পৃথিবীতে এমন কোনো দেশ নেই যেখানে ছেলে ভোলানো ছড়া নেই। এমন কোনো ছেলেমেয়েও নেই যারা ছেলে ভোলানো ছড়া শোনেনি বা জানে না।
সব ছড়াই শুনতে বেশ মজা। মজা বলতেও। এর মধ্যে আবার কতগুলো আছে খেলাবিষয়ক ছড়া। তোমরা জানো অনেক খেলা আছে যেগুলো ছড়া বলে বলে খেলতে হয়। যেমন ‘আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম সাজে’। কিংবা ‘ইকড়ি মিকড়ি চাম চিকড়ি, চামে কাটা মজুমদার’। আবার ‘কী খবর আইলো? রাজার একটি বালিকা চাইলো’ বলে দুই পক্ষকেই ছড়া কাটতে হয়। চলো বন্ধুরা এখন দেশ বিদেশের ছেলে ভোলানো কয়েকটি ছড়া শুনি।
বাংলা ছড়া
‘আয় আয় চাঁদ মামা/টিপ দিয়ে যা/চাঁদের কপালে চাঁদ/টিপ দিয়ে যা/মাছ কাটলো মুড়ো দেব/ধান ভানলে কুঁড়ো দেব/কালো গরুর দুধ দেব/দুধ খাবার বাটি দেব/চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা। ’ কিংবা ‘হাট্টিমা টিম টিম/তারা মাঠে পাড়ে ডিম/তাদের খাড়া দুটো শিং/তারা হাট্টিমা টিম টিম। ’
এসব তো সেই কোন যুগের ছড়া। ছড়াকারদের নামও তাই হয়তো কেউ লিখে রাখেনি। তারপরও আজো এসব ছড়ার আবেদন এতোটুকুও কমেনি।
চলো এবার শোনা যাক বাংলা ঘুমপাড়ানি ছড়া। এগুলো ঘুমপাড়ানি ছড়া বলার কারণ ছড়াগুলোতে ঘুমের কথা থাকে। আর সে ছড়াগুলো সাধারণত হয় বেশ বড়ো, যাতে খানিকক্ষণ ধরে ছড়াটা বলা যায়। শুনতে শুনতে খোকাখুকির চোখে ঘুমে জড়িয়ে আসে। যেমন- ঘুমপাড়ানি মাসি পিসি, মোদের বাড়ি এসো/খাট নেই, পালঙ্ক নেই, জাদুর চোখ পেতে বসো’। কিংবা ‘খোকা ঘুমালো/পাড়া জুড়ালো/বর্গী এলো দেশে/বুলবুলিতে ধান খেয়েছে/খাজনা দেবে কিসে। ’
ইংরেজি ছড়া
ইংরেজি ছড়ার মধ্যে বেশির ভাগ ছড়াকে বলা হয় Mother Goose’s Rymes মানে ‘গুজ ঠাকরুনের ছড়া’। কিন্তু বন্ধুরা, কে এই গুজ ঠাকরুন? কেউ বলে তার আসল নাম ছিল কুইন গুজ ফুট। প্রায় সোয়া ৩০০ বছর আগে ফ্রান্সে তার নাম দিয়ে এক ভদ্রলোক ছোটোদের একটা গল্পের বই বের করেন। শুধু ইংল্যান্ড আর আমেরিকা নয়, পৃথিবীর প্রায় সবদেশে কমবেশি গুজ ঠাকরুনের ছড়া প্রচলিত। যেমন ‘Jack and Jill/Went up the hill/To fetch a Pail of water/Jack fall down/And broke his crown/And jill came tumbling often’। এ ছড়ার অর্থ হলো- জ্যাক আর জিল, দুয়ে/পাহাড়ে উঠতে গিয়ে/এক বালতি পানি আনবে বলে/জ্যাক গেল পড়ে/তার চাঁদি গেল উড়ে/উল্টে পাল্টে জিল পিছনে এলো চলে। চলো বন্ধুরা, আরেকটি ইংরেজি ছড়া শুনি। ‘Humpty-dumpty sat on a wall/Humpy-dumpty had a great fall/And all the king’s horses and all the king’s men/Could not set up Humpty-dumpty again’। এ ছড়ার মানে হলো- হাম্পটি-ডাম্পটি বসে দেয়ালে চড়ে/ হাম্পটি ডাম্পটি গেল ধুপ করে পড়ে/তখন রাজার যত সেপাই-সৈন্য, রাজার যত ঘোড়া/হাম্পটি ডাম্পটিকে করতে পারলো নাকো খাড়া।
হিন্দি ছড়া
হিন্দি ভাষার রয়েছে অসংখ্য ছেলে ভোলানো ছড়া। এর মধ্যে থেকে দু’টি ছড়া তোমাদের জন্য দেওয়া হলো-‘চান্দামামা দূরকে/পুএ পাকায়েঁ পুরকে/আপ খায়ে থালিমেঁ/ বাচ্চাকে দেঁ প্যালিমে/প্যালি গয়ি টুট/চন্দা গয়া রুঠ’। এ ছড়ার অর্থ হলো-চাঁদ মামা অনেক দূর/পিঠা বানান ভরপুর/নিজে তা খান থালায়/ছেলেদের দেন পেয়ালায়/পেয়ালা গেল ভেঙে/চাঁদ ওঠে রেগে। আরেকটি হিন্দি ছড়া শুনি। ‘গুড়িয়া জায়গি সসুরাল/মেরি রো রো কে/একলোগ তরকারি ছেকো/এক বনাও পরি/খাতে খাতে থক জয়গি/সাঁস কি ঘর কে তুরি/হো সাঁস কি ঘরকে তুরি’।
এ ছড়ার মানে হলো-পুতুল যাবে শশুরবাড়ি তাই কাঁদতে লেগেছে/কেউ তোরা তরকারি কাট, কেউ পুরি ভেজে দে। খেতে খেতে হাঁপিয়ে যাবে শশুরবাড়িতে।
ভারতের মহারাষ্ট্রের ছেলেমেয়েদের মুখে সুন্দর সুন্দর ছড়া শোনা যায়। মহারাষ্ট্রের ভাষা মারাঠি। প্রথমে আসল মারাঠি ছড়াটি দেওয়া হচ্ছে। তারপর পড়ো এর বাংলা অর্থ। ‘য়ে রে য়ে রে পাউসা/তুলা দেতা প্যায়সা/প্যায়সা ঝালা খোটা/পাউসা আলা মোটা/পাউসা পড়তা ঝিম ঝিম ঝিম/অঙ্গন ঝালে ওলে চিম্ব/পাউসা পড়লা মুষল ধার/ রাস ঝালে হিববেগার’।
এর অর্থ হলো- আয়রে আয় বর্ষা/তোকে দেব পয়সা/কড়িগুলো কানা/বৃষ্টি দিলো হানা/পড়লো বৃষ্টি ঝিম ঝিম/উঠোন ভিজে তিমতিম/ঝরলো বৃষ্টি মুষলধারে/সবুজ ক্ষেত গেল ভরে।
মাওরি ও জাপানি ঘুমপাড়ানি ছড়া
বন্ধুরা, প্রথমে আমরা জাপানি ঘুমপাড়ানি একটি ছড়ার বাংলা অনুবাদ পড়বো। তারপর পড়বো অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ দিকে প্রায় ১২০০ মাইল দূরে নিউজিল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের আদবাসী মাওরিদের একটি ঘুমপাড়ানি ছড়া।
জাপানিদের ছড়াটি হলো- ‘ঘুমা আমার সোনার খোকা/ঘুমা মায়ের বুকে/আকাশ জুড়ে উঠলো তারা/ঘুমারে তুই সুখে/হাত পা নেড়ে কান্না কেন/কান্না কেন এত/চাঁদ উঠেছে ঘুমা রে তুই/সোনার চাঁদের মতো’।
মাওরিদের ছড়াটি হলো- ‘খোকা আমার, খোকা আমার/তুল তুলসীর পাতা/বেনামূলের গুচ্ছ আমার/রাখরে বুকে মাথা/কন্তুরীর কৌটা আমার/খোমা ঘুম যায়/ গুগগুল ধূপ ধুনার আবেশ/ খোকার চোখে আয়’।
ইউরোপের নানা দেশের ছড়া
এখন আমরা ইউরোপের দুটি দেশের মজার দুটি ঘুমপাড়ানি বা ছেলে ভোলানো ছড়া শোনাবো। ফরাসি একটি ছড়ার বাংলা অনুবাদটি হলো- ‘আমার লক্ষ্মী কোলিন ভাই/ছি, ছি অতো কাঁদতে নাই/শোন, শোন মা করেছে কত রকম পিঠা/তোমারই তো জন্য সেসব, খেতে কত মিঠা/নানা এনেছে ভালো ভালো মিষ্টি/কান্না রেখে সেদিকে দাও দৃষ্টি/ছি, ছি আর কেঁদো না ভাই। ’
এবার শুনি জার্মান ভাষার একটি ছেলে ভোলানো ছড়া- ‘চাঁদ মামার কাছে/একটি ভড়ার ছানা আছে/তাকে নিয়ে চাঁদমামা থাকে তারার দেশে/কখনো বা এসে/উঁকি মেরে যায়/মোদের ছাদের কিনারায়’।
বন্ধুরা, এমন মজার, অদ্ভুত সব ছেলে ভোলানো, ঘুমপাড়ানি ছড়া আছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। এসব ছড়া কে কবে লিখেছেন, কিংবা কতকাল থেকে চলে আসছে তার সঠিক হিসাব কেউ লিখে রাখেনি। তারপরও এসব ছড়াগুলো আমরা এখনো পড়ে যাচ্ছি। হয়তো আরো যুগ যুগ ধরে পড়ে যাবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি[email protected]