ঢাকা, শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

মিশন ভুলু চাচা

মেহনাজ আহমেদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১০
মিশন ভুলু চাচা

আমি মেহনাজ। পড়ছি দশম শ্রেণীতে।

প্রতি বছরের মতো এবারের বড় ঈদেও বাড়ি যাচ্ছি আমরা।

আমাদের গ্রামের বাড়িটা বিশাল। সেখানে আমাদের অনেক জমিজমা আছে। শহরে থাকি বলে ভুলু চাচাই সব দেখাশোনা করেন। ভুলু চাচা আমাদের গ্রামের চেয়ারম্যান। গ্রামের সবাই তাকে চেনে। কিন্তু এই চেনা জানাটা চেয়ারম্যান বলেই। গ্রামে মোটামুটি সবাইকেই পরিচয়সূচক বিভিন্ন নামে ডাকার রেওয়াজ আছে। আমাদের গ্রামে চাচার সেই নামটা কিন্তু ‘চেয়ারম্যান ভুলু’ নয়। তাকে সবাই চেনে ‘গরুর তাড়া খাওয়া ভুলু’ নামে। এর পেছনে একটা কারণ আছে। সেই গল্পটা বলি।

ভুলু চাচা অত্যন্ত কৃপণ স্বভাবের মানুষ। একটা পয়সাও কাউকে সহজে দিতে চান না। ঈদে তার কাছে সেলামি চাইলে নানান বাহানা - এবার ফসল ভাল হয়নি বা গরীব মানুষের দোহাই। শেষে দশ টাকা দিয়ে সবাইকে বিদেয়। একবার আমার প্ল্যান করলাম ভুলু চাচাকে জব্দ বরতে হবে।

সেবার ঈদের পর নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। আর তাই ভুলু চাচা চিন্তায় ছিলেন। চাচার এক কুপরামর্শদাতা ছিলেন নগেন বাবু। ভুলু চাচার কৃপণতার পেছনেও তার হাত ছিল। কৃপণতার কারণে ভুলু চাচাকে কেউ ভোট দিতে চাইতেন না। এজন্য চাচা আরো চিন্তিত ছিলেন। আর তাই নগেন বাবু ভুলু চাচাকে বুদ্ধি দিয়েছিলেন যে এবার যেন তিনি বাজারে সবচেয়ে বড় ও দামী গরু কিনে কোরবানী দিয়ে মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেন।

প্রথমে এ কথা শুনে ভুলু চাচার প্রাণ যায় যায় অবস্থা । কিন্তু পরে নির্বাচনের কথা চিন্তা করে রাজি হলেন। এসময় আমার প্ল্যানের কথা চাচাতো ভাই-বোন মণি, দিপু ও শাফিনকে জানাই। তারাও আমার সাথে এই ষড়যন্ত্রে রাজি হয়ে যায়।

ঈদের আগের দিন সকালে ভুলু চাচা গেলেন গরুর হাটে। এই সুযোগে আমরা বাজারে গিয়ে পটকা কিনে নিয়ে এলাম।
দুপুর ১২ টার দিকে ভুলু চাচা বেশ মোটা তাজা আর অনেক দামি দেখে গরু কিনে গ্রামের রাস্তা দিয়ে বেশ গর্বের সাথে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফিরছেন। গরুর গলায় কাগজে মূল্য লিখে ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন নগেন বাবু। বেশ আনন্দের সাথে সেদিন গরু নিয়ে আসা হল বাড়িতে। পরদিন সকালে ঈদ। তাই বাড়ির সকালে ব্যস্ত ছিল নিজ নিজ কাজে। বাড়ির মহিলারা সবাই কী কী রান্না করবে সেটা নিয়েই ব্যস্ত।

সকালে নামাজ শেষে গ্রামের অনেক মানুষ ভিড় করল আমাদের বাড়িতে। দামি গরুর জবাই করা দেখবে সবাই। কসাই আর ইমাম সাহেবও আমাদের বাড়িতে পৌঁছালেন। গরুর জবাইয়ের জন্য ইমাম সাহেব এগিয়ে গেলেন। সাথে ভুলু চাচাও। মতিন, বাড়ির কাজে ’হেল্পিং হ্যান্ড’, যখন গরুর দড়িটা খুলছিল, আমরা তখন আড়ালে পটকা সাজাচ্ছি।

যেই না গরুর বাঁধনটা খোলা হল অমনি একের পর এক পটকা ফোটা শুরু। পটকা ফোটার আওয়াজে গরুটা ভয়ে দৌড়ানো শুরু করল। মতিন গরুর দড়িটা ধরে ছিল। সে ছিটকে দুই হাত দূরে গিয়ে পড়ল। গরুর এই ক্ষিপ্ত অবস্থা দেখে বাকি সবাইও দৌড়ে পালাতে লাগল। এবার ইমাম সাহেব, ভুলু চাচা আর মতিন গরুকে সামলাতে এগিয়ে গেলেন। ভুলু চাচা গরুর দড়িটা যেই না ধরেছেন, গরুটা ভুলু চাচাকে পেছন থেকে দিল গুঁতো। আর সেই গুঁতো খেয়ে চাচার অবস্থা আর বলার নয়!

গরুটা দৌড়াতে শুরু করলো গ্রামের পথে পথে। পাক্কা এক ঘন্টা দৌড়ানোর পর সবাই মিলে গরুটাকে ধরে নিয়ে এসে জবাই করে গরীবদের মাঝে বিলিয়ে দিল মাংস।

ভুলু চাচা সেই দিনের ঘটনা থেকে গরুকে অনেক ভয় পায়। আর গরুর গুঁতো আর তাড়া খাওয়া জন্য সেই থেকে তার নাম পড়ে যায় ‘গরু তাড়া খাওয়া ভুলু’।

সেই দিনের কথা মনে পড়লে আজও খুব আনন্দ পাই সবাই। আর তাই এবারও যাচ্ছি, যদি নতুন কিছু মজার ঘটে যায়।   না ঘটলে ঘটানোর জন্য তো আমরা আছিই!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।