ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

ভবঘুরে যুবকের দীক্ষা | অর্ণব রহমান

গল্প / ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৪
ভবঘুরে যুবকের দীক্ষা | অর্ণব রহমান

এক গ্রামে বাস করত এক ভবঘুরে যুবক। সে ছিল অকর্মার ঢেঁকি অর্থাৎ—তাকে দিয়ে কোনো কাজ হতো না।

শুধু একটি কাজই খুব ভালো পারত, আর সেটা হচ্ছে সে খুব ভালো বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলতে পারত।

একদিন সে—গ্রামের সরাইখানায় বসে ছিল। তার মন ছিল খুব খারাপ, কারণ সেদিন সারাদিন কিছুই খাওয়া হয়নি তার এবং সাথে কোনও টাকা পয়সাও ছিল না যে সরাইখানা থেকে খাবার কিনে খাবে। এমন সময় সে সরাইখানায় এসে ঢুকল দামি পোশাক পরা এক সুদর্শন লোক। লোকটাকে দেখে বেশ অবস্থাপন্ন বলে মনে হচ্ছিল। লোকটা সরাইখানায় প্রবেশ করে সেখানে দুপুরের খাবারের অর্ডার দিয়ে সরাইখানার এক কোণায় বসে খাবারের জন্য অপেক্ষা করছিল। লোকটাকে দেখে যুবকের মাথায়  দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল। সামনে গিয়ে সে লোকটাকে বলল, আসুন আমরা একটা খেলা খেলি। আমাদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা হয়ে যাক, আমরা প্রত্যেকেই একটি করে উদ্ভট আষাঢ়ে গল্প বলব এবং আমাদের গল্প শুনে যদি আমাদের মধ্যে কেউ তাতে সন্দেহ প্রকাশ করে অথবা প্রতিবাদ  করে বসে তাহলে তৎক্ষণাৎ তাকে তাঁর সাথে যত টাকা পয়সা আছে সব অপরজনকে  দিয়ে দিতে হবে। বলাই বাহুল্য যে যুবকটি আষাঢ়ে গল্পে বেশ পটু ছিল, কিন্তু সে এটা জানতো না যে ওই লোকটিও বেশ ভালো গল্প বলিয়ে ছিল। তো লোকটা তার প্রস্তাবে রাজি হল।

প্রথমে যুবকের গল্প বলার পালা। যুবকটি গল্প শুরু করল: “আজ সকালে আমাদের গ্রামের পূর্ব দিকে যে মাঠটা রয়েছে ওখানে ঘাসের উপর বসে হাওয়া খাচ্ছিলাম আমি, এমন সময় হঠাৎ দেখলাম মাঠের উল্টোদিকের জঙ্গল থেকে একটা গরু বাতাসে ভাসতে ভাসতে উড়ে এলো এবং মাঠের মধ্যে ভাসতে ভাসতে চরে বেড়াতে লাগলো এবং ঘাস খেতে লাগলো এবং ঘাস খাওয়া শেষ হয়ে গেলে গরুটা আবার জঙ্গলে ঠিক সেইভাবেই ভাসতে ভাসতে ফিরে গেল। ”

এই গল্প শুনে সরাইখানার অনেকেই অবাক হয়ে ঘটনাটা অবিশ্বাস করে উড়িয়ে দিলেও যার সাথে বাজি ধরা হয়েছিল সেই লোক চুপ করে গল্পটি শুনে গেলেন এবং তিনি কিছুই বললেন না।

এবার সেই লোকটির গল্প বলার পালা এলো। লোকটি বলতে শুরু করল: “শোন, পাঁচ বছর আগে আমি আমার বাড়ির পিছনের উঠোনে একটি নাম না জানা গাছের চারা রোপণ করেছিলাম। সেই গাছটি ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠে এবং একদিন তাতে গোল আর বেশ বড় একটা ফল হয়, এবং তারও বেশ কয়েকদিন পরে অর্থাৎ আজ থেকে পাঁচ মাস আগে একদিন সকালবেলা আমি ঘুম থেকে উঠে উঠোনে গিয়ে দেখতে পেলাম যে সেই ফল থেকে এক যুবক বেরিয়ে এলো। উঠোনে আমাকে দেখতে পেয়ে সে আমার কাছে এসে আশ্রয় চায় এবং বিনিময়ে আমার যাবতীয় ফুট ফরমাশ খাটার প্রতিশ্রুতি দেয়। সেই থেকে সেই যুবক আমার অনুগত চাকর হিসেবে ছিল কিন্তু দশ দিন আগে যুবকটি আমার বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। এবং তার খোঁজ করতে করতেই আমি আজ এ গ্রামে এসেছি এবং আমি আজ তোমাকে দেখেই চিনতে পেরেছি যে তুমিই হচ্ছো সেই যুবক। এখন আর কোনও কথা না বাড়িয়ে চলো আমার সাথে। ”

এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে লোকটি সেই যুবকটিকে তাঁর সাথে নিয়ে যাবার জন্য উদ্যত হলেন। এহেন পরিস্থিতিতে পড়ে যুবকের মুখ শুকিয়ে গেল। সে ধারণাও করতে পারেনি তাকে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। যদিও সে বুঝতে পারছে ভদ্রলোক যা বলছে তাঁর পুরোটাই বানানো আষাঢ়ে গল্প কিন্তু সে তাঁর প্রতিবাদ করলে তাকে বাজিতে হেরে সব টাকাপয়সা লোকটিকে দিয়ে দিতে হবে, আর যদি সে লোকটার কথার প্রতিবাদ না করে তাহলে হয়তো লোকটার চাকর হিসেবে তাকে লোকটার সঙ্গে যেতে হবে। এই পরিস্থিতিতে যুবকটি বাধ্য হয়ে লোকটার কাছে করজোড়ে ক্ষমা চাইল এবং লোকটিকে সব কথা খুলে বলল এবং লোকটাসহ সরাইখানার সবার কাছে প্রতিশ্রুতি করল যে, ভবিষ্যতে সে আর কখনও কারো সাথে এ ধরনের বাজি ধরবে না। আজ থেকে সে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করবে।

লোকটি তাকে ক্ষমা করে দিল এবং তাকে নিয়ে দুপুরের খাওয়া শেষ করে সরাইখানার সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।