ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

ইচ্ছেপূরণ | মীম নোশিন নাওয়াল খান

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৫
ইচ্ছেপূরণ | মীম নোশিন নাওয়াল খান

নাসিফের মন একদম ভালো নেই। সে অনেকদিন ধরে বাবাকে বলছে, তারা কোরবানি দেবে।

বাবা কোনোবারই কথা শোনে না।

প্রতিবছর নাসিফের মামারা কোরবানি দেয়, বন্ধুরা কোরবানি দেয়, প্রতিবেশীরাও অনেকে কোরবানি দেয়। কোরবানির পর সবাই মাংস রান্না করে মজা করে খায়, ওদের বাড়িতে মাংস দিতে আসে। নাসিফেরও খুব ইচ্ছে, তারাও অমন কোরবানি দেবে।

তারপর সেও মাংস নিয়ে তার মামা, বন্ধুদের আর প্রতিবেশীদের বাড়িতে যাবে। মা মাংস রান্না করবে, সে মজা করে খাবে, বাড়িতে অতিথি এলে তাদের দেবে।

কিন্তু নাহ! বাবাটার কারণে কোনোবারই তার ইচ্ছেপূরণ হয় না। বাবা কোনোবারই কোরবানি দেয় না। কেন যে দেয় না, নাসিফ তা কিছুতেই বুঝতে পারে না।

এবার ক্লাস ফাইভে উঠেছে নাসিফ। তার বন্ধুরা সবাই গতবছর পরীক্ষার পর কত জায়গায় ঘুরতে গেছে। বাবা কোথাও ঘুরতেও নিয়ে যায় না কখনো। এমনকী ঈদেও বাবা বেশি কিছু দেয় না। নাসিফের বন্ধুরা সবাই পাঁচ-ছয়টা করে ঈদের জামা কেনে।

অথচ বাবা ওকে মাত্র একটা ঈদের জামা দেয়। বাবাটা যে কেন এমন, নাসিফ তা কিছুতেই বুঝতে পারে না।

বাবার কাছে কিছু চাইলেই বাবা শুধু বলে, পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করলে দেবে। কিন্তু নাসিফ পড়াশোনায় একদম ভালো না। লেখাপড়ায় তার মনই বসে না। তাই তার আর ভালো রেজাল্টও করা হয় না, বাবার কাছ থেকে কিছু পাওয়াও হয় না। ঠিক করে পড়াশোনা না করায় বাবা তাকে অনেক বকে। রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় কখনো কান মলেও দেয়। কিন্তু তাতেও নাসিফ একটুও পাল্টায় না।
 
আস্তে আস্তে গিয়ে মায়ের পাশে দাঁড়া নাসিফ। মা তাকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে? কিছু বলবে?

নাসিফ মাথা নাড়ল। বলল, বাবা কেন কোরবানি দেয় না মা?

মা নাসিফের দিকে তাকালেন। তার কাঁধে হাত রেখে বললেন, তুমি বড় হচ্ছ নাসিফ।

তোমাকে এখন একটু একটু করে বুঝতে হবে। কোরবানি তাদের দিতে হয় যাদের সেই সামর্থ্য আছে। আমাদের পক্ষে কোরবানি দেওয়া সম্ভব না।

নাসিফ বলল, সম্ভব না কেন মা?

মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। নাসিফকে কাছে টেনে নিয়ে বললেন, আমাদের কোরবানির পশু কেনার মতো অত টাকা নেই।

নাসিফ কিছুক্ষণ চুপ থাকল। তারপর বলল, আমি যদি অনেক টাকা এনে দিই?

মা হাসলেন। ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, তুমি অনেক টাকা কোথায় পাবে?

নাসিফ বলল, আমি চাকরি করব। অনেক বড় চাকরি।

মা বললেন, তুমি নিশ্চয়ই অনেক বড় চাকরি করবে। কিন্তু তার জন্য তো আগে অনেক বড় হতে হবে। আর বড় হতে হলে অনেক পড়াশোনা করতে হবে। তুমি ঠিক করে মন দিয়ে পড়াশুনা করো, কেমন? তাহলেই তুমি অনেক বড় হবে, অনেক ভালো চাকরি পাবে। তখন তুমিও কোরবানি দিতে পারবে।

নাসিফ একটু চুপ থেকে বলল, পড়াশোনা করলে অনেক ভালো চাকরি পাওয়া যায় মা?
মা নাসিফের মাথায় হাত রেখে বললেন, হ্যাঁ।

নাসিফ আবার জিজ্ঞেস করল, তাহলে কোরবানি দেওয়া যায়?

মা মাথা নেড়ে বললেন, হ্যাঁ।

নাসিফ বলল, তাহলে আমি অনেক পড়াশোনা করব মা, অনেক। আমি অনেক ভালো রেজাল্ট করব। অনেক বড় হব। পড়াশোনা করে অনেক বড় একটা চাকরি পাব। তারপর কোরবানি দেব, তুমি দেখো।

মায়ের চোখ ভিজে উঠল। নাসিফের কপালে একটা চুমু খেয়ে বললেন, সত্যি?

নাসিফ মাকে জড়িয়ে ধরে বলল, সত্যি মা। প্রমিজ।

এরপর সে মনে মনে নিজেকে কথা দিল, অনেক অনেক ভালো করে পড়াশোনা করবে সে। অনেক ভালো রেজাল্ট করবে। পরের পরীক্ষায় সে ফার্স্ট হবে। অনেক ভালো করে লেখাপড়া করে অনেক ভালো চাকরি পেয়ে সে সত্যিই একদিন কোরবানি দেবে। এখন থেকে আর একদম ফাঁকিবাজি করবে না সে। আস্তে আস্তে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়াল নাসিফ। মা জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় যাচ্ছ?

নাসিফ বলল, পড়তে বসব। অনেকগুলো হোমওয়ার্ক জমে গেছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৫
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।