সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক গোলাম হাবিব দুলাল ২০০০ সালে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেছিলেন। ক্লিন ইমেজের অধিকারি এই জাপা নেতা ২০০১ সালে কুড়িগ্রাম-৪ আসন থেকে জাপার টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
২০০৮ সালে নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে যান আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাকির হোসেনের কাছে। আর ২০১৪ সালে নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে নানা রকম খেলা করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তাকে কুড়িগ্রাম-৪ আসনের পরিবর্তে কুড়িগ্রাম-৩ আসন থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
যথারীতি মনোনয়ন দাখিল করেন গোলাম হাবিব দুলাল। কিন্তু একই আসনে কাশেম গ্রুপের কর্ণধার মাঈদুল ইসলাম মুকুলকেও মনোনয়ন দেন এরশাদ। বাছাই প্রক্রিয়ার সময় গোলাম হাবিব দুলালের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়।
এই মনোনয়ন নিয়ে তীব্রক্ষোভ ছিল গোলাম হাবিব দুলালের মধ্যে। এরপরও চেষ্টা করেছিলেন জাপার রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতে। কিন্তু সম্প্রতি কমিটি বাণিজ্যসহ নানা রকম কর্মকাণ্ডের ফলে পদত্যাগ করেন বলে তার একটি ঘনিষ্ট সূত্র দাবি করেছে।
গোলাম হাবিব দুলাল পদত্যাগ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, ‘হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ দৃষ্টি সংকুচিত করে এনেছেন। তিনি এখন আর দূরে দেখতে পান না, দেখতে চান না। অল্প কয়েকজন নিয়ে চলতে চান। সুনীল-চিশতী-কাদের ছাড়া আর কাউকে দেখতে পান না। আর কারো প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। ’
আমাদের যদি দেখতে নাই পান তাহলে থেকে লাভ কি। খুব অপমান বোধ করতাম তাই বাধ্য হয়ে জাতীয় পার্টি ছাড়তে হলো।
কয়েক মাস আগে ভাইস চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মওলা চৌধুরী পার্টিতে গঠনতন্ত্র নেই এবং স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে পদত্যাগ করেন। একই রকম অভিযোগ তুলে জাপা ছেড়েছেন সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সৈয়দ, স্বেচ্ছাসেবক পার্টির পাঁচ বিভাগের (রংপুর, বরিশাল, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী ) সমন্বয়কারিরা।
ফেব্রুয়ারি মাসে জাপা ছেড়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির এক নম্বর যুগ্ম মহাসচিব ওয়াহিদুর রহমান বাদশা। তিনি কোন রকম ঘোষণা ছাড়াই জাতীয় পার্টির সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেছেন। সারাদেশে এ রকম অনেক নাম পাওয়া যাবে। আবার অনেকে রয়েছেন যারা ক্ষোভে দুঃখে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। কোন অনুষ্ঠানে তাদের দেখা যাচ্ছে না।
সবচেয়ে বড় ক্ষোভ রয়েছে কমিটি বাণিজ্য নিয়ে। সম্প্রতি কয়েক দফায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব পদে রদবদল এসেছে। আর যে যখন মহাসচিব হয়েছেন তিনি তখন তার পছন্দের লোকদের দিয়ে কমিটি করতে গিয়ে পুরনো কমিটি ভেঙ্গে দিয়েছেন। এভাবে তৃণমূলে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। কমিটি বাণিজ্য নিয়ে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ রয়েছে বর্তমান মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে।
কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত চাউর রয়েছে, এরশাদের কাছের নেতা-কর্মচারীদের পকেটে টাকা গুজে দিলেই কমিটি পাওয়া যায়। আবার কোন কমিটি ভাঙার প্রয়োজনে কিছু টাকা হলেই যথেষ্ট। এমনও ঘটনা রয়েছে সাত দিন আগে ঘোষিত কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছে।
এলাকায় কখনও যান না। আবার লোকজনও চেনেন না। শুধু পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে ঘুরঘুর করেন, এমন নেতাদের বিভিন্ন পদে বসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তৃণমূলেও দিনদিন ক্ষোভ-হাতাশা বাড়ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০১৭
এসআই/জেডএম