সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান সোনোরা লুইস ডডের মা। ডডের বাবা উইলিয়াম জ্যাকসন সবে যুদ্ধ থেকে ফিরেছেন।
বাবার আদর-স্নেহের ছায়াতলে থেকে তারা তাদের মায়ের অভাব বুঝতেই পারেনি। বাবাই একইসঙ্গে মা ও বাবা’র ভূমিকায় দায়িত্ব পালন করেছেন।
তারপর ১৯০৯ সাল। ডডের বয়স তখন ২৭ বছর। সে দেখলো মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের জন্য সারাবিশ্বে মা দিবস পালিত হয়। কিন্তু বাবাকে ভালোবাসা জানানোর কোনো বিশেষ দিনক্ষণ নেই। তখন তার মাথায় বুদ্ধি এলো। ডড ভাবলো মা দিবসের মতো ‘বাবা দিবস’ থাকলে বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানানোর সুযোগ ঘটবে।
ডডের এমন ভাবনাকে কেউ-ই গুরুত্ব দিতে চাইলো না। উল্টো হাস্য-রসিকতা করে উড়িয়ে দিলো। তাতে ডড কিন্তু মোটেও দমে যায়নি। তার আগ্রহ আরো প্রবল হয়ে উঠলো। বাবার প্রতি তার ভালোবাসার দৃষ্টান্ত সে স্থাপন করবেই। কারণ বাবাই তার সব। তারপর থেকে সে প্রকাশ্যে বাবা দিবস পালনের পক্ষে জনমত সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালালো।
প্রচেষ্টা বৃথা গেলো না ডডের। পরের বছর ১৯১০ সালে ডডের নিজ শহর ওয়াশিংটনের স্পোকান শহরে কয়েকটি সংগঠনের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো পালিত হলো ‘বাবা দিবস’। ১৯১৬ সালে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন এ দিবসকে সমর্থন করেন। তাদের জাতীয় আইনসভাতেও স্বীকৃতি পায়। সেই থেকে পৃথিবীর সব বাবাদের প্রতি সন্মান জানাতে প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার ‘বিশ্ব বাবা দিবস’ পালিত হয়। আবারও বলছি, বাবা-মা’র জন্য কোনো বিশেষ নয়- তবুও একটি বিশেষ দিনে বিশেষভাবে স্মরণ করলে ক্ষতি কি?
বাবা দিবস পালনের রীতি নীতি
দিবস ও বিষয় এক হলেও আবেগ, অনুভূতি প্রকাশের রীতি নীতি একেক দেশে একেক রকম। তোমাদের জন্য জানিয়ে দিলাম তারই কিছু তথ্য।
বাংলাদেশ: আমাদের দেশে বাবা দিবস পালনের ব্যাপক প্রচলন নেই। শহরে আধুনিকমনস্ক তরুণ-তরুণীরা এই দিবসটি পালন করে নিজেদের মতো করে। তবে ঘটা করে পারিবারিক আয়োজন খুব একটা হয়না এখানে। তবে আমরা বাঙালিরা বাবাকে খুব বেশি ভালোবাসি প্রতিদিন প্রতিক্ষণ।
ভারত: ভারতে জুনের তৃতীয় রোববার পশ্চিমা দেশগুলোর অনুকরণে ভারতে বাবা দিবস পালিত হয়। এই দিন বাবার সঙ্গে কাটায়, বাবাকে শুভেচ্ছা জানায় কার্ড, ফুল বা অন্যকিছু দিয়ে। পরিবারের সবাই মিলে পিকনিক বা সিনেমা দেখাটাও বেশ প্রচলিত।
আমেরিকা: ১৯৭২ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিক্সন বাবা দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করলে প্রতি বছর জুনের তৃতীয় রোববার বাবা দিবস পালিত হয়। আমেরিকার পরিবারের সদস্যদের কাছে এই দিনটি পুনর্মিলনীর মতো। বাবাকে শুভেচ্ছা জানাতে ফুল, কার্ড, চকোলেট, নেকটাই আমেরিকানদের পছন্দের তালিকায়।
অস্ট্রেলিয়া: বাবা দিবস পালন করে সেপ্টেম্বরের প্রথম রোববার। বাবাসহ পরিবারের সবাই একত্রে সারাদিন কাটায় বাবার সাথে। অস্ট্রেলিয়ানদের বিশ্বাস এরফলে সন্তানদের সঙ্গে বাবার ভালোবাসার বন্ধন আরো সুদৃঢ় হয়। তারা উপহার দেয়- নেকটাই, চকোলেট, ফুল বা বাবার প্রিয় কোনো কিছু।
দক্ষিণ আফ্রিকা: প্রতি বছর জুনের তৃতীয় রোববার বেশ ঘটা করেই বাবা দিবস পালন করে। বাবাকে শুভেচ্ছা জানাতে তারা কার্ড, ফুল, নেকটাই বা হাতে বানানো কিছু উপহার দেয়। তাছাড়া এ দিন পরিবারের সবাই একসঙ্গে সময় কাটায়। অনেকেই এদিন বাবার সঙ্গে পিকনিক, মাছ শিকারে বা রেস্টুরেন্টে খেতে যায়।
বাংলাদেশ সময়: ০২৪৫ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি মেইল[email protected]