‘পথ শিশুদের ঈদ উৎসব’ নামটা শুনেই একটু অবাক হলাম। অবাক হওয়ারই কথা; যাদের ঘর নেই, বাড়ি নেই, থাকার কোনো জায়গা নেই, ফুটপাতই যাদের একমাত্র ঠিকানা।
উসৎব হয় মধ্যবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের শ্রেণীতে যেমন— ঈদের দিন তারা নতুন জামা পরবে, হাতে মেহেদি লাগাবে, বাবা-মায়ের কাছ থেকে নতুন টাকার সেলামি নেবে, বাসায় ভালো খাবার-দাবারের ব্যবস্থা থাকবে। তবেই না সেটা উৎসবে পরিণত হবে। পথশিশুরা এই উৎসবে অন্তর্ভুক্ত নয় কারণ তাদের না আছে নতুন জামা, না আছে ভালো খাবারের ব্যবস্থা। আর হাতে মেহেদি লাগানো এবং নতুন টাকার সেলামি পাওয়া তো স্বপ্নের ব্যাপার। তাদের কাছে ঈদের দিন অন্যান্য দিনগুলোর মতই সাদামাটা। সারাদিন খাটা-খাটুনি করে একবেলা খাবার জোগাড় করা, এটাতো আর ঈদ উৎসব হতে পারে না।
আমাদের প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় জাকাতের টাকায় শিশুদের বাবা-মায়ের জন্য শাড়ি, লুঙ্গির ব্যবস্থা থাকলেও শিশুদের জন্য কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এখানেও শিশুরা চরম বৈষম্যের শিকার।
ঈদের আনন্দটা যে শিশুদের ঘিরেই এই ব্যাপারটা মনে হয় মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের গণ্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ঈদের আনন্দ নিম্নবিত্ত ও ছিন্নমূল পথশিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগ নেয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একদল তরুণ। তারা চিন্তা করতে থাকে, কিভাবে ঈদের আনন্দ ছিন্নমূল পথ শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যায়।
এক পর্যায়ে তারা সিদ্ধান্ত নেয় ঈদের আগেই পথ শিশুদের হাতে তুলে দেওয়া হবে নতুন জামা, যে ভাবা সেই কাজ। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করে একটি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে তারা অর্থ সংগ্রহে নেমে পড়ে। তাছাড়া নিজেদের বিভিন্ন হাত খরচ ও ঈদের কেনাকাটা থেকে কিছু টাকা বাঁচিয়ে তারা মোটামুটি একটা অর্থ জমা করে। সেই জমা হওয়া অর্থ দিয়ে তারা প্রায় ৫০০ পথশিশুর জন্য নতুন জামা কিনতে সক্ষম হয়। এখন শুধু আনন্দ বিলিয়ে দেওয়ার পালা।
তারা নির্দিষ্ট একটা দিনে নেমে পড়ে ঢাকার রাস্তায়। ঢাকার রামপুরা থেকে শুরু করে, খিলগাঁও বস্তি, কমলাপুর স্টেশন, সোহরাওয়ার্দি উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য, চন্দ্রিমা উদ্যান, গাবতলী মাজার রোড, মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকা হয়ে বিমানবন্দর স্টেশনে এসে শেষ হয় পথশিশুদের নতুন জামা বিতরণের কার্যক্রম। পথশিশুদের নতুন জামার পাশাপাশি দেওয়া হয় নতুন খামে নতুন টাকার ঈদ সেলামি। এটাই হচ্ছে ২০১২ সালের পথশিশুদের ঈদ উৎসবের গল্প।
নতুন জামা পেয়ে পথশিশুদের চোখে-মুখে ফোটে ওঠা উজ্জ্বল হাসি তরুণদলের সুপ্ত মানবতাকে জাগ্রত করে। তারা সিদ্ধান্ত নেয় এই উৎসব থেকে তারা বিরত থাকবে না। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও তারা আয়োজন করতে যাচ্ছে পথশিশুদের ঈদ উৎসব ‘আমার ঈদ ২০১৩’ এবার তারা নতুন জামার পাশাপাশি যুক্ত করেছে হাতে মেহেদি লাগানো কার্যক্রম। আর এই কাজে সহযোগিতা করছে মমতাজ হারবাল।
তারা কয়েকজন দক্ষ কর্মী দেবে, যাতে করে সহজেই পথশিশুদের হাতে মেহেদি লাগানো যায়। ৬ আগস্ট, মঙ্গলবার তাদের সেই নির্ধারিত দিন, যেদিন তারা পথশিশুদের মধ্যে আনন্দ বিলাতে নেমে পড়বে ঢাকার রাস্তায়।
স্যালুট জানাই ফেসবুক গ্রুপ (Forum for social Development and awareness) ForumSDA কে, যাদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে দ্বিতীয় বারে মতো হতে চলেছে পথশিশুদের নিয়ে ঈদ উৎসব কার্যক্রম “আমার ঈদ ২০১৩”।
তোমরাই পারবে দেশটাকে এগিয়ে নিতে, সমাজটাকে পরিবর্তন করতে। তোমরা জেগে থাকলে পথশিশু শব্দটাই হয়তো একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে— এটাই প্রত্যাশা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি[email protected]