ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

ফার্স্ট | ফখরুল ইসলাম

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৫
ফার্স্ট | ফখরুল ইসলাম

তুষ্টির মনটা আজ খুব খারাপ। হবে না কেন, স্কুলে নাজনীন ম্যাম ছবি এঁকে নিয়ে যেতে বলেছেন।

যার ছবি সবচেয়ে সুন্দর হবে তাকে ম্যাম প্রাইজ দেবেন। প্রাইজের নাম বলেননি, তবে প্রাইজটা যে খুব মজার হবে, সেটা তুষ্টি ভালো করে জানে।

আগেও একবার ম্যাম প্রতিযোগিতা দিয়েছিলেন, সেবার অভ্র ফার্স্ট হয়ে পুরো এক বাক্স রংপেন্সিল পেয়েছিল।

তুষ্টির খুব ইচ্ছে, এবার সে ফার্স্ট হবে। তাইতো সে মাকে বলেছিল সুন্দর করে একটা ছবি এঁকে দিতে, যাতে সে ফার্স্ট হতে পারে। কিন্তু মা ওকে ছবি এঁকে দেয়নি। বলেছে, তুমি নিজে ভালো করে মন দিয়ে আঁকো, দেখবে তুমিই ফার্স্ট হবে।

এটা একটা কথা হলো, অভ্র, মীমেরা কত সুন্দর ছবি আঁকে। তুষ্টি কি করে পারবে ওদের সঙ্গে!

তখন থেকেই তুষ্টির মন খারাপ। ওর কিছু ভাল লাগেনা। অন্যদিন এ সময় সে টিভিতে কার্টুন দেখতো, আজ না দেখে বিছানায় গিয়ে শুয়ে থাকে। তার মনে হয় মা তাকে মোটেও ভালোবাসে না, বাসলে একটা ছবি অন্তত আঁকতে এভাবে না বলতো না।

খুব খারাপ লাগে তুষ্টির, তার মনে হয় কেউ তাকে ভালোবাসে না। এসব ভেবে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে।

ভোরে ঘুম ভাঙে তুষ্টির। বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হওয়ার পরই তুষ্টির মনে হলো আজ যে স্কুলে ছবি এঁকে নিয়ে যাওয়ার কথা, তার তো কোনো ছবি আঁকা হয়নি।

তুষ্টি  ছবি আঁকতে বসে। ফার্স্ট তো হওয়া হলো না, ম্যামের ক্লাসে লজ্জা থেকে বাঁচার জন্য কিছু একটা এঁকে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু কি আঁকবে, তার মনে যে কিছুই আসছে না। তুষ্টি ভাবতে থাকে, হঠাত্‍ তার মনে হয় স্কুলের মর্নিং অ্যাসেম্বলিতে জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের দৃশ্যটা।

তুষ্টি অনেক সময় নিয়ে ধীরে ধীরে আঁকতে থাকে, প্রথমে লাল সবুজ পতাকা, তারপর কপালে হাত ঠেকিয়ে সম্মান জানানোর ভঙ্গিতে স্টুডেন্টরা। ছবি আঁকা শেষ করে সে সবকিছু গুছিয়ে রাখে। মা ব্রেকফাস্টে ডাকেন। তুষ্টি নীরবে ব্রেকফাস্ট করে স্কুলের জন্য রেডি হয়।

নাজনীন ম্যামের ক্লাস তিন নম্বর পিরিয়ডে। ম্যাম মোটা একটা প্যাকেট নিয়ে ক্লাসে এলেন। তুষ্টি জানে ওটাতেই আছে আজকের প্রাইজ। ম্যাম চেয়ারে বসেই সবাইকে ছবি জমা দিতে বললেন। সবাই যার যার আঁকা ছবি ম্যামের টেবিলে স্তুপ করে রাখলো। ম্যাম ছবি দেখা শুরু করলেন।

একটা ছবি হাতে নিচ্ছেন, খানিক দেখে তারপর মার্কশিটে মার্ক দিচ্ছেন। পুরো ক্লাস নীরব, সবাই ম্যামের দিকে আর ওই প্যাকেটের দিকে তাকিয়ে আছে। তুষ্টিও মনে মনে ভাবে আজ ওটা কার হাতে উঠবে।

এক সময় ম্যামের মার্কিং শেষ হলো। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। ম্যাম এটা সেটা বলে কিছুটা ভূমিকা নিয়ে বললেন, তুষ্টি! তুমি সামনে এসো। তুষ্টি কিছু না বুঝে ম্যামের আদেশ পালন করলো। ম্যাম ওকে পাশে নিয়ে বললেন, আজ সবাই দারুণ এঁকেছো, তবে সবচেয়ে ভালো এঁকেছে তুষ্টি। তাই তুষ্টিকে প্রাইজ হিসেবে তিনটি ছড়ার বই দিচ্ছি। সবাই ওর জন্য হাততালি দাও।

সবাই হাততালি দিচ্ছে। তুষ্টি প্যাকেটটা হাতে নিয়ে গর্বভরে দাঁড়িয়ে থাকে। এসময় ছুটির বেল বেজে উঠলো।

তুষ্টি আজ দারুণ খুশি হয়ে স্কুল থেকে বের হয়। মা ওর জন্য অপেক্ষা করছেন, সে সোজা গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, মা আমি  ফার্স্ট হয়েছি। মা ওর কপালে চুমু খান। তারপর বলেন, দেখেছো তুমিই ফার্স্ট হলে। ওটা যদি আমি এঁকে দিতাম তাহলে কিন্তু সেটা তোমার কৃতিত্ব হতো না।

তুষ্টি মাকে জড়িয়ে ধরে। সে আজ সত্যিকারের ফার্স্ট। মা রিকশা ডাকেন। তুষ্টি রিকশায় বসেই প্যাকেটটা খোলে। ভেতরে তিনটি ঝকঝকে রঙিন ছড়ার বই।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৫
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।