ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

সোনালি বিকেলে স্বর্গীয় কুর্চি

মীম নোশিন নাওয়াল খান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৩
সোনালি বিকেলে স্বর্গীয় কুর্চি

গাছের চিকন ডালে থোকায় থোকায় ফুটে আছে স্নিগ্ধ সাদা ফুল। ভারি মিষ্টি দেখতে।

ফুলটির নাম কুর্চি। আদর করে তাকে অনেক নামেই ডাকা হয়। কুটজ, কুর্চি, ইন্দ্রযব, কুড়চি, ইন্দ্রঘোষ, কুরুক, বৎসক কিংবা গিরিমল্লিকা। বৈজ্ঞানিক নাম হোলারেনা অ্যান্টিডিসেন্টেরিকা। ফুলটি যে শুধু রূপবতী তাই নয়, সে গুণীও বটে। জ্বর, শ্বাসকষ্ট, বাকল চর্মরোগ, পিলে, পাতা ব্রঙ্কাইটিস, বাত, ফোঁড়া, ক্ষতসহ অনেক রোগ সারাতে ওস্তাদ এ ফুল।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বুনো গাছ হিসেবে দেখা গেলেও ইট-কাঠের দালানঘেরা গাড়ির কালো ধোঁয়া আর শব্দে দূষিত ঢাকা শহরে তার স্থান নেই। বলধা গার্ডেনে রয়েছে। সেখান থেকেই অনেক কষ্ট করে প্রকৃতিপ্রেমী বিপ্রদাশ বড়ুয়া কুর্চির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে একটি চারা সংগ্রহ করে এনে লাগিয়েছিলেন শিশু একাডেমী প্রাঙ্গণে। কারণ এ ফুলের চারা পাওয়া নেহায়েতই সহজ নয়।

সব গাছে বীজ হয় না। শেকড় থেকে চারা হয়। কিন্তু সে চারা পাওয়াও কষ্টসাধ্য। এ সব কথা জানতে পারি ১০ এপ্রিল ২০১৩-র দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত বিপ্রদাশ বড়ুয়ার একটি ফিচার থেকে। আরো জানতে পারি এই বিরল ফুলটি নাকি তার পাপড়ি মেলে অপেক্ষা করছে শিশু একাডেমী প্রাঙ্গণে। যেন তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হওয়ার জন্য হাতছানি দিয়ে ডাকছে। হ্যাঁ, বিপ্রদাশ বড়ুয়ার লাগানো সে গাছে আজ ফুল ফুটেছে। এটাই তার ফোটার সময়। সৌন্দর্যে- সুবাসে মন মাতানোর সময়। বসন্তের শেষ থেকে একদম বর্ষা পর্যন্তও দেখা যায়। এ কথা শুনে আর ঘরে বসে থাকতে পারলাম না। সোজা চলে গেলাম শিশু একাডেমীতে। কুর্চি হল সেই ফুল, যা কিনা আকৃষ্ট করেছে কবিগুরু রবি ঠাকুরকেও। কবি কালিদাস রচিত কালজয়ী কাব্য ‘মেঘদূত’–এ যক্ষ তার প্রিয়তমাকে বর্ষার মঙ্গল বার্তা পাঠাতে দু’হাত ভরে মেঘমালাকে দিয়েছিল স্নিগ্ধ সাদা কুর্চি ফুল।

“যক্ষ অতএব কুড়চি ফুল দিয়ে সাজিয়ে প্রণয়ের অর্ঘ্য
স্বাগত সম্ভাষ জানালে মেঘবরে মোহন, প্রীতিময় বচনে। ”

এমনটাই বলেছেন কবি। এ ফুল না দেখে মনে শান্তি পাচ্ছিলাম না। শিশু একাডেমী পৌঁছে কষ্ট লাগল যখন দেখলাম অতীব সুন্দর এই ফুলের গাছটি বাগানের এক কোণে পড়ে আছে অবহেলায়। ওখানে কেউ জানেও না এ রকম এক অসাধারণ ফুল যে অভিমানে মুখ লুকিয়ে আছে বাগানের কোণায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে গাছটি পাওয়া গেল। ফুল দেখে চিনলাম এই সেই কুর্চি।

প্রাণভরে উপভোগ করলাম তার মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য, তার প্রাণজুড়ানো সুবাস। তখন সময়টা পড়ন্ত বিকেল।

গাছের সরু ডালে ফুটে থাকা থোকা থোকা কোমল স্নিগ্ধ ফুলের গায়ে স্নেহের পরশ বুলিয়ে যাচ্ছে মিষ্টি রোদ।

আলতো করে ছুঁয়ে যাচ্ছে হালকা বাতাস। দুলে উঠছে কুর্চির ডাল, যেন বাতাসের ছন্দে নৃত্য জুড়ছে। সে এক মোহনীয় দৃশ্য। সোনালি বিকেলে কুর্চিকে মনে হচ্ছিল এক স্বর্গীয় ফুল। দেখে দেখে মন ভরে না। দৃষ্টি আর ফেরাতে পারি না। মনে হচ্ছে যেন ফুলগুলি আজ অপেক্ষা করছে আবার কেউ দু’হাত ভরে তুলে নিয়ে তাদের দিয়ে মঙ্গল বার্তা পাঠাবে প্রিয়তমার কাছে।

যারা প্রকৃতিপ্রেমী, সৌন্দর্যপিপাসু- তাদের কাছে অনুরোধ, একটিবার দেখে আসুন মনোমুগ্ধকর কুর্চির ফুল। আর যারা ব্যস্ততার ফাঁকে কখনো প্রকৃতিকে খেয়াল করার সময় পান না, কিংবা প্রয়োজন মনে করেন না, তাদের বলছি, একটিবার দেখে আসুন না মিষ্টি ফুলটিকে, হয়তো পাল্টে যাবে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি, বদলে যাবে মানসিকতা। আমার বিশ্বাস, আপনার মধ্যে এটুকু পরিবর্তন আনার ক্ষমতা অতীব সুন্দর এই ফুলটির আছে।

লেখক: মীম নোশিন নাওয়াল খান, সপ্তম শ্রেণী, ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজ

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি[email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।