ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

পর্ব-১

হারান্টু | রকিবুল ইসলাম মুকুল

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৪
হারান্টু | রকিবুল ইসলাম মুকুল

ক’দিন ধরে একটা সমস্যা বেশ ভোগাচ্ছে নান্টুকে। প্রতিদিনই স্কুলে এসে হারিয়ে ফেলে কলম, খাতা, পেন্সিল।

সেদিন তো রঙিন ছবিওয়ালা গল্পের বইটাই হাপুস করে দিয়েছে কে যেন। বাড়িতে তুমুল বকা খেয়ে পরদিন স্কুলে এসে হারালো ড্রইং খাতাটা। ক্লাস টিচার শান্তা মিস সবার ব্যাগ খুলে ঝাড়ামোছা করলেন। কিন্তু না কোথাও নেই। কেউ নেয়নি।

নান্টুও ক্লাসের বাইরে কোথাও যায় নি। আর্ট ক্লাসে খাতায় নাম্বার দিলেন শান্তা মিস। নিয়ে এসে বেঞ্চে রাখতেই উধাও খাতাটা। তারপর নান্টুর সে কি কান্নাকাটি। বাড়িতে কি বলবে। এদিকে বন্ধুরা সবাই নামই বদলে দিলো নান্টুর। হারান্টু বলে ক্ষ্যাপায় আর নান্টু ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে চোখ ভাসায়।

নান্টুদের স্কুলটা বেশ পুরনো। শ্যাওলা ধরা দোতলা ভবনটার পাশে বিশাল এক পাকুড় গাছ। ভবনের ছাদের রেলিংয়ে সারি সারি পাকুড় চারা বেড়ে উঠছে। নড়বড়ে ইটের ফাঁকে ঝুলে থাকা থোকা থোকা শেকড়। স্কুলটার পেছন দিকটায় বুনো ঝোপ। অন্ধকার আর স্যাঁতসেঁতে। সামনে খানিকটা খোলা মাঠ। সারি সারি আম, জাম আর নিম গাছ। দোতলার ক্লাসরুমগুলো খানিকটা অন্ধকার। মাথার ওপরে পলেস্তরা খসে বিচ্ছিরি অবস্থা। নোনা ধরা দেয়ালে প্রায়ই পেন্সিলে আঁকি বুকি করে নান্টু আর তার বন্ধুরা।

স্কুলের দোতলার পেছনের কাঠের জানালা বেশিরভাগ ঘুণে খেয়েছে। বেশিরভাগ জানালার পাল্লা খসে পড়েছে নিচে। যেগুলো টিকে আছে কোনমতে, তারও বেহাল দশা। খোলা জানালার সাথেই পাকুড় গাছটার বিশাল একটা ডাল। মাঝে-মধ্যেই নান্টু জানালার পাশে বসে। পাকুড় গাছে দুটো কাঠবিড়ালি আসে। ক্লাসের ফাঁকে আনমনে তাকিয়ে তাদের খেলা দেখে। মাঝে মধ্যে হরেক রঙের পাখি আসে ফল খেতে। পেছনটায় শন শন করে বাতাস বয়ে যায় সারাক্ষণ। নান্টু অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ঝোপ-ঝাড়ের দিকে। পেছনটায় ঘন ঝোপ আর বড় গাছ বলে যায় না তেমন কেউ। তাই পাখি আর কাঠবিড়াড়িতে ঠাঁসা সেখানটায়।

নান্টুর কলম পেন্সিল হারানো বেড়েই যাচ্ছে। প্রতিদিনই কিছু না কিছু হারিয়ে যাচ্ছে ব্যাগ থেকে। প্রতিদিনই বাড়ি ফিরে মায়ের বকুনি, ভাই বোনের টিপ্পনি। স্কুলের বন্ধুরা তো কোরাস করে ডাকে ‘কে এল রে- হারান্টু, কে গেলো রে হারান্টু’।

চুপচাপ জানালার পাশে গিয়ে বসে থাকে। জিদ ওঠে নিজের ওপর। কি করে হারিয়ে ফেলে ভাবতে থাকে। কোনো কূল কিনারা মেলে না। নান্টুর এই হারানোর খবর শেষ পর্যন্ত চলে যায় হেডমাস্টারের কাছে। নান্টুর ডাক পড়ে তার অফিসে। নান্টুদের হেডমাস্টার দুলু মিয়া। কাঁচা পাকা দাড়ি। পুরু চশমা পরেন। বদমেজাজী। নান্টুরা সবাই ভয় পায় তাকে। দুরু দুরু বুকে সামনে গিয়ে দাঁড়ালো নান্টু।

খেঁকিয়ে উঠলেন হেড মাস্টার- এসব কি নান্টু!! তুই নাকি প্রতিদিন খাতা কলম হারাচ্ছিস!!
জ্বি, স্যার- মিনমিন করে উত্তর দিল নান্টু।

আরো জোরে ধমক দিলেন হেডমাস্টার- জ্বি স্যার মানে কি রে। তুই ইচ্ছে করে খাতা কলম ফেলে দিস পড়বি না বলে তাই না?

- জ্বি না স্যার। আমি ইচ্ছা করে ফেলি না।
- তাহলে কি ভুতে নেয়, হ্যাঁ।
- জানি না স্যার। নিতেও পারে। সবাই বলে পাকুড় গাছে নাকি ভূত থাকে।
- চলে যা আমার সামনে থেকে। আর যেন না শুনি তোর কিছু হারানোর কথা।
এক দৌড়ে হেডমাস্টারের রুম থেকে বেরিয়ে আসে নান্টু। ক্লাসে না ঢুকে সোজা স্কুলেরে পেছন দিকটায়। ইটের স্তূপে বড় বড় ঘাস হয়েছে। সেগুলো মাড়িয়ে এক ছুটে পাকুড় গাছটার তলায়। নান্টুকে দেখে ভয়ে উল্টো দিকে ছুটলো দুটো গুঁইসাপ। কাঠবিড়ালি দুটো পাকুড় গাছের ডালটা থেকে নিচু হয়ে অবাক দৃষ্টিতে দেখছে নান্টুকে। ওদিকটায় তো ওরা দেখে না কাউকে যেতে।

পাকুড় গাছটার তলায় দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছিলো নান্টু। ভয় লাগছে। নিজের প্রতি জিদও হচ্ছে। দাঁড়িয়ে ভাবছে ‘আচ্ছা- হেডস্যার তো বললেন ভুত নিয়েছে কি না। সত্যিই তো, যদি ভুত এসে নিয়ে যায়। ’

আশপাশে তাকিয়ে দেখছিল কেউ তাকে পঁচাতে দোতলা থেকে সেগুলো ফেলে দেয় কি না। না। কোথাও নেই। তার মানে বন্ধুদের কেউ ঝোপের দিকে ফেলে না। খুঁজেই যাচ্ছে, খুঁজেই যাচ্ছে। কিছুতেই মেলে না।

হঠাৎ মাথার ওপর শন শন শব্দ শুনতে পেল নান্টু। কেউ যেন ডাল ধরে ঝাঁকুনি দিচ্ছে। ভয় পেয়ে উপরে তাকালো। সে কি। শাড়ি পরা এক বয়স্ক নারী ডালে বসে খিলখিলিয়ে হাসছে। পা চলছে না নান্টুর। বোকার মতো তাকিয়ে থাকলো উপরের দিকে।

- এই হতচ্ছাড়া। অমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছিস কেন রে। নাক দিয়ে কথা বলে উঠলো বুড়িটা।  
গলা শুকিয়ে কাঠ নান্টুর। কি বলবে বুঝতে পারছে না।
- বল। তুই কিছু খুঁজে বেড়াচ্ছিস? হাহাহাহাহহ।
- হ্যাঁ। আমি প্রতিদিনই কিছু না কিছু হারাই। তাই সবাই আমাকে হারান্টু ডাকে। আমার ভালো লাগে না এসব শুনতে।
- আহারে হতচ্ছড়া। তোর মনে কত দুঃখ। হাহাহাহাহ।
- তুমি কেমন মানুষ বলো দেখি। আমি দুঃখের কথা বলছি, আর তুমি হাসছো?

- বোকা, আমি তো মানুষ না রে। আমি তো ভুত। ভুতরা বেশি বেশি হাসে। কাঁদে খুব কম।
- তোমাকে তো ভুতের মতো লাগছে না। তোমার শিং কোথায়? তোমার বড় বড় দাঁত নেই।
- হাহাহাহাহা, বোকা ছেলে। তুমি অনেক ভালো তো। তাই তোমাকে ভয় দেখাচ্ছি না।
- আচ্ছা মানলাম তুমি ভুত, তাহলে বলো তো কে চুরি করে আমার জিনিসগুলো।

বাকি অংশ আগামীকাল



বাংলাদেশ সময়: ২০১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।