(বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে)
কাল্পনিক একটি সময়| বড় বড় যুদ্ধের কারণে বেশিরভাগ দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। পৃথিবী ছোট ছোট খণ্ডে বিভক্ত।
সময়টা ডিসেম্বর। জনের মনে ভয় ঢোকা শুরু হয়েছে| না ভুল শব্দ, ভয় নয় চিন্তা। ভয় হচ্ছে ভয়ানক কিছু ঘটার গভীর এবং অসুস্থ অনুভূতি। ভয়ের উদাহরণ হতে পারে বছরখানেক আগের সেই অনুভূতি, যখন অপরিচিত একটি বিমান তাদের কম্যুনিটির উপর দিয়ে দুবার উড়ে গিয়েছিল। সে দুবারই তা দেখেছে। চোখ কুঁচকে, আকাশের দিকে তাকিয়ে সরু আকাশযানটাকে দেখতে পেলো। একটি জেট প্লেন । দু’ দু’বার এলো আর গেলো। দ্রুতগতির কারণে প্রায় অস্পষ্ট দেখা যায় । জেট প্লেনটি উড়ে যায়, আর পেছন পেছন যায় তার প্রচণ্ড শব্দ।
প্রথমে সে কিছুটা মুগ্ধ হলো। এতো কাছ থেকে বিমান আগে দেখা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী কম্যুনিটির ওপর দিয়ে কোনো চালক বিমান চালাতে পারবে না। মাঝে মাঝে, ডেলিভারি করার জন্যে কার্গো প্লেনগুলো নদীর ওপারে বড়মাঠে যখন নামে, বাচ্চারা তখন তাদের সাইকেলে চড়ে নদীর তীরে জড়ো হয়। আগ্রহের সাথে দেখে প্লেন থেকে মালপত্র নামানো। তারপর পশ্চিমের দিকে উড়ে যাচ্ছে, সবসময় কম্যুনিটি থেকে দূরে।
কিন্তু একবছর আগের বিমানটির ব্যাপার ছিল ভিন্ন। এটা পেটমোটা কোনো কার্গো বিমান ছিল না বরং সুচালো নাকের এক আরোহী বিশিষ্ট জেট প্লেন ছিল। জন উদ্বিগ্ন হয়ে চারপাশে তাকিয়ে দেখে বয়স্ক এবং বাচ্চারা তাদের কাজকর্ম ফেলে দাড়িয়ে আছে। ইতস্ততভাবে এ ঘটনার ব্যাখ্যার জন্যে অপেক্ষা করছে। সে সময় সমস্ত নাগরিকদের নির্দেশ দেয়া হলো নিকটস্থ কোনো বিল্ডিংয়ে গিয়ে অপেক্ষা করতে ।
‘এখনই’ স্পিকারে চেঁচিয়ে বলা হলো ‘বাইসাইকেল যেখানে আছে সেখানেই ফেলে যান’।
মুহূর্তের মধ্যে জন বাধ্য ছেলের মতো, তাদের ডুয়েলিং (বসতবাড়ি) এর পেছনে সাইকেল রেখে দৌড়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল। তার বাবা-মা দুজনেই তখন কাজে। ছোটবোন মিরা ছিল শিশুপরিচর্যা কেন্দ্রে, যেখানে সে স্কুল পরবর্তী সময় কাটাতো। সামনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে কাউকেই দেখতে পেলো না। রাস্তা পরিস্কারক, জমিতে কাজ করার লোকজন অথবা খাবার বিতরণ কারক। যারা সাধারণত এ সময়টায় কম্যুনিটিকে সরগরম করে রাখে, কেউই নেই। রাস্তায় কেবল এলোমেলোভাবে পরিত্যক্ত সাইকেলগুলো পড়ে আছে। একটির উল্টে যাওয়া চাকা তখনও আস্তে আস্তে ঘুরছিল|
জন তখন ভয় পেয়েছিল। আশেপাশের নীরবতা ও উদ্বিগ্ন অপেক্ষা পেটের ভেতর গুড়গুড় অনুভূতি তৈরি করেছিল। সে থেকে থেকে কেঁপে উঠছিল।
কিন্তু তেমন কিছুই ঘটেনি। কয়েক মিনিট পরেই স্পিকার আবার বেজে ওঠে| আশ্বস্তের সুরে ব্যাখ্যা করা হয়:
‘ট্রেনিংয়ে থাকা একজন পাইলট ভুল করে চলে এসেছিল। ভুল ধরা পড়ার আগেই পাইলট তার নিজের এলাকায় ফিরে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে চালিয়ে যাচ্ছিল। ’
একটুখানি নীরবতার পর আবার বলা হলো ‘বলার অপেক্ষা রাখে না তাকে রিলিজ করে দেয়া হবে’।
শেষের বাক্যটি বলার সময় ঘোষকের গলার সুরে কৌতুক খেলা করে গেলো। জনও অল্প একটু হেসেছিল, যদিও সে জানত এটা কি নির্মম ঘোষণা। একজন কর্মক্ষম নাগরিকের জন্যে ‘রিলিজ’ হচ্ছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত, ভয়ানক শাস্তি এবং চরম ব্যর্থতা। .... [চলবে]
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৬ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক/ ‘ইচ্ছেঘুড়ি’ ঈদ আয়োজনের জন্য লেখা পাঠান এখনই[email protected]