কাকের রং কালো। হলদে পাখির রং হলুদ।
ওদিকে আমাদের পোষা বিড়ালের কেউ সাদা, কেউ কালো, কেউ আবার সোনালী। ভাবছো, রং তো প্রাণীদের থাকবেই। না হলে তাদের চিনবো কেমন করে? কিন্তু, তোমরা কি কখনো ভেবে দেখেছো, রং প্রাণীদের কোনো কাজে আসে কিনা?
বন্ধুরা, প্রাণীজগত অনেক বড়ো। প্রাণীদের বিবর্তনে পা থেকে মাথা পর্যন্ত সবকিছু খাটিয়ে প্রাণীরা টিকে থাকার চেষ্টা করেছে, করছে। নিজের গায়ের রং অনেক প্রাণীদের জরুরি কাজেও আসে। অনেক প্রাণীর কাছে রং হলো ভাষা, অনেকের কাছে সতর্ক সংকেত, কারো আত্মরক্ষার হাতিয়ার, কারো প্রেম নিবেদনের যোগ্যতা, কারো তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রক কারো কারো কাছে আবার বিজ্ঞাপন!
রং ব্যবহার করে অনেক প্রাণী চারপাশের পরিবেশে মিশে যায়। এই ঘটনাকে বলে ক্যামোফ্লেজ। ক্যামোফ্লেজের উদাহরণ টানতে আমরা সবসময়ই ক্যামেলিওন বা রক্তচোষা গিরগিটির উদাহরণ দেই। এই প্রাণীটি যেখানে থাকে সেখানকার রঙে নিজেকে রাঙাতে পারে। তবে রং পরিবর্তন না করে লুকিয়ে থাকতে পারে অনেকেই।
যেমন, লাউডগা সাপ। চিকন সবুজ সাপটির পছন্দের জায়গা সবজির মাচা। সাপটিকে সবজির মাচায় লাউয়ের ডগা বা লতার সাথে পার্থক্য করা কঠিন। আবার ধরো, আমাদের দেশের দিনেকানা বা নাইটজার পাখির কথা। মাটির রং, বাঁশের গুড়ির রঙের সাথে মিশে থাকতে পারে পাখিটি। দিনের বেলাতেও নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকতে পারে বাঁশবাগানে।
রং দিয়ে বিচার করে প্রেমিক নির্বাচন করতে ভালোবাসে মেয়ে পাখিরা। এমন ব্যাপার আছে ময়ূরদের মধ্যে। যে ময়ূরটি বেশি উজ্জ্বল রঙের প্রদর্শন করবে, তার সাথেই সংসার পাতাতে চাইবে ময়ূরীরা। এমনটি দেখা যায় অনেক পাখিতেই।
রং দিয়ে তোমাকে ভয় দেখাতে চায় এমন প্রাণীর অভাব আছে নাকি? বেশি কটকটে হলুদ বা উজ্জ্বল লাল রং বা কালো-হলুদের ডোরাকাটা দিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে অনেক প্রাণী।
অনেক বিষাক্ত সাপ, ব্যাঙ এভাবে ভয় দেখায়। কেন, তোমরা তো মৌমাছি আর ভীমরুল দেখেছো। ওদের উজ্জ্বল ডোরাকাটা দেখে অন্য প্রাণীরা ভয় পায়। পিঁপড়া লাল হলে আমরা বুঝি বিষ পিঁপড়া। কালো হলেই বুঝি বিষ নেই বা সহসা কামড়াবে না।
রং দিয়ে ধোঁকাও দিতে সক্ষম অনেক প্রাণী। ক্যামোফ্লেজ এক ধরনের ধোঁকা। কিন্তু একটু অন্যরকম ধোঁকা হলো অন্য প্রাণীর চেহারা ধারণ করে থাকা। যেমন ধরো, কোকিল কালো হওয়ার ফলে কখনো কাককে ধোঁকা দিতে পারে। কিংবা, ধরো চোখ গেলো পাখি (Hawk Cuckoo) দেখতে হুবহু শিকরা নামের একটি শিকারি বাজের মতো। চোখ গেলো পাখিও অন্যের বাসায় ডিম পাড়ে। তাকে দেখেই যদি শিকারি ভেবে পাখিরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়, তাহলে তো তার ডিম পাড়ার সুবিধাই হলো। কি বলো?
প্রাণীদের রং কখোনো শিকারিদেরই ভয় দিয়ে দেয়, কখনো বিভ্রম ঘটায়। খেয়াল করেছো, জেব্রায় গায়ের দিকে তুমি বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারবে না? চোখে ধাঁধা লেগে যাবে। সিংহ যখন জেব্রা শিকার করতে যায়, তারও কিন্তু একই অবস্থা হয়। এক ধরনের প্রজাপতির পাখায় পেঁচার দুইটি চোখের মতো ডিজাইন। ফলে তাকে ধরতে যাবার আগে পাখিরা ভয় তো পাবেই।
কিছু ব্যাঙ যখন রোদে থাকে, তখন তাদের শরীরের রং উজ্জ্বল করে দিতে পারে। তখন তার ত্বক আয়নার মতো রোদকে প্রতিফলিত করে পাঠিয়ে দিতে পারে। ফলে তাপমাত্রা থাকে নিয়ন্ত্রণে।
আবার আমাদের ত্বকের কালো রং হয় মেলানিনের জন্য। অতিবেগুনি রশ্মি থেকে এটি আমাদের রক্ষা করে। বেশি ফর্সা লোকদের মেলানিন কম থাকে।
সমুদ্রে মাছদের জন্য সত্যিই কিছু ময়লা পরিষ্কার করার কেন্দ্র থাকে। সেখানে বাস করে কয়েক ধরনের পরিষ্কারক মাছ বা ক্লিনিং ফিশ। ময়লা পরিষ্কার করার বিনিময়ে তারা খাবার পায়। তারা তাদের গায়ের রং পরিবর্তন করে বিভিন্ন ছোটো-বড়ো মাছদের বুঝিয়ে দেয় তারা এই মুহূর্তে কাজ করতে ইচ্ছুক কি-না। তাই, ত্বকের রং কিন্তু কিছু প্রাণীদের ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনও!
বাংলাদেশ সময়: ১৯১২ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি[email protected]