বড়রা সারা মাস রোজা রেখেছিলেন। সবাই জানে, রমজান মাস এলেই জীবনযাত্রা পাল্টে যায়।
সন্ধ্যা বেলায় ইফতার। তার মজাই আলাদা। বড়দের সাথে ছোটরাও তাতে শরিক হয় বিপুল উৎসাহে। শরবত, খেজুর, ছোলা, কলা, শসা, পিয়াজু, বেগুনি, জিলাপি, হালিম, মুড়ি এবং বিভিন্ন মৌসুমী ফল ইফতার আয়োজনে থাকে। তবে সাধ্য অনুযায়ী উপকরণ কম-বেশিও হয়। সম্বলহীন মানুষের বেশির ভাগেরই মুড়ি ও ছোলার বেশি কিছু জোটে না।
অন্যদিকে বিত্তশালিদের ইফতারে নানা রকম কাবাবসহ অনেক কিছু যোগ হয়। ইফতারের পর সন্ধ্যাটা রাতের দিকে গড়াতেই খাবার খেয়ে নেন রোজাদাররা। কারণ তারাবিহ্ নামাজ আদায় করতে হয়। তারাবিহ্ না পড়ে রোজা রাখলে মনটাতে ভারি অস্বস্তি লাগে। তাই, পারতপক্ষে তারাবিহ্ কামাই করতে চান না রোজাদারদের কেউ।
তারপর ভোর রাতে উঠে খেতে হয় সেহরি। এসময় অবশ্য ঘুমে কাদা ছোটদের তেমন একটা খোঁজ পাওয়া যায় না।
রমজান মাসের দিনগুলো দেখতে দেখতে ফুরিয়ে যায়। যেন পাখির ডানায়, কাশফুলের দোলায় উড়ে যায় মাসটা। এই এলো আর চলে গেল- অনেকটাই এরকম অনুভূতি জাগে মনে। অবশ্য তা খুব একটা স্থায়ী হতে পারে না।
শেষ রোজার সন্ধ্যায় ঈদের চাঁদ দেখার উৎসাহে সবাই মেতে ওঠে। যখন ক্ষীণ চাঁদটা লাজুক হেসে পশ্চিম দিগন্তে দেখা দেয়, তখন ছোট-বড় সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ে বাঁধভাঙা আনন্দের ঢেউ। সারা মাস রোজা রাখার কষ্টটুকু মুহূর্তেই উড়ে গিয়ে মনে লাগে খুশির দোলা। বুকের ভেতরটায় বইতে থাকে ঝিরি ঝিরি দখিনা বাতাস। নদীর জল কলকল ছলছল ধ্বনি তুলে ছড়ায় মুগ্ধতার আবহ। একশ একটি গোলাপের অনুপম সুরভিতে আমোদিত হয়ে ওঠে হৃদয়-মন। অপার্থিব আনন্দ অনুরণন তোলে উপলব্ধির পরতে পরতে।
রাত পোহালেই ঈদ। বড়দের আবেগ-আনন্দ অনেক সংযত। কিন্তু ছোটরা তো তাদের মতো নয়। তাদের রাতটা কাটতেই চায় না। নতুন পোশাক কেনা হয়ে গেছে। অন্য যেকোনো সময় কেনা নতুন পোশাকের চেয়ে ঈদের পোশাকের রূপ-গন্ধই আলাদা। সকালে গোসল করে উঠে নতুন কাপড় পরে সবাইকে না দেখানো পর্যন্ত শান্তি নেই। সবার সামর্থ এক নয়।
আর্থিক অবস্থা অনুযায়ীই হয় জামা-কাপড় কেনা। এমন মানুষের সংখ্যা অনেক যারা তাদের সোনামণিদের এ খুশির দিনটিতে নতুন জামা-কাপড় কিনে দিতে পারেন না। এজন্য তাদের কারো কারো ভীষণ মন খারাপ হয়ে যায়। শুধু পোশাক নয়, এ দিনটিতেও ভালো খাবার জোটে না তাদের। তারপরও ঈদের আনন্দ স্পর্শ করে তাদের। নতুন পোশাক-ভালো খাবার না জুটুক, খেলা বা ছুটোছুটি করার আনন্দ তো তাদের কাছ থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারে না।
ঈদের সকালে গোসল সেরে নতুন জামা-কাপড় পড়ে আতর বা অন্য সুগন্ধি মেখে জায়নামাজ হাতে বড়দের সাথে ছোটরাও ছোটে ঈদগাহ্ বা মসজিদে। এদিন সব পথই এসে মেশে ঈদগাহ আর মসজিদে। বাড়ি থেকে বেরনোর আগেই একাধিক রকমের সেমাইসহ নাস্তা খাওয়া হয়ে যায়। ঈদগাহ্ এদিন পরিণত হয় জনসমুদ্রে। ধনী-গরিবের কোনো ব্যবধান থাকে না। কোটিপতির পাশে নামাজের কাতারে দাঁড়িয়ে যায় দিনমজুর, রিকশা চালক, অফিসের পিয়ন। রাব্বুল আলামিন আল্লাহর কাছে সব মানুষই সমান। সবাই সিজদায় নত হয় সেই মহান স্রষ্টার উদ্দেশ্যে।
নামাজ শেষে কোলাকুলি। একজন অপর জনকে বাঁধে নিবিড় আলিঙ্গনে। হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা ঢেলে দিতে কারো ভিতরে এতটুকুও কার্পণ্য থাকে না। হ্যাঁ, শুধু ইসলামেই এটা সম্ভব। ভ্রাতৃত্বের এমন মধুর বন্ধন আর কোনো ধর্মে দেখা যায় না। তারপর আবার ঘরে ফেরা। কেউ সেখান থেকেই চলে যান ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজনের সাথে দেখা করতে। আবার অনেকেই চলে যান মৃত পিতা-মাতা বা ঘনিষ্ঠজনদের কবরে ফাতেহা পাঠের মাধ্যমে তাদের রূহের মাগফেরাত কামনার জন্য। এদিন মেয়েরা অনেকেই বাড়ি-ঘর সাজায়। তাছাড়া মেহমানদের আপ্যায়নের দায়িত্বও পালন করতে হয় তাদের।
প্রতি বছরই ঈদ আসে। রোজার ঈদ বা ঈদুল ফিতর হচ্ছে বছরের প্রথম ঈদ। এ ঈদের খুশি তুলনামূলকভাবে বেশি। আরেকটা ঈদ হচ্ছে কোরবানির ঈদ। কিন্তু ঈদুল ফিতরে যেভাবে পায়ে হেঁটে, রিকশায় চড়ে ঘুরে বেড়ানো যায়, বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি যাওয়া যায়- শিশু পার্ক, ফ্যান্টাসি কিংডম বা নন্দনে যাওয়া ঘটে, কোরবানির ঈদে তেমনটি হয়ে ওঠে না বড়দের ব্যস্ততার কারণে। তাই ঈদুল ফিতর ছোটদের কাছে বেশি আনন্দময়, অধিকতর উপভোগ্য।
বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি[email protected]