক পর্যন্ত) প্রতিটি পথে-প্রান্তরে; প্রতিটি টিলা-টক্করে, যারা তোমাদের সঙ্গেই ছিল। তারাও তোমাদের মতো জিহাদের সওয়াব লাভ করবে। কারণ পূর্ণ নিয়ত থাকা সত্ত্বেও অসুস্থতা বা অন্য কোনো ওজর তাদের জিহাদে অংশগ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ’ (মুসলিম, হাদিস নং : ১৯১১)
অতএব যে-কোনো উত্তম ও কল্যাণমূলক কাজের জন্য ইখলাসের সঙ্গে নিয়ত করা উচিত। আবার ভ্রষ্ট নিয়ত ও ভ্রান্ত লক্ষ্য পোষণ করা থেকে বেঁচে থাকা উচিত। হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম একজন শহীদকে ডাকা হবে এবং তার ওপর আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতগুলো একে একে স্মরণ করানো হবে। অতঃপর জিজ্ঞাসা করা হবে, তুমি কি এসব নেয়ামত ভোগ করেছিলে? সে স্বীকার করে নেবে। বলবে, হ্যাঁ এসব নেয়ামত আমি ভোগ করেছি। তখন আল্লাহ বলবেন, ওইসব নেয়ামতের শুকরিয়ায় তুমি কী আমল করেছ? সে বলবে, আমি আপনার রাস্তায় লড়াই করে শাহাদতবরণ করেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ; তুমি তো এই জন্য লড়াই করেছ, যেন তোমাকে বীর উপাধি দেওয়া হয়। তা তো দেওয়া হয়েছে। অতঃপর আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এরপর দ্বিতীয় ব্যক্তিকে আনা হবে, যে নিজে ইলম শিখেছে, কোরআন পড়েছে এবং অপরকে শিক্ষা দিয়েছে। তাকেও পূর্ববর্তী ব্যক্তির মতো আল্লাহ তায়ালার নেয়ামতগুলো স্মরণ করানো হবে এবং সে তা স্বীকার করে নেবে। আল্লাহ তায়ালা প্রশ্ন করবেন, এর প্রতিদানে তুমি কী আমল করেছ? সে বলবে, আমি তোমার জন্য ইলম শিখেছি, কোরআন পড়েছি এবং অপরকে শিখিয়েছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ; বরং তুমি তো এই জন্য ইলম শিখেছ, যাতে লোকে তোমাকে আলেম বলে। তা তো বলা হয়েছে। অতঃপর তাকে আল্লাহর নির্দেশে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তৃতীয় আরেক ব্যক্তিকে হাজির করা হবে যে ছিল বিত্তশালী; যাকে আল্লাহ তায়ালা প্রচুর সম্পদ ও ঐশ্বর্য দান করেছিলেন। পূর্বোক্ত দুই ব্যক্তির মতো তাকেও আল্লাহর নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে প্রশ্ন করা হবে যে, তুমি কী আমল করেছ? সে বলবে, মাওলা! ব্যয়ের জন্য তোমার পছন্দনীয় এমন কোনো খাত বাদ যায়নি, যে খাতে তোমারই সন্তুষ্টির জন্য আমি দান করিনি। আল্লাহ তায়ালা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ। বরং তুমি তা করেছ শুধু এ জন্যই, যাতে লোকরা তোমাকে দানবীর উপাধি দেয়। তা তো দেওয়া হয়েছে। অতঃপর আল্লাহর নির্দেশে তাকেও জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। ’ (মুসলিম, হাদিস নং : ১৯০৫)
আল্লামা ইবনুল হাজ্জ (রহ.) বলেন, প্রত্যেক কাজে নিয়ত যেন সামনে থাকে। এমনকি সম্ভাব্য ক্ষেত্রে একই আমলের জন্য একাধিক নিয়ত করবে। (আল মাদখাল : ১/১৭)
আল্লামা কুরতুবি (রহ.)ও তার তাফসিরে এমন কথা বলেছেন। শায়খুল হাদিস জাকারিয়া (রহ.) একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, যেমন দেখুন! আপনি নামাজ আদায়ের নিয়তে মসজিদে রওনা দিলেন। তো এখানে আপনি আরও কয়েকটি ভালো কাজের নিয়ত করতে পারেন। যেমন চোখের হেফাজত, কানের হেফাজত, জবানের হেফাজত, ইতিকাফ, কোরআন তেলাওয়াত, মুসলমান ভাইদের কুশল বিনিময় ইত্যাদি।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২১
আরএ