ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

ভ্যাম্পায়ার: রক্তচোষা বাদুড়

মাইনুল ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১০ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৩
ভ্যাম্পায়ার: রক্তচোষা বাদুড়

গভীর রাত। তুমি বেঘোরে ঘুমুচ্ছো।

শোওয়ার ঘরের জানালাটি খোলা। আর, সেখান থেকে চাঁদের আবছা আলো তোমার ঘরে ছড়িয়ে পড়ছে। হঠাৎ কী এক শব্দে তোমার ঘুম ভেঙে গেলো। তুমি চোখ মেলে দেখলে, কি একটা প্রাণী দুটি প্রশস্ত পাখায় ভর করে তোমার ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। তুমি মা বলে প্রচণ্ড চিৎকার করলে। সঙ্গে সঙ্গে ঘরের আলোগুলো জ্বলে উঠলো, আর মাসহ ঘরের সবাই ছুটে এলো তোমার ঘরে। এমন ঘটনা বাংলাদেশে না ঘটলেও, আমেরিকায় প্রায়ই ঘটে।

কিন্তু, তুমি বলতে পারো প্রাণিটি আসলে কী ছিল। না বন্ধু, এটি কোনো ভূত, ডাইনি, কিংবা লোমহর্ষক চলচ্চিত্রের ড্রাকুলা নয়। এটি একটি বাদুড়। তবে রক্তচোষা বাদুড়। ইংরেজিতে বলা হয়- ভ্যাম্পায়ার ব্যাট। এরা বাস করে সম্পূর্ণ অন্ধকার স্থান যেমন- গুহা, পরিত্যক্ত কুয়া, ফাঁপা গাছের গুড়ি কিংবা পুরাতন পোড়ো ভবনে। আর এদের প্রধান বসতঅঞ্চল মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বনাঞ্চল।

রক্তচোষা বাদুড়গুলো সাধারণত শেষ রাতে শিকারের সন্ধানে বের হয়। রাতের আঁধারে এদের দেখতে মোটেও সুবিধার মনে হয় না। এমন পরিস্থিতিতে, এরকম একটি বাদুড়ের সঙ্গে তোমার দেখা হয়ে গেলে তোমার মনে হবে, যেনো চলচ্চিত্রের লোমহর্ষক চরিত্র ড্রাকুলা তোমার সামনে এসে হাজির হয়েছে।

তবে, একটা কথা জানলে তুমি অবাক হবে, তুমি এই রক্তচোষা বাদুড়টিকে যতটা ভয় পাও, তার থেকে তোমাকে সে অনেক বেশি ভয় পায়। এরা মানুষের রক্ত পান করলেও, মানুষই এদের প্রধান শিকার নয়। এদের প্রধান শিকার গরু, ঘোড়া, এবং অন্যান্য গবাদি পশু। তবে, এদেরকে ড্রাকুলার সঙ্গে তুলনা না করে বরং বিরক্তিকর মশার সঙ্গেই তুলনা করা যায়।

এবার শোনো রক্তচোষা বাদুড়গুলো মানুষ কিংবা অন্য কোনো প্রাণীর শরীর থেকে কীভাবে রক্ত পান করে।

আমাদের মুখের নিচের এবং ওপরের চোয়ালের সামনের সারিতে যে দুটি-দুটি দাঁত রয়েছে, তাকে বলে ছেদক দাঁত। রক্তচোষা বাদুড়েরও ছেদক দাঁত রয়েছে। তবে, তা আমাদের থেকে অনেকগুণ বেশি তীক্ষ্ম। বাদুড়গুলো এ দাঁতের সাহায্যে শিকারের শরীরে অগভীর ক্ষত তৈরি করে। আর এ ক্ষত থেকে বের হওয়া রক্ত পান করে।

তবে শিকারের শরীর থেকে বের হওয়া এ রক্ত যাতে সে নির্বিঘ্নে পান করতে পারে, সে জন্যে বাদুড়টি তার মুখ থেকে বিশেষ এক ধরনের লালা নিঃসরণ করে। এ লালা রক্তকে জমাট বাঁধতে দেয় না। ফলে বাদুড়টি খুব দ্রুত ও সুবিধাজনক উপায়ে রক্ত পান করতে পারে।

আরেকটি মজার বিষয় হলো- এটা যখন কোনো প্রাণীর শরীরে দাঁত বসায়, সে তখন কিছুই টের পায় না। অর্থাৎ, কোনোরূপ ব্যথাও অনুভব করে না। এরা মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণীর শরীর থেকে যে রক্ত পান করে, তার পরিমাণও খুবই সামান্য (প্রায় এক কিউবিক সেন্টিমিটার বা ১ গ্রাম)।

রক্তচোষা বাদুড় সম্বন্ধে যতটা লোমহর্ষক কাহিনী আমরা জানি, তা আসলে সত্যি নয়। এরা কোনোভাবেই ভয়ঙ্কর কিংবা অনেক বেশি ক্ষতিকর প্রাণীও নয়। এরা বেশ বুদ্ধিমান প্রাণী। শিশুদের লালন পালন এবং অন্য বাদুড়দের বিপদে তারা সাহায্য করতে এগিয়ে যায়। সুতরাং, এদের কোনো একটির সঙ্গে তোমার যদি কখনো দেখা হয়ে যায়, তুমি নিশ্চয়ই ভয় পাবে না।


বাংলাদেশ সময়: ২০৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।